ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট কমে যাওয়া খুব সাধারণ একটি বিষয়। তবে খুব বেশিদিন প্লাটিলেট কম থাকেনা। পর্যাপ্ত যত্ন ও খাবারে দুএকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিকভাবে প্লাটিলেট বাড়তে থাকে। তাই ডেঙ্গু হলেই রক্ত দিতে হবে কিংবা প্লাটিলেট দিতে হবে বিষয়টি এমন নয়।
বর্তমানে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য অপ্রয়োজনে প্লাটিলেট দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের জোরাজুরিতেও প্লাটিলেট দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে সব কথার এক কথা, শুধুমাত্র প্লাটিলেট কমার কারণে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকদের মতে প্লাটিলেট কমার চাইতে, রক্তচাপ কমে যাওয়া ডেঙ্গু রোগীর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ জানিয়েছেন প্লাটিলেট কমে গেলেই যে রক্ত নিতে হবে এমনটা নয়। তিনি বলেন, ”ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্লাটিলেট কমে যাওয়াই একমাত্র সমস্যা নয় বরং শরীরের রক্তরস কমে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়াও পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিলে রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে।”
এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট দেয়ার কোন প্রয়োজন হয় না। রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায় খুব কম সময়ের জন্য – হয়তো দুই তিন দিন। এরপর নিজে থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে থাকে। তাই আমরা ঢালাওভাবে রক্ত নেয়ার পরামর্শ দেই না।”
তিনি বলেন, “যদি রোগীর রক্তক্ষরণ বেশি হয়, রক্তরস কমে যায়, হিমোগ্লোবিন কমে যায়, প্রেশার কমে যায় তাহলেই রক্ত দেয়ার কথা বলি।”
আবার অনেক সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা বেশি থাকলেও এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে পারে। যেকারণে রোগীর কোন পরিস্থিতিতে রক্ত দিতে হবে তা একমাত্র চিকিৎসকই নির্ধারণ করতে পারেন।
সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর জটিল রূপ নিলে বা রক্তক্ষরণ দেখা দিলে সেটাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। এক্ষেত্রে রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকেরা যেসব লক্ষণ দেখলে রক্ত নিতে বলেন, তার মধ্যে রয়েছে –
* প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ।
* ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ। ত্বকে বেগুনি রঙের ক্ষত দেখা দিবে।
* শরীরে লাল বা কালো র্যাশ দেখা দেয়।
* মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
* মুখ, মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।
* প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তপাত। কালো রঙের নরম পায়খানা হওয়া।
* ক্ষতস্থান থেকে বা কোথাও কাটলে অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হওয়া।
* অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ ও শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
রক্ত না নিয়ে স্বাভাবিক উপায়ে প্লাটিলেট বাড়াবেন কীভাবে?
সাধারণত সঠিক খাবারেই প্লাটিলেট বাড়ানো সম্ভব। কী খেলে দ্রুত প্লাটিলেট বাড়বে সেগুলো দেখে নিন এক নজরে।
কমলা/লেবু: লেবু, কমলা ও কমলার রস যেকোনো জ্বরেই ভালো কাজে আসতে পারে। কারণ এটিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিওক্সিডেন্ট। আর এই দুটি উপাদান ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে। এটি প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
ডাবের পানি: ডেঙ্গুর জ্বর হলে শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। এ সময় বেশি বেশি করে ডাবের পানি পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। কেননা ডাবে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি। এটিও প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
পেঁপে পাতার জুস: ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীর শরীরে প্লেটলেট কমে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তাই এ সময় আপনার উপকার করতে পারে পেঁপে পাতা। পেঁপে পাতায় পাপাইন এবং কিমোপেইনের মতো এনজাইম সমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করেতে পারে প্লেটলেটের পরিমাণও।
হলুদ: কাজে আসতে পারে হলুদও। এর জন্য আপনাকে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে হবে। এটি আপনাকে অতি দ্রুত সুস্থ্য করে তুলবে।
মেথি: ডেঙ্গু জ্বর হলে কাজে আসবে মেথি। এটি আপনাকে অতি সহজে ঘুমিয়ে যেতে সহায়তা করেবে। সেই সঙ্গে সহয়তা করবে অতিরিক্তমাত্রার জ্বর কমিয়ে আনতে। তবে মেথি গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরমার্শ করে নিতে হবে।
ব্রকোলি: ব্রকোলি হলো ভিটামিন কে’র একটি ভালো উত্স। অন্যদিকে ভিটামিন কে রক্তের প্লেটিলেট বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ। যদি কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন; তাহলে অবশ্যই বেশি করে ব্রকোলি খাবেন।
পালংশাক: পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আইরন এবং ওমেগো-থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এটি আবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেতে সহায়তা করে। এই শাকটি বেশি করে গ্রহণ করলে অতি দ্রুত প্লেটিলেট বৃদ্ধি পায়।
কিউইফল: কিউইফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এটিতে পটাশিয়ামও রয়েছে। এই ফলটি বেশি খাওয়ার ফলে ইলেক্ট্রোলাইট স্তর এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ফলটি খেলে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া টমেটো, বিট, সবুজ শাকসবজি, লাল আঙ্গুর, সবুজ-চা খাওয়া দরকার। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মটরশুটি, ছোলা, মসুর ডাল, ডিম, মাছ, কলিজা, দুধ, দই, কাজুবাদাম প্রোটিনের ভালো উৎস।