শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি তদারকির নির্দেশনা দিয়ে পাঠানো চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) নেতারা।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া এ দাবি জানান। একই দাবিতে আগামীকাল বুধবার (১৯ জুলাই) একই স্থানে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
বজলুর রহমান মিয়া বলেন, খবর পেলাম বিকেলে মাউশি থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে। অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা করছে। এটা আন্দোলন দমানোর ফন্দি। অবিলম্বে এ চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। আর যদি প্রত্যাহার না করা হয়, দুঃখ প্রকাশ না করা হয়- আগামীতে সারাদেশে সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক যদি রুখে দাঁড়াই এবং তাতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার এ কর্মকর্তাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, এ চিঠি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আপনারা কেউ ঢাকা ছাড়বেন না। এ চিঠির জন্য কারও (কোনো শিক্ষকের) চাকরি চলে গেলে মামলার পর মামলা, রিটের পর রিট করে দেখিয়ে দেবো। বিটিএ কারো রক্তচক্ষুকে পরোয়া করে না।
বিটিএ-এর এই নেতা বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা তো বহু শুনেছেন। আজ প্রমাণ দেখেন। কাল তারা আমাদের ডেকে মিটিং করলেন, মিঠা মিঠা কথা বললেন। আমরাও সহজভাবে নিলাম। দাবি জানিয়ে আসলাম। বলে আসলাম, সারাদেশের সব শিক্ষক ঢাকায় চলে এসেছেন। এ শিক্ষকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে ফিরে যাবেন না। তারা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বললেন না। আমরা চলে এলাম।
তিনি আরও বলেন, আজ তারা চুপিসারে এ চিঠি (অনুপস্থিতি তদারকিসহ ৫ দফা নির্দেশনা) বানিয়েছেন। এটাই হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এ চিঠি হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি দেখানোর কৌশলমাত্র। এ চিঠি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
আমরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি করি। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা, দেন-দরবার করে দাবি আদায় করা আমাদের কাজ। আমাদের রুটি-রুজি ও বৈষম্য দূর করতে আমরা যেকোনো কর্মসূচি করার অধিকার রাখি। এজন্য শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলেও সেই দায়ভার আমাদের ওপর বর্তায় না। এটা বর্তায় সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওপর, যোগ করেন এ শিক্ষক নেতা।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে মাউশি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত শিক্ষকদের তদারকিসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও স্থানীয় প্রশাসনকে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২৩ সাল থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন টিচিং-লার্নিং অ্যাপ্রোচে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন; যেমন- প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি বা গভর্নিং বডি, শিক্ষাপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সবার কার্যকর ও দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বা গভর্নিং বডি।
দৈনন্দিন শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে শিক্ষকের ও তা পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়মিত উপস্থিতি অপরিহার্য। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছেন। পাশাপাশি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডিরও কোনো ধরনের নজরদারি না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। ফলে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস নেওয়াসহ সার্বিক নজর দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি এ কার্যক্রমসহ শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ন করছে।