যাদের নিয়ে উঠেছিল হাজারো প্রশ্ন, সেই তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই শুধু লড়াই করলেন, ব্যর্থ বাকি সব ব্যাটার। আর তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ বরণ করেছে – রানের পরাজয়, যার ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে সফরকারীরা।
মিরপুরে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড।
মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতে শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয় কিউইদের ইনিংস। অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ নিজের প্রথম ওভারে, দলীয় ৩৬ রানে সাজঘরে ফেরান চাড বোজকে। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তইলেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। ধীরে ধীরে চাপমুক্ত হয় সফরকারী দল।
খালেদ ভাঙেন তাদের জুটিও। ৬১ বলে ৪৯ রান করা নিকোলস মাত্র ১ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন সাজঘরে। এরপর রাচিন রবীন্দ্র ও কোল ম্যাকঞ্চিকে অপর প্রান্তে রেখে ব্লান্ডেল রানের চাকা সচল রাখলেও মেহেদী হাসান রবীন্দ্রকে আর হাসান মাহমুদ ব্লান্ডেলকে শিকার করলে কিউইরা বিপাকে পড়ে যায়। ২০ রান করে ম্যাকঞ্চিও ধরেন প্যাভিলিয়নের পথ।
শেষদিকে নাটকীয়তার জন্ম দেন হাসান মাহমুদ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেন মানকাডের আশ্রয়। ইশ সোধিকে মানকাড করেন, তৃতীয় আম্পায়ার যাচাইবাছাই করে দেন আউটের সংকেত। তবে সোধি যখন ফিরে যাচ্ছেন তখন আম্পায়ারের সাথে আলোচনার পর লিটন সোধিকে ক্রিজে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। আর ফিরেই হাসানকে জড়িয়ে ধরেন সোধি। শেষপর্যন্ত ৫০ ওভার খেলা হয়নি কিউইদের। ৪৯.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৫৪ রান জড়ো করে নিউজিল্যান্ড। ১৭ রানে জীবন পাওয়া সোধি ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন, হাঁকান তিনটি ছক্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ ও শেখ মেহেদী হাসান তিনটি করে উইকেট শিকার করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। অধিনায়ক লিটন দাস ১৬ বলে মাত্র ৬ রান করে ধরেন সাজঘরের পথ। ওয়ান ডাউনে নামা তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তামিম ইকবাল। দুই তামিম মিলে গড়েন ৪১ রানের জুটি। তানজিদ ১২ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেওয়ার পরপর সৌম্য সরকার শূন্য ও তাওহীদ হৃদয় ৪ রানে আউট হন। তামিম চাপের মুখে উইকেটে থিতু হয়ে সাবলীলভাবে রান করছিলেন। তবে ইশ সোধির শিকার হয়ে থামে ৫৮ বলে ৭ চারে গড়া তার ৪৪ রানের ইনিংস।
সোধি যেন ব্যাট হাতে জীবন পেয়ে জ্বলে ওঠেন বল হাতেও। মুড়িমুড়কির মতো শিকার করছিলেন একের পর এক উইকেট। তামিম বিদায় নেওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে গড়েন ২২ রানের জুটি। তামিমের পর শেখ মেহেদী হাসানও (২৯ বলে ১৭) শিকার হন সোধির, পূর্ণ হয় এই লেগির ফাইফার। রিয়াদ তখনও লড়াই চালিয়ে গেছেন একাই।
তবে শেষপর্যন্ত তামিমের মতো রিয়াদেরও পাওয়া হয়নি অর্ধশতক। ৫০ রান হলেই ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫ হাজার রানের মালিক বনে যেতেন, তা হয়নি মাত্র ১ রানের জন্য। ৭৬ বলে ৪৯ রানের লড়াকু ইনিংস সাজিয়েছিলেন চারটি চার ও একটি ছক্কায়, যার সলিল সমাধিন হয় কোল ম্যাকঞ্চির শিকার হয়ে। তবে এই ইনিংস খেলার পথেই পূর্ণ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের গণ্ডি।
শেষদিকে নাসুম আহমেদ আবারও ব্যাট হাতে সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। ৩০ বলে করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ২১ রান, কমিয়েছে হারের ব্যবধান। শেষপর্যন্ত ৮৬ রানের বড় পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশ, ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে অলআউট হয়ে। কিউইদের পক্ষে সোধি ৩৯ রানের খরচায় শিকার করেন ৬ উইকেট।
বাংলাদেশ : ৪১.১ ওভারে ১৬৮/১০ (মোস্তাফিজ ২*, খালেদ ১, নাসুম ২১, হাসান ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, মেহেদী ১৯, তামিম ৪৪, হৃদয় ৪, সৌম্য ০, তানজিদ তামিম ১৬, লিটন ৬)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৯.২ ওভারে ২৫৪/১০ (ট্রেন্ট বোল্ট ১*, ইশ সোধি ৩৫, লকি ফার্গুসন ১৩, কাইল জেমিসন ২২, উইল ইয়াং ০, ফিন অ্যালেন ১২, চ্যাড বাওয়েস ১৪, নিকোলস ৪৯, রাচিন রবীন্দ্র ১০, টম ব্লান্ডেল ৬৮, কোল ম্যাককনচি ২০)