ঢাকা ০৯:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুলশানের রেস্তোরাঁয় নিহতদের পরিচিতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ জুলাই ২০১৬
  • ৫৩৫ বার

বাংলাদেশি তিনজন
১. ইশরাত আখন্দ : বাংলাদেশি শিল্পকলার প্রমোটার এবং ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান ক্রিয়েটিভস (আইএসি) এর ট্রাস্টি। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশি শিল্পকলার প্রসারে কাজ করছেন। তিনি মূলত তরুণ ও নবীন এবং যারা খুব একটা পরিচিতি পাননি কিন্তু সম্ভাবনাময় এমন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতেন। এমন প্রায় ২০০ শিল্পীকে তিনি ইতিমধ্যেই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইশরাতের তিন বন্ধু বলেন, ”জঙ্গিদের হামলার সময় ইশরাত এক ইতালিয়ান ব্যবসায়ীর সঙ্গে ডিনার বৈঠক করছিলেন। তাদের একজন বলেন, ”ইশরাত খুবই অমায়িক ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।”

২. ফারাজ হোসেন : ফারাজ হোসেন (২০) ছিলেন সিমিন হোসেন ও মোহাম্মদ ওয়াকির বিন হোসাইনের দ্বিতীয় ছেলে এবং ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও শাহনাজ বেগমের নাতি। ২০১৬ সালে অক্সফোর্ড কলেজ অফ ইমোরি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট করেন এবং ইমোরির গোইজুয়েটা বিজনেস স্কুলে অধ্যায়নরত ছিলেন। গত ১৮ মে দেশে আসেন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। হামলার সময় তিনি তার দুই বন্ধুকে নিয়ে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গিয়েছিলেন।

৩. অবিন্তা কবির : ঢাকায় জন্ম নেওয়া অবিন্তা (১৮) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও দেশটির মিয়ামি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। অক্সফোর্ড কলেজ অফ ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। ২০১৯ সালে তার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার কথা ছিল।

ইতালীয় ৯ জন
১. নাদিয়া বেনেদেত্তি (৫২) : কর্মসূত্রে বাংলাদেশে বাস করতেন নাদিয়া। স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ঢাকা শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। কম্পানিটির সদর দপ্তর লন্ডনে।

২. ক্লদিও ক্যাপেল্লি (৪৫) : গত পাঁচ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে তার টেক্সটাইল কম্পানি নিয়ে কাজ করছিলেন। তার কম্পানি টি-শার্ট, পোশাক-আশাক ও বিছানাপত্র তৈরি করত। বাংলাদেশে কাজ করার ব্যাপারে তার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা ছিল এবং এ ব্যাপারে তিনি খুবই আশাবাদী ছিলেন বলেও জানিয়েছেন ইতালির ভেনেতোতে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল জিয়ানআলবার্তো স্ক্যার্পা বাস্তেরি।

৩. ভিনসেনজো দ্যালেস্ত্রো (৪৬) : ইনি বাংলাদেশে ঠিক কী করতেন তা জানা যায়নি।

৪. ক্লদিয়া মারিয়া দান্তোনা (৫৬) : বাংলাদেশে অবস্থিত ইতালিয়ান টেক্সটাইল কম্পানি ফেডো ট্রেডিং লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। স্বামীসহ গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে বাস করছিলেন মারিয়া। হামলায় তার স্বামী জিয়ান গালেজ্জো বোশ্চেত্তি বেঁচে যান। তিনিই ওই হামলায় একমাত্র বেঁচে থাকা ইতালিয়ান।

৫. সিমোনা মন্টি (৩৩) : সাত মাসের গর্ভবতী এই নারী বাংলাদেশে এসেছিলেন ছুটি কাটাতে। শিগগিরই তিনি ইতালি ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।

৬. অ্যাডেলে পুগলিসি (৫০) : আর্টজানা নামের একটি টেক্সটাইল গ্রুপের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। শনিবার তার ইতালি যাওয়ার কথা ছিল।

৭. ক্রিস্তিয়ান রসি (৪৭) : ফেলেট্টো উমবার্তো (ইউডাইন) নামের একটি কম্পানির ব্যবস্থাপক ছিলেন। দুটি যমজ মেয়ের বাবা রসি গত বৃহস্পতিবারেই ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশে ফাইবারস লিমিটেড নামে তার একটি কম্পানি আছে; এটি টেক্সটাইল খাতের একটি পরামর্শক ও ব্রোকারেজ ফার্ম। চীনেও কম্পানিটির একটি শাখা আছে।

