রোববার সকালে ঘড়ির কাঁটায় তখন ৮টা ছুঁই ছুঁই, বৃষ্টি ঝরছিল মুষলধারে। আষাঢ়ের এই বাদল দিনে ঢাকার রমনা পার্কে প্রাতঃভ্রমণে এসেছেন অনেকেই। ব্যায়াম করতেও দেখা গেল একদল মানুষকে।
কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রোজ সকালবেলা তারা এখানে আসেন। মশার কামড়ে তারা অভ্যস্ত, কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে আসতে ভয় কাজ করছে।
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা চৈতি রশিদ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা নিয়ে হাঁটছিলেন। বললেন, “হাঁটা অবস্থায় মশা কামড়ায় না, কিন্তু বসলে রক্ষা নাই। অনেকক্ষণ হাঁটার পর অনেকসময় হাত-পা ব্যথা করলে একটু মহিলা অঙ্গনে বসি। তখনই মশা ঘিরে ধরে। সেজন্য এখন চেষ্টা করি কষ্ট হলেও ওখানে না বসতে।
“মহিলা অঙ্গনে যদি আমরা ৫০ জনও থাকি, কাউকে না কামড়ালেও আমায় কেন যেন কামড়াবেই। আর রোদ থাকলে মশা একটু কম থাকে। এই যে আজ বৃষ্টি হল, দেখা যাবে যে এরপরই মশা বাড়বে আবার।”
দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে, আর মারা গেছেন ৬ রোগী। এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কার মধ্যে এই বছরে দিনে এত রোগী আর মৃত্যু আগে দেখা যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে শরীর চর্চা কি থেমে যাবে? উত্তর দিতে গিয়ে দিলু রোডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ চৌধুরী বললেন, “এখানে রোজ আসি আমি। এখানে যে মশা আছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। ওই যে অঙ্গনগুলো দেখছেন, ওখানে আমরা যারা এক্সারসাইজ করি, তারা কয়েল জ্বালাও। কয়েল না দিলে মশা ঘিরে ধরে।”
তবে কয়েল নিয়ে তো আর হাঁটা যায় না, প্রাতঃভ্রমণের সময় একটু জিরাতে গিয়ে যদি এইডিস মশা কামড় বসায়- সেই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে অনেকেরই।
কিন্তু বৃষ্টির জন্য হাঁটতে না পেরে তারা একটা ছাউনির নীচে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। জিজ্ঞেস করতেই মোরশেদুল বললেন, “আমার বাসার ছাদ, বারান্দা, গ্যারেজ সব পরিষ্কার। তাই বাসায় থাকলে আমায় ডেঙ্গুর ভয় লাগে না, কিন্তু পার্কে এলেই লাগে। তবুও আসি।
“তবে এখানে মশা আছে, সেটা তো সত্য। কিন্তু আমাদেরকে বেশি কামড়ায় না। কারণ আমরা হাঁটার ওপর থাকি। আমরা এখানে আসিই হাঁটতে। কিন্তু এই যে যারা এখানে গ্রুপ বেঁধে ব্যায়াম করেন, আড্ডা দেন, তারা ঝুঁকিতে।”
“এই বৃষ্টিতে ভিজলে আর কী হবে? বৃষ্টির চেয়ে বড় ভয় মশা। ওই বেঞ্চগুলোতে বসলে কামড় খাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া এই যে বিনগুলো, ঝোপঝাঁড়- ওগুলো মশার আখড়া।”
তবে শরীর চর্চাকারীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই সমাধানও খোঁজার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। তাদেরই একজন কামাল হোসেন তালুকদার। পেশায় সাংবাদিক এই ব্যক্তি নিয়মিতভাবে রমনায় হাঁটেন, তবে দুপুরে।
“এখানে সকালে এবং সন্ধ্যার আগে মানুষ বেশি হাঁটেন। আমরা জানি যে এই সময়টায় এইডিস মশা কামড় দেয়। এখন মানুষ তো জানে না যে কোনটা ডেঙ্গু, কোনটা না; তাই মানুষের মাঝে একটা আতঙ্ক কাজ করে।
“এখন ডেঙ্গুর সিজন চলছে। সেজন্য সকালে বা বিকালে হাঁটতে আরও বেশি ভয় লাগে সবার।”
বিকালে কাজের চাপ থাকে বলে হাঁটার জন্য দুপুরবেলা বেছে নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি এখন দুপুরে হাঁটি। তবে বিকালে অফিস না থাকলে সেসময় আমি রমনায়। অফিসে না এলেই হাঁটি। হাঁটাটা আমার শখ।”