বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দৃশ্যত পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে। আজ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মস্কোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতির ভুল ব্যাখ্যার অভিযোগ এনেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন যে, ২২ নভেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বাংলাদেশের এক বিরোধীদলীয় নেতা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে ক্রেমলিন যে বিবৃতি দিয়েছে, তা ছিল ‘ইচ্ছাকৃত ভুল উপস্থাপনা’ ।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি এবং রাষ্ট্রদূত হাসের বৈঠক সম্পর্কে (মারিয়া) জাখারোভা’র ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল উপস্থাপনা সম্পর্কে অবগত।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকে সমর্থন করার লক্ষ্যে মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা নিয়োজিত আছে এবং বাংলাদেশী জনগণের স্বার্থে দেশটির সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও অন্যান্য অংশীজনদের প্রতি একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। যুক্তরাষ্ট্রে কোন একটি রাজনৈতিক দলকে অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে বেশি পক্ষপাতের দৃষ্টিতেও দেখে না।’
এদিকে মস্কোতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাখারোভা ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের একজন বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে দাবি করেছেন এবং সেখানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকায় রুশ দূতাবাস তাদের ওয়েবসাইটে মস্কোতে জাখারোভার ২২ নভেম্বরের মন্তব্যের বিস্তারিত আপডেট করার কয়েক ঘণ্টা পরই মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিক্রিয়াটি এলো।
জাখারোভা ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অক্টোবরের শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও স্থানীয় বিরোধী দলীয় একজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধির মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, ‘ওই বৈঠকে তারা (হাস ও ওই বিরোধীদলীয় নেতা) সারাদেশে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।’ জাখারোভা দাবি করেছেন যে, বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার ওই কথোপকথককে ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে’ অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ বলপ্রয়োগ করেছে বলে তথ্য-সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নারী কর্মকর্তার মতে, এই আশ্বাসগুলি মার্কিন দূতাবাস, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল। রুশ মুখপাত্র বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ কার্যকলাপকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কোনভাবেই দেখা যায় না।
জাখারোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকা- কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের শিষ্টাচার ও নীতির সুস্পষ্ট লংঘন। তিনি বলেন, ‘(তবে) আমাদের (রাশিয়ার) এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণভাবে তাদের জাতীয় আইনের আওতায় থেকেই স্বাধীনভাবে, বিদেশী শুভাকাক্সক্ষীদের সাহায্য ছাড়াই ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে।’
জাখারোভা বলেন, আপাতঃদৃষ্টিতে বাংলাদেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ‘স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি’ নিশ্চিত করার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে- মস্কো বারংবার সে ব্যাপারে বলে আসছে।