অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবিস্নউটিসি) মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি দিয়েই গাড়ি ও মানুষ পারাপার চলছে। সংস্থাটির ৫৩ ফেরির মধ্যে ৪৭টিরই সনদ নেই। বেশির ভাগ ফেরিই ৪০ বছরের বেশি পুরাতন। এছাড়াও ১৮টি রো রো ফেরির (বড় ফেরি) মধ্যে ১৪টিরই ফিটনেস সনদ নেই। আইন অনুযায়ী ৪০ বছরের বেশি বয়সী নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। তার পরেও চলছে ফেরি সার্ভিস। তাছাড়া ফেরিগুলো নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিআইডবিস্নউটিসি সংশিস্নষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশিস্নষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি শাহ আমানতের মেরামতের তথ্য এবং ১৬ জানুয়ারি রজনীগন্ধা ডুবে যাওয়ার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মাস চারেক আগে ফেরিটি সম্পূর্ণ মেরামত করা হয়েছিল। এতে ফেরির আয়ুষ্কাল বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ডকইয়ার্ড সূত্র জানায় ভিন্ন কথা। তখন পুরো ফেরি নয়, শুধু এর প্রপেলারটি মেরামত করা হয়েছিল। ফলে ভারসাম্যহীনভাবে যানবাহন তোলা বা ‘আনইভেন’ লোডিংয়ের কারণে ফেরি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুই বছর আগে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দেয় ফেরি কাকলি। ঘটনায় দায়ী ফেরি কাকলি তৈরি করা হয় ১৯৭৪ সালে। এ ফেরিটির বয়স ৪৭ বছর ছিল। নেই ফিটনেস সনদ। এ ছাড়া ডাম্প ফেরি থোবাল ১৯৩৮ সালে, ফেরি রায়পুরা, রানীক্ষেত ও রানীগঞ্জ ১৯২৫ সালে তৈরি করা হয়। এগুলোও ফিটনেস ছাড়াই অবাধে চলাচল করছে। বহন করছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সঙ্গে সাধারণ যাত্রী।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরম্নটে কাত হয়ে ডুবে যাওয়া আমানত শাহ বড় ফেরিটি ১৯৮০ সালে ডেনমার্ক থেকে আনা হয়। সে হিসেবে ফেরিটির বয়স হবে ৪০ বছর। অথচ ফেরিটির আয়ুষ্কাল ছিল ২৫ বছর। ২০০৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে ফেরি মেরামত করে পুনর্বাসন করে আরো ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাও ২০২০ সালে শেষ হয়ে গেছে। বিআইডবিস্নউটিসির শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রম্নটে চলাচলকারী বেশির ভাগ ফেরির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই।
গত সাত বছর ধরে ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলছিল এ ফেরিগুলো। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রম্নটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিআইডবিস্নউটিসির ১৮টি রো রো ফেরি সবগুলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রম্নটে চলাচল করছিল। এসব ফেরির রয়েছে নানা কারিগরি ত্রম্নটি। অনেক ফেরিতে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল স্টিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় মেকানিক্যাল স্টিয়ারিং অকার্যকর। বেশির ভাগ ফেরি ১৯৮০ সালে তৈরি করা হয়েছে। ফেরি শাহ মখদুম ১৯৮৫ সালে তৈরি করা হয়। ওই হিসেবে ফেরির বয়স ৩৬ বছর। ওই ফেরির ৫০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন ও ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার বেগে চলার কথা।
রো রো ফেরি শাহজালাল তৈরি করা হয়েছে ১৯৮০ সালে। এ ফেরিতে ৫০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন ও ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার গতিতে চলার কথা। রো রো ফেরি ও বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরির একই সমান শক্তিসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন রয়েছে। এটির গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার। এ ছাড়া ডাম্প ফেরি থোবাল ১৯৩৮ সালে, ফেরি রায়পুরা, রানীক্ষেত ও রানীগঞ্জ ১৯২৫ সালে তৈরি করা হয়। এগুলোরও ফিটনেস সনদ নেই।