ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিসেম্বরের শুরুতে পাল্টে যেতে শুরু করে যুদ্ধের চিত্র

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:২০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৩৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গেরিলা যোদ্ধাদের কৌশলী আক্রমণ আর মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আঘাতে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকবাহিনী। পরাজয় আসন্ন জেনে দেশব্যাপী নির্বিচারে গণহত্যা চালায় পাকি দোসর, আলবদর- আলশামস। এর মধ্যেও প্রাণপন লড়ে যান মুক্তিযোদ্ধারা। একে একে মুক্ত হতে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল।

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছিল যুদ্ধের ধরণ। অসীম শক্তিমত্তা আর মুক্তিযোদ্ধাদের গতি ভাবিয়ে তুলেছিল পাক সেনাদের।

পরাজয় আসন্ন- ধীরে ধীরে ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানীরা। পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান নিয়াজির নেতৃত্বে ২ ডিসেম্বর হানাদার ও আলবদর-রাজাকাররা নির্বিচারে হত্যা করে নিরস্ত্র বাঙালিদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “ঢাকায় তখন নিয়াজির নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে নাকি আত্মসমর্পণ করবে এই ধরনের অবস্থায় ছিল।”

তবে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আমক্রণে পাকিস্তান বাহিনীর সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে থাকলে পিছু হটে হানাদাররা। আসন্ন বিজয়ের প্রমাদ গুণতে থাকে মুজিবনগর সরকার।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “যোদ্ধারা যেভাবে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করছিল ইতিমধ্যেই যশোর, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছিল যে এলাকা মুক্ত হয়েছে। তখন ডিসেম্বরের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত বাঙালি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

এদিন সিলেটের সমশেরনগর বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয় মুক্তিবাহিনী। ঘোড়াশালে পাকিস্তানের ঘাঁটিতে চর্তুমুখি আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানে সৈন্যদের পরাস্ত করে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে তারা। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, আনোয়ারাসহ আশপাশের নিয়ন্ত্রণ নেয় মুক্তিবাহিনী। নোয়াখালি থেকে চট্টগ্রামে সম্মুখযুদ্ধে পরাস্থ হয় হানাদারবাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হারুন হাবীব বলেন, “তৎকালীন যতগুলো জেলা সদর, মহকুমা সদর, থানা সদরে যে বড় বড় ঘাঁটি গড়েছিল সবগুলো ছেড়ে দিয়ে তারা ঢাকায় আসতে শুরু করলো।”

সীমান্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী। ক্ষীপ্র গতিতে পঞ্চগড় হানাদারমুক্ত করে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে এগিয়ে আসে বীরযোদ্ধারা। ২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা আর সুন্দরবন থেকে পিছু হটে হানাদাররা। খুলনায় ঘাঁটি গাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা। এর জেরে ভারতের আগরতলা বিমানঘাঁটিতে বোমা হামলা চালায় পাকিবাহিনী।

হারুন হাবীব বলেন, “ভারতীয় মিত্রবাহিনী বা সেনাবাহিনীর তখন সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল মানেক শ। তিনি ঢাকা আক্রমণের আগে কতকগুলো লিফলেট ছড়িয়ে দেন। লিফলেটে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং সেটা রেডিওতে হিন্দি-উর্দু-ইংরেজিতে পড়া হয়। লিফলেটগুলো বিমান থেকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

দিশেহারা পাকিস্তানীরা অস্ত্র ফেলে পালাতে থাকে রণাঙ্গন ছেড়ে। চারদিক থেকে কোণঠাসা করে বীরদর্পে এগিয়ে যায় মুক্তি সেনার দল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিসেম্বরের শুরুতে পাল্টে যেতে শুরু করে যুদ্ধের চিত্র

আপডেট টাইম : ০৫:২০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গেরিলা যোদ্ধাদের কৌশলী আক্রমণ আর মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আঘাতে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকবাহিনী। পরাজয় আসন্ন জেনে দেশব্যাপী নির্বিচারে গণহত্যা চালায় পাকি দোসর, আলবদর- আলশামস। এর মধ্যেও প্রাণপন লড়ে যান মুক্তিযোদ্ধারা। একে একে মুক্ত হতে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল।

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছিল যুদ্ধের ধরণ। অসীম শক্তিমত্তা আর মুক্তিযোদ্ধাদের গতি ভাবিয়ে তুলেছিল পাক সেনাদের।

পরাজয় আসন্ন- ধীরে ধীরে ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানীরা। পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান নিয়াজির নেতৃত্বে ২ ডিসেম্বর হানাদার ও আলবদর-রাজাকাররা নির্বিচারে হত্যা করে নিরস্ত্র বাঙালিদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “ঢাকায় তখন নিয়াজির নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে নাকি আত্মসমর্পণ করবে এই ধরনের অবস্থায় ছিল।”

তবে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আমক্রণে পাকিস্তান বাহিনীর সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে থাকলে পিছু হটে হানাদাররা। আসন্ন বিজয়ের প্রমাদ গুণতে থাকে মুজিবনগর সরকার।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “যোদ্ধারা যেভাবে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করছিল ইতিমধ্যেই যশোর, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছিল যে এলাকা মুক্ত হয়েছে। তখন ডিসেম্বরের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত বাঙালি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

এদিন সিলেটের সমশেরনগর বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয় মুক্তিবাহিনী। ঘোড়াশালে পাকিস্তানের ঘাঁটিতে চর্তুমুখি আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানে সৈন্যদের পরাস্ত করে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে তারা। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, আনোয়ারাসহ আশপাশের নিয়ন্ত্রণ নেয় মুক্তিবাহিনী। নোয়াখালি থেকে চট্টগ্রামে সম্মুখযুদ্ধে পরাস্থ হয় হানাদারবাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হারুন হাবীব বলেন, “তৎকালীন যতগুলো জেলা সদর, মহকুমা সদর, থানা সদরে যে বড় বড় ঘাঁটি গড়েছিল সবগুলো ছেড়ে দিয়ে তারা ঢাকায় আসতে শুরু করলো।”

সীমান্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী। ক্ষীপ্র গতিতে পঞ্চগড় হানাদারমুক্ত করে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে এগিয়ে আসে বীরযোদ্ধারা। ২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা আর সুন্দরবন থেকে পিছু হটে হানাদাররা। খুলনায় ঘাঁটি গাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা। এর জেরে ভারতের আগরতলা বিমানঘাঁটিতে বোমা হামলা চালায় পাকিবাহিনী।

হারুন হাবীব বলেন, “ভারতীয় মিত্রবাহিনী বা সেনাবাহিনীর তখন সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল মানেক শ। তিনি ঢাকা আক্রমণের আগে কতকগুলো লিফলেট ছড়িয়ে দেন। লিফলেটে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং সেটা রেডিওতে হিন্দি-উর্দু-ইংরেজিতে পড়া হয়। লিফলেটগুলো বিমান থেকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

দিশেহারা পাকিস্তানীরা অস্ত্র ফেলে পালাতে থাকে রণাঙ্গন ছেড়ে। চারদিক থেকে কোণঠাসা করে বীরদর্পে এগিয়ে যায় মুক্তি সেনার দল।