ভিনগ্রহের ফুটবলার লিওনেল মেসি মাত্র ২৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন। কোপা আমেরিকা ফাইনালে ট্রাইবেকারে চিলির কাছে হেরে । কোপা আমেরিকা ফাইনালে টাইব্রেকারে চিলির কাছে হেরে যাওয়ার পর অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন লিওনেল মেসি।
এবারও তীরে এসে তরী ডুবল আর্জেন্টিনার ৷ রোববার কোপা আমেরিকার ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে চিলির বিপক্ষে হেরে যায় তারা। শতবর্ষের কোপার ফাইনালে চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে গোল মিস করার পরই অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন লিওনেল মেসি।
পাঁচবারের ব্যালন ডি’ওর জয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়কের এই আচমকা অবসরের ঘোষণায় হতবাক হয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব। এতে ব্যথিত মেসির ভক্তসহ দুনিয়ার সব ফুটবলপ্রেমি।
আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মেসি বলেন, এটা আমার ও দলের জন্য খুবই কঠিন সময়। আমি সবসময় সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু চারটা ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটা খুবই বেদনাদায়ক। এটা বলা খুব কষ্টের তারপর বলতে হচ্ছে, জাতীয় দলের হয়ে আমার খেলার সময় শেষ।
আবেগআপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ জাতীয় দলের হয়ে আর নয়, খেলার শেষে লকার রুমেই সিদ্ধান্ত নিলাম ৷ সবরকম চেষ্টা করেছি , চার বার ফাইনালে উঠেও জিততে পারিনি ৷ এই ব্যর্থতা আমি মানতে পারছি না, খুব খারাপ লাগছে । আর খেলা চালিয়ে যাওয়ার মানে হয় না।জাতীয় দলের হয়ে একটা ট্রফি অন্তত চেয়েছিলাম…কিন্তু সেটা হল না।
আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর বলেন, ‘আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার জন্য এবং আরো অনেকের জন্য, যারা চাচ্ছে আমি অবসর নেই। আমি প্রাণপণ লড়েছি কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি।’
আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে ২০০৫ সালে জাতীয় দলে লিওনেল মেসির অভিষেক হয়।আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি ১১২ বার খেলেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। কোপার সেমিফাইনালে দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে যুক্তরাষ্ট্রের জালে বল পাঠিয়ে গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার রেকর্ড ভেঙে করেছেন দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৫টি গোল। বার্সেলোনার হয়ে ২৮টি শিরোপা জেতা মেসিকে হতাশায় ডুবিয়েছে জাতীয় দলের পক্ষে সাফল্য না পাওয়াটা।
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে তারা জার্মানীর কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল। এরপর গত দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়ে হতাশ হতে হলো। ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালেও পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন মেসি।
পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে খুব কমই আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বরং প্রায়ই তাকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে- আদৌ তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার কিনা। নিজ দেশের সমর্থকদের কাছে না হলেও বিশ্বজুড়ে তার অবশ্য একটি সমালোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বড় কোন সাফল্য না আসাটাই এই সমালোচনার মূল কারণ।
আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার সাথে মেসির তুলনায় উঠলেই নিন্দুকেরা একটি বিষয় সামনে নিয়ে আসতো, ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতেছিল। এটাই ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় সাফল্য, এখানেই মেসির সাথে তার পার্থক্য।
একনজরে
একনজরে
পুরো নাম : লিওনেল আন্দ্রেস মেসি
খ্যাতি : পাঁচবার ফিফা ব্যালন ডি অর বিজয়ী ফুটবলার
পজিশন: সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড
ক্লাব: স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা
জন্ম : রোজারিও, আর্জেন্টিনা
জন্মতারিখ : ২৪ জুন, ১৯৮৭
বর্তমান বয়স : ২৮ বছর
উচ্চতা : ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
ওজন : ৬৭ কেজি
বান্ধবী : অ্যান্তোনেল্লা রোকুজ্জো। পরিচয় ছিল পাঁচ বছর বয়স থেকেই। তবে প্রেম আরও পরে
বান্ধবীল সঙ্গে বসবাস: ২০০৮ সাল থেকে
সন্তান : থিয়াগো মেসি ও মাতেও মেসি
আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১১৩টি
আন্তর্জাতিক গোল: ৫৫টি
আন্তর্জাতিক অভিষেক: ১৭ আগস্ট, ২০০৫, হাঙ্গেরি ১-২ আর্জেন্টিনা
বেতন (প্রতি সপ্তাহে) : ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা
মোট আয় (প্রতি বছরে): ৫১০ কোটি টাকা