৮. মারিয়া রিবোলি (৩৩) : টেক্সটাইল খাতে কর্মরত মারিয়া বাংলাদেশে এসেছিলেন বাণিজ্যিক ভ্রমণে। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।

৯. মার্কো তোন্দাত : ইতালির কোর্দোভাদো (পোর্দেনোন) অঞ্চলের টেক্সটাইল খাতের একজন তরুণ ব্যবসায়ী ছিলেন মার্কো। তিনি স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের জন্য কাজ করতেন।

হামলার সময় নিহত ইতালিয়ানদের পাঁচজনই একত্রে একটি টেবিলে বসা ছিলেন। এরা পরস্পরকে চিনতেন এবং রেস্টুরেন্টে এসেছিলেন একত্রে সময় কাটাতে। জঙ্গিরা তাদের টেবিলের তলায় একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারলে তারা নিহত হন।

ভারতীয় একজন
তারিশি জৈন (১৮) : যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে এর শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ইন্টার্নশিপ প্রোগামের জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়ে বাংলাদেশে আসেন। তার ইন্টার্টশিপ প্রকল্প ছিল বাংলাদেশে ব্যাংকটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা সংক্রান্ত। তার বাবা সঞ্জীব জৈন ঢাকায় গত ২০ বছর ধরে গার্মেন্ট ব্যবসা করছিলেন।

জাপানি সাতজন
জাপানের ক্যাবিনটে সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ঢাকার গুলশানের রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় তার দেশের ৭ নাগরিক নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী।

হামলার সময় রেস্টুরেন্টটিতে আটজন জাপানি নাগরিক ছিলেন। এদের একজন বেঁচে যান। তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

জাপানি নাগরিকদের সকলেই ঢাকায় জাপান সরকারের সহায়তা প্রকল্পের (জাইকা) পরামর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলেও জানান জাপানের ক্যাবিনটে সেক্রেটারি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গুলশানের রেস্তোরাঁয় নিহতদের পরিচিতি

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ জুলাই ২০১৬

বাংলাদেশি তিনজন
১. ইশরাত আখন্দ : বাংলাদেশি শিল্পকলার প্রমোটার এবং ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান ক্রিয়েটিভস (আইএসি) এর ট্রাস্টি। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশি শিল্পকলার প্রসারে কাজ করছেন। তিনি মূলত তরুণ ও নবীন এবং যারা খুব একটা পরিচিতি পাননি কিন্তু সম্ভাবনাময় এমন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতেন। এমন প্রায় ২০০ শিল্পীকে তিনি ইতিমধ্যেই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইশরাতের তিন বন্ধু বলেন, ”জঙ্গিদের হামলার সময় ইশরাত এক ইতালিয়ান ব্যবসায়ীর সঙ্গে ডিনার বৈঠক করছিলেন। তাদের একজন বলেন, ”ইশরাত খুবই অমায়িক ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।”

২. ফারাজ হোসেন : ফারাজ হোসেন (২০) ছিলেন সিমিন হোসেন ও মোহাম্মদ ওয়াকির বিন হোসাইনের দ্বিতীয় ছেলে এবং ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও শাহনাজ বেগমের নাতি। ২০১৬ সালে অক্সফোর্ড কলেজ অফ ইমোরি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট করেন এবং ইমোরির গোইজুয়েটা বিজনেস স্কুলে অধ্যায়নরত ছিলেন। গত ১৮ মে দেশে আসেন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। হামলার সময় তিনি তার দুই বন্ধুকে নিয়ে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গিয়েছিলেন।

৩. অবিন্তা কবির : ঢাকায় জন্ম নেওয়া অবিন্তা (১৮) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও দেশটির মিয়ামি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। অক্সফোর্ড কলেজ অফ ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। ২০১৯ সালে তার গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার কথা ছিল।

ইতালীয় ৯ জন
১. নাদিয়া বেনেদেত্তি (৫২) : কর্মসূত্রে বাংলাদেশে বাস করতেন নাদিয়া। স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ঢাকা শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। কম্পানিটির সদর দপ্তর লন্ডনে।

