ঢাকা ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমন ধান আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৩:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০২৩
  • ৯২ বার

আমন ধানের আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক। অথচ দেশে বোরোর পর আমন থেকেই চালের সবচেয়ে বড় জোগান আসে। আর আমন পুরোটাই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আবাদে খরচ কম লাগে। সাধারণত দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ কিংবা জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আর ওই সময়টা সামনে রেখেই কৃষক আমন রোপণের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এ বছর জুলাই প্রায় শেষ হলেও আশানুরূপ বৃষ্টির দেখা নেই। বরং তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ফলে দেশের আবাদি জমিগুলো প্রায় পানিশূন্য। প্রখর রোদে নষ্ট হচ্ছে বীজতলা। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে বিকল্প ব্যবস্থায় সেচের পানিতে আমনের চারা রোপণ করছেন। কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছর ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে রোপা আমন আবাদ হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩০০ হেক্টরে আর বোনা আমন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। মূলত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকেই এখনো আমন আবাদ করেনি। পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে তাদের বীজতলা। আবার বীজের বয়স বেশি হয়ে গেলে ফলন কমে যায়। পাশাপাশি দেরিতে আবাদ হলে রোগবালাই বেশি হয়। এ অবস্থায় আমন আবাদে কৃষকের সার ও কীটনাশকও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে। বর্তমানে নির্ধারিত সময়ে যারা চারা রোপণ করতে পেরেছেন তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে সেচের ওপর। তাছাড়া তীব্র গরমের কারণে শ্রমিকদের কাজে ধীরগতি এসেছে। সব মিলিয়ে আমন চাষে কৃষকের হাল খরচ, সেচ খরচ ও শ্রমিক খরচ বেশি পড়ছে। সূত্র জানায়, আমন সাধারণত দেরিতে আবাদ করলে ফসলে রোগবালাই বেশি হওয়ার শঙ্কা থাকে। বেড়ে যায় কীটনাশকের ব্যবহার। এর মধ্যে সেচ খরচ যুক্ত হলে সার্বিকভাবেই বৃষ্টিনির্ভর আমনে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে। সাধারণ জুন থেকে সেপ্টেম্বর চার মাসে বছরের প্রায় ৭১ ভাগ বৃষ্টিপাত হয়। জুলাইয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও চলতি মাসের এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৯ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। মাস শেষেও সে হার প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ কম হতে পারে। এর আগে জুনেও প্রায় ১৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়েও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছিল।  অথচ জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু গত বছর থেকে জুলাইয়ে বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক কম হচ্ছে। তবে গত বছর অবশ্য অক্টোবর ও নভেম্বরে বৃষ্টি হয়েছিল বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদে বৃষ্টি কম হলে তখন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এদিকে কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেরিতে আমন আবাদ করলে জাতের কারণে ফলন কমে যাওয়ার একটা শঙ্কা থাকে। মোট ধানের ৪০ ভাগের বেশি আমনে হয়। এখন আমন উৎপাদন কম হলে সমস্যা তৈরি হবে। ভারত চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। আবার শস্য চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বৈশ্বিকভাবেই খাদ্য নিয়ে শঙ্কা তৈরি রয়েছে। কারণ গম আমদানি কমে গেলে ভাতের ওপর চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৈরি হবে সংকট। সেজন্য কৃষককে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা ও সার্বিক সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। আর উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয় সেক্ষেত্রে আগে থেকেই নীতি গ্রহণ করা জরুরি।  অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, বৃষ্টিপাত না হলে ধান আবাদ বিলম্ব হতে পারে। এতে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তবে এখন সেচ দিয়ে যদি কৃষক ধান চাষ করেন তাহলে ফলন কম হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। এতে অবশ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তাছাড়া কৃষকদের মধ্যে কেউ আগে আবার কেউ পরে আবাদ করলে পোকামাকড়ের আক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাতে তখন সেচ ও কীটনাশক খরচ দুটোই বেড়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমন ধান আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