খেলোয়াড় মূল্য : ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা
মেসির ব্যক্তিগত যত অর্জন:
ব্যালন ডি`অর (৫): ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫
স্প্যানিশ লিগের শীর্ষ গোলদাতা (৩): ২০০৯-২০১০ (৩৪ গোল), ২০১১-২০১২ (৫০ গোল), ২০১২-২০১৩ (৪৬ গোল)
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৫): ২০০৮-২০০৯ (৯ গোল), ২০০৯-২০১০ (৮ গোল), ২০১০-২০১১ (১২ গোল), ২০১১-২০১২ (১৪ গোল), ২০১৪-২০১৫ (১০ গোল)
বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল (১): ২০১৪
অলিম্পিকের টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় (১): ২০০৮
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় (১): ২০০৫
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা (১): ২০০৫ (৬ গোল)
আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির যত অর্জন:
বিশ্বকাপ: ফাইনালিস্ট (২০১৪), কোয়ার্টার-ফাইনালিস্ট (২০০৬, ২০১০), ১৫ ম্যাচে ৫ গোল
কোপা আমেরিকা: ফাইনালিস্ট (২০০৭, ২০১৫, ২০১৬), কোয়ার্টার-ফাইনালিস্ট (২০১১), ২০ ম্যাচে ৮ গোল
অলিম্পিক গোল্ড মেডেল (১): ২০০৮
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ (১): ২০০৫
ক্লাব ফুটবলে মেসির যত অর্জন:
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ (৪): ২০০৫-০৬, ২০০৮-০৯, ২০১০-১১, ২০১৪-১৫
ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ (৩): ২০০৯, ২০১১, ২০১৫
স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নশিপ (৮): ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬, ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১২-১৩, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬
স্প্যানিশ কাপ (৪): ২০০৮-০৯, ২০১১-১২, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬
স্প্যানিশ সুপার কাপ (৬): ২০০৫, ২০০৬, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১৩
ফুটবল কিংবদন্তিদের চোখে
দিয়াগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা) : মেসি প্রতিভাবান এবং সে দিন দিন উন্নতি করছে। আমার জায়গা যদি কেউ দখল করে তার নাম মেসি।
পেলে (ব্রাজিল) : এই মুহূর্তে মেসিই বিশ্বসেরা। টেকনিক্যালি মেসি আমার সমকক্ষ।
পেপ গার্দিওলা (সাবেক কোচ, বার্সেলোনা) : মেসির কোচ হতে পারাটা সম্মানের। আমার দেখা সেরা খেলোয়াড় সে।
অ্যালেক্স ফার্গুসন (সাবেক কোচ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড) : বোদ্ধারা জিজ্ঞেস করে পেলের পর গত ৫০ বছরে এমনকি আজ পর্যন্ত কে সেরা। মেসি ১৯৫০ সালে অথবা আজকে খেলতে পারত। কারণ সে সেরা।
মার্সেলো লিপ্পি (সাবেক কোচ, ইতালি) : কে সেরা? মেসি।
জন টেরি (ইংল্যান্ড) : মেসির বিপক্ষে খেলতে পারাটাও আনন্দের। যখন আমার ক্যারিয়ার শেষ হবে তখন পেছনে ফিরে দেখব আমি মেসির বিপক্ষে খেলতাম।
জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স) : এ সময়ের সবচেয়ে ব্যতিক্রম মেসি। একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে তার খেলা দেখাও উপভোগ্য।
ফিলিপ স্কোলারিও (সাবেক কোচ, পর্তুগাল) : ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারে মেসি না থাকলে সেই হতো বিশ্বসেরা।
রাদামেল ফ্যালকাও (কলম্বিয়া) : মেসি খেলোয়াড় নাকি গোটা প্লে স্টেশন?
নেইমার (ব্রাজিল) : মেসি বিশ্বসেরা। মাঠে আপনি তাকে সামান্য সুযোগ দিন। সে যা চায় তাই করবে।
মাইকেল ওয়েন (ইংল্যান্ড) : মেসির মতো কেউ খেলতে পারে এটা বিশ্বাস হয় না।
রোনাল্ডো (ব্রাজিল) : নিঃসন্দেহে মেসি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।
অলিভার কান (জার্মানি) : ম্যারাডোনা, পেলের মতো মেসি এক বিস্ময়।
ম্যাক্সি রুদ্রিগেজ (আর্জেন্টিনা) : কোনো সন্দেহ নেই তুমি (মেসি) অন্য গ্রহের ফুটবলার।
রাফায়েল ভ্যান ডার (নেদারল্যান্ডস) : আমি সেরা কোন ফুটবলারের বিপক্ষে খেলেছি? সে মেসি। সে মাঠে হারিয়েছে আমাদের।
সার্জিও অ্যাগুয়েরো (আর্জেন্টিনা) : মেসি অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বসেরাই থাকবে।
জেরার্ড পিকে (স্পেন) : এটা কোনো ব্যাপার না মেসি কোথায় খেলছে। এটা ঠাণ্ডা নাকি গরম। সবসময় প্রমাণ করেছে সে বিশ্বসেরা।
ফার্নান্ডো গ্যাগো (আর্জেন্টিনা) : আমার জন্য মেসিই বিশ্বসেরা। কারণ সে খেলে, বল নিয়ে এগিয়ে যায় এবং খেলা পাল্টে দেয়। তার খেলা দেখতেও ভালোবাসি।
থিয়েরি অঁরি (ফ্রান্স) : আমার মেসিকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
আরিয়েন রোবেন (নেদারল্যান্ডস) : মেসি ভিনগ্রহ থেকে এসেছে।
পাওলো মালদিনি (ইতালি) : আমার কোনো সন্দেহ নেই। সে এক বিস্ময়কর ফুটবলার। যখন আমি মেসিকে খেলতে দেখি আমি ভাবি সেই জিতবে।
ডেভিড বেকহ্যাম (ইংল্যান্ড ) : আমি যাদের বিপক্ষে খেলেছি তাদের মধ্যে মেসিই সেরা।
বুফন (ইতালি) : মেসি এই যুগের সেরা খেলোয়াড়। তার মতো খেলোয়াড় বারবার আসে না।
বিএইচ