২. ক্লদিও ক্যাপেল্লি (৪৫) : গত পাঁচ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে তার টেক্সটাইল কম্পানি নিয়ে কাজ করছিলেন। তার কম্পানি টি-শার্ট, পোশাক-আশাক ও বিছানাপত্র তৈরি করত। বাংলাদেশে কাজ করার ব্যাপারে তার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা ছিল এবং এ ব্যাপারে তিনি খুবই আশাবাদী ছিলেন বলেও জানিয়েছেন ইতালির ভেনেতোতে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল জিয়ানআলবার্তো স্ক্যার্পা বাস্তেরি।

৩. ভিনসেনজো দ্যালেস্ত্রো (৪৬) : ইনি বাংলাদেশে ঠিক কী করতেন তা জানা যায়নি।

৪. ক্লদিয়া মারিয়া দান্তোনা (৫৬) : বাংলাদেশে অবস্থিত ইতালিয়ান টেক্সটাইল কম্পানি ফেডো ট্রেডিং লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। স্বামীসহ গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে বাস করছিলেন মারিয়া। হামলায় তার স্বামী জিয়ান গালেজ্জো বোশ্চেত্তি বেঁচে যান। তিনিই ওই হামলায় একমাত্র বেঁচে থাকা ইতালিয়ান।

৫. সিমোনা মন্টি (৩৩) : সাত মাসের গর্ভবতী এই নারী বাংলাদেশে এসেছিলেন ছুটি কাটাতে। শিগগিরই তিনি ইতালি ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।

৬. অ্যাডেলে পুগলিসি (৫০) : আর্টজানা নামের একটি টেক্সটাইল গ্রুপের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। শনিবার তার ইতালি যাওয়ার কথা ছিল।

৭. ক্রিস্তিয়ান রসি (৪৭) : ফেলেট্টো উমবার্তো (ইউডাইন) নামের একটি কম্পানির ব্যবস্থাপক ছিলেন। দুটি যমজ মেয়ের বাবা রসি গত বৃহস্পতিবারেই ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশে ফাইবারস লিমিটেড নামে তার একটি কম্পানি আছে; এটি টেক্সটাইল খাতের একটি পরামর্শক ও ব্রোকারেজ ফার্ম। চীনেও কম্পানিটির একটি শাখা আছে।

৮. মারিয়া রিবোলি (৩৩) : টেক্সটাইল খাতে কর্মরত মারিয়া বাংলাদেশে এসেছিলেন বাণিজ্যিক ভ্রমণে। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।

৯. মার্কো তোন্দাত : ইতালির কোর্দোভাদো (পোর্দেনোন) অঞ্চলের টেক্সটাইল খাতের একজন তরুণ ব্যবসায়ী ছিলেন মার্কো। তিনি স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের জন্য কাজ করতেন।

হামলার সময় নিহত ইতালিয়ানদের পাঁচজনই একত্রে একটি টেবিলে বসা ছিলেন। এরা পরস্পরকে চিনতেন এবং রেস্টুরেন্টে এসেছিলেন একত্রে সময় কাটাতে। জঙ্গিরা তাদের টেবিলের তলায় একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারলে তারা নিহত হন।

ভারতীয় একজন
তারিশি জৈন (১৮) : যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে এর শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ইন্টার্নশিপ প্রোগামের জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়ে বাংলাদেশে আসেন। তার ইন্টার্টশিপ প্রকল্প ছিল বাংলাদেশে ব্যাংকটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা সংক্রান্ত। তার বাবা সঞ্জীব জৈন ঢাকায় গত ২০ বছর ধরে গার্মেন্ট ব্যবসা করছিলেন।

জাপানি সাতজন
জাপানের ক্যাবিনটে সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ঢাকার গুলশানের রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় তার দেশের ৭ নাগরিক নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী।

হামলার সময় রেস্টুরেন্টটিতে আটজন জাপানি নাগরিক ছিলেন। এদের একজন বেঁচে যান। তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

জাপানি নাগরিকদের সকলেই ঢাকায় জাপান সরকারের সহায়তা প্রকল্পের (জাইকা) পরামর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলেও জানান জাপানের ক্যাবিনটে সেক্রেটারি।