আপডেট টাইম : ১০:১৩:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০২৩

আমন ধানের আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক। অথচ দেশে বোরোর পর আমন থেকেই চালের সবচেয়ে বড় জোগান আসে। আর আমন পুরোটাই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আবাদে খরচ কম লাগে। সাধারণত দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ কিংবা জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আর ওই সময়টা সামনে রেখেই কৃষক আমন রোপণের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এ বছর জুলাই প্রায় শেষ হলেও আশানুরূপ বৃষ্টির দেখা নেই। বরং তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ফলে দেশের আবাদি জমিগুলো প্রায় পানিশূন্য। প্রখর রোদে নষ্ট হচ্ছে বীজতলা। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে বিকল্প ব্যবস্থায় সেচের পানিতে আমনের চারা রোপণ করছেন। কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছর ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে রোপা আমন আবাদ হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩০০ হেক্টরে আর বোনা আমন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। মূলত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকেই এখনো আমন আবাদ করেনি। পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে তাদের বীজতলা। আবার বীজের বয়স বেশি হয়ে গেলে ফলন কমে যায়। পাশাপাশি দেরিতে আবাদ হলে রোগবালাই বেশি হয়। এ অবস্থায় আমন আবাদে কৃষকের সার ও কীটনাশকও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে। বর্তমানে নির্ধারিত সময়ে যারা চারা রোপণ করতে পেরেছেন তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে সেচের ওপর। তাছাড়া তীব্র গরমের কারণে শ্রমিকদের কাজে ধীরগতি এসেছে। সব মিলিয়ে আমন চাষে কৃষকের হাল খরচ, সেচ খরচ ও শ্রমিক খরচ বেশি পড়ছে। সূত্র জানায়, আমন সাধারণত দেরিতে আবাদ করলে ফসলে রোগবালাই বেশি হওয়ার শঙ্কা থাকে। বেড়ে যায় কীটনাশকের ব্যবহার। এর মধ্যে সেচ খরচ যুক্ত হলে সার্বিকভাবেই বৃষ্টিনির্ভর আমনে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে। সাধারণ জুন থেকে সেপ্টেম্বর চার মাসে বছরের প্রায় ৭১ ভাগ বৃষ্টিপাত হয়। জুলাইয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও চলতি মাসের এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৯ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। মাস শেষেও সে হার প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ কম হতে পারে। এর আগে জুনেও প্রায় ১৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়েও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছিল।  অথচ জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু গত বছর থেকে জুলাইয়ে বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক কম হচ্ছে। তবে গত বছর অবশ্য অক্টোবর ও নভেম্বরে বৃষ্টি হয়েছিল বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদে বৃষ্টি কম হলে তখন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এদিকে কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেরিতে আমন আবাদ করলে জাতের কারণে ফলন কমে যাওয়ার একটা শঙ্কা থাকে। মোট ধানের ৪০ ভাগের বেশি আমনে হয়। এখন আমন উৎপাদন কম হলে সমস্যা তৈরি হবে। ভারত চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। আবার শস্য চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বৈশ্বিকভাবেই খাদ্য নিয়ে শঙ্কা তৈরি রয়েছে। কারণ গম আমদানি কমে গেলে ভাতের ওপর চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৈরি হবে সংকট। সেজন্য কৃষককে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা ও সার্বিক সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। আর উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয় সেক্ষেত্রে আগে থেকেই নীতি গ্রহণ করা জরুরি।  অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, বৃষ্টিপাত না হলে ধান আবাদ বিলম্ব হতে পারে। এতে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তবে এখন সেচ দিয়ে যদি কৃষক ধান চাষ করেন তাহলে ফলন কম হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। এতে অবশ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তাছাড়া কৃষকদের মধ্যে কেউ আগে আবার কেউ পরে আবাদ করলে পোকামাকড়ের আক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাতে তখন সেচ ও কীটনাশক খরচ দুটোই বেড়ে যাবে।