৮১ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারানো দলকে দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় ছিল না, এই দলটি দুইশ পার করতে পারে। তবে বাংলাদেশ সেটি করেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে। সেটি অবশ্য ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই হারে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়ল সাকিব আল হাসানের দল। ১০ দলের এই টুর্নামেন্টে পয়েন্ট টেবিলেও সবার নিচে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ কম খেলা ইংল্যান্ড, শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডসের সমান পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে এগিয়ে তারা।
আজ মঙ্গলবার প্রথমে ব্যাট করে কুইন্টন ডি ককের ১৭৪ ও হেনরিখ ক্লাসেনের ঝোড়ো ৯০ রানের ওপর ভর করে ৩৮২ রানের পাহাড়সম স্কোর তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে মাহমুদউল্লাহর ১১১ রানের ওপর ভর করে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে এই নিয়ে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মাহমুদউল্লাহ। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সাইলেন্ট কিলার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি।
এদিন, ৩৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভালোই শুরু করেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন। তবে ৩০ রানের মাথায় তানজিদ ফিরলে শুরু হয় ধস। একই রানে ‘ডাক’ মারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দলের সঙ্গে আর ১ রান যোগ হতে ফেরেন অধিনায়ক সাকিবও। আর ৪২ রানের মাথায় মুশফিকুর রহিম ফিরলে বাংলাদেশের ইনিংস পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ৮১ রানের মধ্যে ফেরেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজও।
৮১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিশ্বকাপে রেকর্ড ব্যবধানে হারের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর নাসুম আহমেদকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে ৪১ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি এই জুটি। দলীয় ১২২ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ফেরেন নাসুম। হাসান মাহমুদকে নিয়েও ৩৭ রানের জুটি গড়েন একপাশ আগলে পড়ে থাকা রিয়াদ। এরই মধ্যে তুলে নেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি। ১৫৯ রানে হাসানের বিদায়ের পরই হয় সবচেয়ে বড় জুটি। নবম উইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে গড়েন ৬৮ রানের জুটি। তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি। তবে ২২৭ রানের মাথায় ১১১ রান করে ফেরেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
এর আগে, প্রথমে ব্যাট করে কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরি ও হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলারের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানের পাহাড়সম স্কোর গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৭৪ রান করেন ডি কক। চলমান বিশ্বকাপে এটিই এখন সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। ৪৯ বলে ৯০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন হেনরিখ ক্লাসেন। ১৫ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ডেভিড মিলার। চারে নেমে ৬০ রান করেছেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।
বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আজ মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে প্রোটিয়ারা। ৩৩ রানের মাথায়ই ওপেনার রেজা হেনড্রিকসকে সরাসরি বোল্ড করেন পেসার শরিফুল ইসলাম। দলের সঙ্গে আর ৩ রান যোগ হতেই আবার উইকেটের পতন। স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফেরেন দলটির সেরা ব্যাটার রাসি ভ্যান ডার ডাসেন।
এরপর বাংলাদেশের বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ডি কক ও অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে নিজেদের জুটিকে নিয়ে যান একশ রানের ওপরে। শেষ পর্যন্ত জুটি ভাঙেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব। ১৬৭ রানের মাথায় মার্করামকে লিটন দাসের ক্যাচ বানালে ভাঙে ১৩১ রানের এই জুটি। এরপর জুটি বাঁধেন ডি কক ও হেনরিখ ক্লাসেন। ঝোড়ো গতিতে ব্যাট চালান এই দুজন। মাত্র ৮৭ বলে গড়েন ১৪২ রানের জুটি। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে ৩০৯ রানের মাথায় ডি কককে ফেরান হাসান মাহমুদ। তবে ডি কক ফিরলেও আরেক পাশে তাণ্ডব অব্যাহত রাখেন ক্লাসেন। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ২ চার ও ৮ ছক্কায় করেছেন ৯০ রান। আরেক পাশে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত ডেভিড মিলার।
বাংলাদেশের হয়ে অকৃপণভাবে রান দিয়েছেন পেসাররা। ৮ ওভারে প্রায় সাড়ে আট ইকোনমিতে মোস্তাফিজুর রহমান দিয়েছেন ৭৬ রান। ৬ ওভার বল করা হাসান ২ উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন ৬৭। তবে দুরন্ত বল করেছেন স্পিনার মিরাজ ও নাসুম আহমেদ। ৯ ওভারে মাত্র ৪৪ রান দিয়ে ১ উইকেট মিরাজের। নাসুম উইকেট না পেলেও ইকোনমি ছিল ছয়ের কম। ৯ ওভারে ৬৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।