হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে সামনে আরো বড় বিপর্যয় আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীতে উচ্চ পর্যায়ের এক মতবিনিময়সভায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
রবিবার বিকেলে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময়সভায় বিশেষজ্ঞরা ওই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন।
ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু শহর নয়, এখন গ্রাম পর্যায়েও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মশা নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, সব শহরভিত্তিক। যত প্রচারণা হচ্ছে, সব এডিস মশা এজিপ্টি নিয়ে, যেটি শহর অঞ্চলে বেশি থাকে।
কিন্তু সম্প্রতি ঢাকার বাইরে যে সার্ভেগুলো হয়েছে, সব জায়গাতেই এডিস মশা এলবোপিকটাসের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে। এ ছাড়া এখন দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ছে।
সভার শুরুতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবিরকে প্রশ্ন করেন, ‘মশা নিধনে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেসব সার্ভের রিপোর্ট দিচ্ছে, তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না? সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, সেই হিসাবে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানসহ কমিউনিটি এনগেজমেন্টের বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন?’
জবাবে দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানুয়ারি থেকে মশক নিধনের ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, এডিস মশার উৎস নির্মূল করা জরুরি।
এটি করতে হলে জনগণের সম্পৃক্ততা দরকার। কেননা এডিস মশা ড্রেনে জন্মাচ্ছে না, এটি জন্মাচ্ছে মানুষের ঘরে ঘরে।’
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০ ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়ে, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি করেছি, সভাও করেছি। ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষ সচেতন হলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সচেতনতার অভাব লক্ষ করেছি।
বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি হাসপাতালের ভেতরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ব্যাপকভাবে এডিসের লার্ভা পেয়েছি।’
এ পর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে থামিয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা যে ওষুধ ব্যবহার করেন, সেটা কতখানি কাজে আসে? আমরা দেখেছি, সঠিক ওষুধ আনা হয়নি, পত্রপত্রিকায় আসছে। ওষুধের মান পরীক্ষা করেন কি না?’
জবাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘আমাদের যে ওষুধ আনা হয়, তার জন্য টেকনিক্যাল কমিটি আছে। এটি মেয়রও সিলেক্ট করেন না, আমিও করি না। টেকনিক্যাল কমিটি বলে দেয় কোন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। সেটি পরীক্ষা করে আইইডিসিআর এবং ম্যান প্রটেকশন উইং। পরীক্ষায় ৮০ শতাংশের বেশি কার্যকারিতার প্রমাণ পেলে সেটি আমরা ব্যবহার করি।’
তখন পাল্টা প্রশ্ন করেন মন্ত্রী, ‘পরীক্ষা (এফিডিসি) বুঝলাম, তাহলে মশা এত বাড়ছে কেন? রোগী এত বাড়ছে কেন?’
জবাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে হাসপাতালে দুই হাজার রোগী আসত, সেখান থেকে এখন রোগী সাত-আট শতে নেমে এসেছে। আমরা এটাকে শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে জনগণ যদি সচেতন না হয় এবং সহযোগিতা না পাই, তাহলে সিটি করপোরেশন একা কিছুই করতে পারবে না।’
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি বলছেন যে এডিস মশা জন্মাচ্ছে ঘরের ভেতরে, আমাদের স্টাডি তো তা বলছে না!’
পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, ‘ঢাকার কিছু কিছু জায়গা যেখানে সার্ভে করা যায় না, সেসব এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম কারা পরিচালনা করে? আপনারা কিভাবে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত হন? জয়েন্ট মনিটরিং কার্যক্রম আছে কি?’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান বলেন, ‘যেসব এলাকায় সার্ভে করা যায় না, সেসব এলাকার কর্তৃপক্ষ আমাদের সাহায্য নিয়ে তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে মশক নিধনের কাজ করে। আমাদের কাছ থেকে কীটনাশক নেয়, আমরা নিয়মিত মনিটর করি।’
উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বাসাবাড়িতে পানির মিটার একটা বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির মিটার একটি বক্সের মধ্যে থাকে, এর মধ্যে পানি জমে। এসব জায়গায়ও আমরা লার্ভা পাচ্ছি।’
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের কীটতত্ত্ববিদ (এন্টোমোলজিস্ট) টিম আছে কি না? থাকলে তারা কাজ করে কি না? মশা নিধনে লোকবল পর্যাপ্ত আছে কি না? কমিশনাররা নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন কি না?’
জবাবে উত্তর সিটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের মাত্র একজন কীটতত্ত্ববিদ আছে। আমরা কীটনাশক আনার পরে পরীক্ষা করি আইইডিসিআরে। এ ছাড়া আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশারের ল্যাবে ওষুধ পরীক্ষা করতে দিই। মশক নিধনে ৫৪ ওয়ার্ডে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারা কাজ করছে।’
এই পর্যায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদের ল্যাবে পরীক্ষা করেন কেন? সরকারি ল্যাব আছে, সেখানে করেন না কেন?’ জবাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরেও পরীক্ষা করি।’
মতবিনিময়সভায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তিনটি প্রশ্ন করা হয়—তিন দিনের জ্বরেই মানুষ মারা যাচ্ছে কেন? এত দিন হলো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেথ রিভিউ করতে পারেনি কেন? ২০১৭ ও ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসেছিলেন, তখন তাঁরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কী কী করতে হবে, তা বলে গিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন কোনো বৈঠক করেনি?
জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, ‘ডেঙ্গুর যে ধরন বর্তমানে আছে, এতে আগামী বছর আরো বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
কারণ আমাদের বেশির ভাগ মানুষ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিটি ইনফেকশন পরবর্তী ইনফেকশনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে। অর্থাৎ একবার আক্রান্ত হওয়ার পর যারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়, দুই-তিন দিনের মধ্যে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।’
ডেথ রিভিউ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কারণগুলো আমরা হাসপাতাল থেকে পাই। এর মধ্যে অনেক রিভিউ হয়েছে। বিষয়গুলো আমরা আমাদের চিকিৎসকদের জানিয়ে দিই, যাতে ডেঙ্গু রোগীর ম্যানেজমেন্ট করতে সুবিধা হয়। আমরা আগামী সপ্তাহে অফিশিয়ালি জানিয়ে দেব।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম রিহ্যাবের পরিচালক মাসুদা সিদ্দিকা রোজীর কাছে প্রশ্ন করেন, ‘মশা ও লার্ভা নিধনে আপনাদের পদক্ষেপ কী?’ জবাবে রিহ্যাব পরিচালক বলেন, ‘আমাদের এখানে দুই দিনের বেশি পানি জমা থাকার সুযোগ নেই। যদি কোনো ক্ষেত্রে লার্ভা পাওয়া যায়, আমরা জরিমানা করছি।’
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
মতবিনিময়সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের স্কুলগুলোতে প্রচারণা বাড়াতে হবে। আমরা স্কুলে প্রচুর পরিমাণে ডেঙ্গু আক্রান্ত বাচ্চা পাচ্ছি।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘পরস্পর দোষারোপ না করে সমস্যার উত্তরণ করা জরুরি। সমন্বিতভাবে সবার কাজ করতে হবে। কোনো দেশেই দ্রুত উত্তরণ ঘটার মতো পরিস্থিতি হয়নি।’
নিপসনের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ ছিল এন্টোমোলজি সার্ভেইল্যান্স করার। আমরা সার্ভেইল্যান্স করি না, সার্ভে করি। এখানে সমস্যা হলো, আমাদের দেশে মেডিক্যাল এন্টোমোলজি আসলেই নেই। যাঁরা কাজ করেন তাঁরা হয় জিওলজি অথবা অ্যাগ্রিকালচার থেকে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের আগে ঢাকার বাইরে এত রোগী ছিল না। তখন যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, বরিশাল—এ রকম কয়েকটি জেলায় ছিল। এ বছর কোনো জেলা বাকি নেই। আমরা যত কথা বলছি, শহরভিত্তিক বলছি, এডিসের ধরন এজিপ্টি নিয়ে কথা বলছি।
কিন্তু গ্রামে এডিস এলবোপিকটাস বেশি থাকে। সম্প্রতি ঢাকার বাইরে যে সার্ভেগুলো হয়েছে, সব জায়গাতেই এলবোপিকটাসের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। আমরা যে প্রচার-প্রচারণা করি সেগুলো এজিপ্টি মশা নিয়ে করি। অল্প পানিতে জন্মাবে, ফুলের টবে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
কিন্তু এলবোপিকটাস গাছের কোটরে, কলাগাছের ভেতরে, কচুগাছের পাতায় যেটুকু পানি জমা হয় সেখানেও জন্মাতে পারে। গ্রামে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা যখন জিজ্ঞাসা করি—এখানে পানি জমান কেন, তখন তাঁরা বলেন, কোথায় ফেলব?’
তিনি বলেন, ‘এ বছর আমরা গ্রাম পর্যায়ে রোগী পেতে শুরু করেছি। আগামী বছর আরো বাড়বে কি না; বাড়লে চিকিৎসার সক্ষমতার ওপর কতখানি চাপ পড়বে, তা নিয়ে আমাদের এখনই ভাবা উচিত। সময়ভিত্তিক কাজ না করে সমন্বিতভাবে বছরজুড়ে এই কার্যক্রমগুলো চালাতে হবে।’
রোগীপ্রতি সরকারের ব্যয় ৫০ হাজার টাকা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সরকারের ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গড়ে রোগীপ্রতি ব্যয় ৫০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে সেবা নেওয়া মোট রোগীর ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। আর ৩০ শতাংশ বেসরকারিতে। করোনার মতো এবার ডেঙ্গুতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
কীটনাশক প্রয়োগের সময় মশা জায়গা পরিবর্তন করছে
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, মশার মধ্যে তিন ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এরা সময় বুঝে ফেলছে। জায়গাটাও বুঝে ফেলছে। যখন ওষুধ প্রয়োগ হয় তখন জায়গা পরিবর্তন করছে। অথবা ওষুধ প্রয়োগের পর কিছুক্ষণ পর্যন্ত পড়ে থাকে, পরে এটি উড়ে চলে যায়। এটা কেন হচ্ছে গবেষণা করার দরকার রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দুটি ইনসেক্টিসাইড ব্যবহার করছি— অ্যাডালসাইড আর লার্ভিসাইড। এখানে আমাদের কীটনাশক প্রয়োগের পদ্ধতিতে নজর দিতে হবে। কারণ কীটনাশক প্রয়োগ কতটুকু গতিতে হচ্ছে সেটি দেখতে হবে। যদি কীটনাশক প্রয়োগকর্মী দ্রুতগতিতে হেঁটে যায়, স্প্রে এরিয়া কাবার করবে না। আর মশা মরবে না। এ জন্য যে কর্মীরা কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ খুব জরুরি।’