১ জানুয়ারি, নতুন শিক্ষাবর্ষের যাত্রা। নতুন শ্রেণি, নতুন ক্লাসরুম আর নতুন বই। এই তিনে মিলে শিক্ষার্থীদের উৎসব আজ। খালি হাতে স্কুলে এসে বই নিয়ে বাড়ি ফিরবে। আর এতেই আনন্দ তাদের।
আজ দেশের প্রতিটি স্কুলে উৎসবের আমেজে বই বিতরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর স্কুলগুলোতে এমন প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত রাজনীতিবিদরা। ব্যস্ত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্ভার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। মিরপুর ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রাথমিকের বই উৎসব আয়োজন করবেন তিনি। ইতিমধ্যে এই আয়োজনে নির্বাচন কমিশন সম্মতিও দিয়েছে।
অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায় শিক্ষার্থীদের বই বিতরণে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো অনুষ্ঠান হবে না। তবে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে, এ কারণে শিক্ষামন্ত্রীকে অতিথি করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মতি দেয়নি নির্বাচন কমিশন।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) অতিথি হিসেবে নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বই উৎসবে অংশ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকালও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এবার মাধ্যমিকের বই বিতরণে কেন্দ্রীয় কোনো আয়োজন নেই।
গতকাল সকালে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘বই উৎসব’-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি, দাখিল ও কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
কত বই ছাপা হচ্ছে :আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। আর বই ছাপা হচ্ছে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।
আজ কি সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) উৎপাদন নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিকের শত ভাগ বই বিতরণ করা সম্ভব হবে। এই বইগুলো স্কুলপর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ফলে বই নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই। ফলে বছরের শুরুর দিন প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে আজ বই তুলে দেওয়া হবে।
তবে মাধ্যমিক স্তরের বই নিয়ে কিছুটা বিলম্ব হবে, এমন কথা জানিয়েছেন প্রেস মালিকরা। এই স্তরের সব বই পেতে জানুয়ারি মাসের পুরোটা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বই ছাপানোর জন্য তৈরি করা ‘ডামি কপি’ অনেক পরে হাতে পেয়েছি। যেহেতু নতুন কারিকুলাম, তাই বিতর্কিত কিছু না থেকে যায়, এ কারণে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা ভালোভাবে দেখেছেন। এ কারণে সময় লেগেছে।’
এনসিটিবি জানিয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বইয়ের তেমন সমস্যা হবে না। তবে আগামী বছর থেকে চালু হতে যাওয়া দুইটি শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই বছরের শুরুতে দেওয়া হয়তো যাবে না। এ দুইটি শ্রেণি হচ্ছে অষ্টম ও নবম। এ দুই শ্রেণিতে ১০টি বিষয়ে ১১টি বই ছাপা হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণিতে ছাপানো হচ্ছে ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার বই, আর নবম শ্রেণিতে ছাপা হচ্ছে ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি।
চার শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই : চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পদ্ধতি ২য়, ৩য়, ৮ম ও ৯ম এবং ২০২৫ সালে এটি ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণিতে চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পদ্ধতি চালু হবে উচ্চমাধ্যমিকে।