ঢাকা ০৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিথ্যাবাদী রাখাল বালকের সমাজে বসবাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩১:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩
  • ১৭৬ বার

রফিকুল ইসলামঃ বিষয়টি টক অব দ্যা হাওরে পরিণত হয়েছে। এখনই পলিটিক্সের (রাজনীতি) পরিবর্তে পলিট্রিক্সকে (চালাকি) আবর্তিত করা শঠতা আর কপটতার অলিগলি পথ রুদ্ধ করা না গেলে এবং আলোকপাতের বিচ্ছিন্নতাবাদীর দুষ্কর্মের আস্ফালন ঠেকানো না গেলে হাওর সমাজে নৈরাজ্য ও জনবিভাজন অনিবার্য।

অকুস্থল কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা গোপদিঘী ইউনিয়নের ধলাই-বগাদিয়া দুটি গ্রাম। গত ২২/০৪/২০২৩ খ্রি. ঈদুল ফিতরের দিন ও ২৯/০৬/২০২৩ খ্রি. ঈদুল আজহার দিন অভিন্ন প্রেক্ষাপটে পরপর দুবার ঘটানো হলো একই ঘটনা।

তা যে আরও কতবার ঘটানো হয় জানিনে। তবে, এই মিথ্যাচার না আবার সেই ঈশপের গল্পের রূপায়ণ ঘটে।

এক রাখাল বালক মাঠে গরু চড়াতো। ভীষণ অবাধ্য ও দুষ্টু প্রকৃতির সে। এলাকাবাসীকে ধোঁকা দেয়ার খায়েশ চাপে তার মনে।

একদিন ‘বাঘ আমায় খেয়ে ফেললো’ বলে ডাকাডাকি ও চিৎকার জুড়ে দিলো সে। এতে এলাকাবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলো মাঠে।

কিন্তু কই বাঘ? সবাই বুঝল রাখাল মজা নিতে চালাকি করে ফাঁকি দিয়েছে। কি আর করা! ফিরে গেলো সবাই।

দ্বিতীয় দিনও রাখাল বালক এরূপ চিৎকার শুরু করে দিলো। এলাকাবাসী ছুটে এসে দেখলো বাঘ নেই। রাখালের ভাঁওতাবাজিতে বিরক্ত ও রুষ্ট হয়ে ফের ফিরে গেলেন তারা।

এসবে রাখাল বালক কিন্তু বেজায় মজা পেয়ে গেলো।

একদিন সত্যি সত্যিই বাঘ রাখাল বালককে আক্রমণ করলো। রাখাল বালক প্রাণভয়ে ‘বাঘ বাঘ’ আর ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার জুড়ে দিলো।

কিন্তু সেদিন কেউ এগিয়ে এলো না। সবাই ভাবলো, রাখাল বালক আবারও মজা করছে। ফলে রাখাল বালকের ঠাঁই হলো গিয়ে বাঘের পেটে।

সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে জানা যায়, এ ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী রাখাল বালক গল্পের উদগাতা নতুন বগাদিয়া গ্রামের জনৈক মো. নূরুল হক ভূঞা। তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার বায়বীয় অভিযোগ তুলে তাতে রাজনৈতিক রঙ মেখে তিনি নিজে এবং উপরমহল থেকে ফোন করিয়ে পুলিশকে বিভ্রম তথ্যে হয়রানি করছেন এবং বারবার জুজুর ভয় দেখিয়ে স্বীয় ইমেজ তৈরির ফায়দা লুটে জনসম্মুখে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

সূত্রটি বলছে, ওই দুই ঈদের দিন নূরু ভূঞা নিজে তারই ব্যক্তি মালিকানাধীন ধলাই-বগাদিয়া বাজারে বহিরাগত লোক জমায়েত করে সশস্ত্র মহড়া চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং অপরদিকে তিনি সাধু সেজে থানা পুলিশ ডেকে এনে এলাকাবাসীর কাছে তার শক্তিমত্তার জানান দিতে চাইছেন। তার এই ডবল স্ট্যান্ডার্ড চরিত্র লুকিয়ে একাধারে নাশকতা ও অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় তৎপর রয়েছেন। যা দিয়ে এলাকাবাসীর চোখে ধূলো এমনকি পুলিশ প্রশাসনকে পর্যন্ত বিভ্রান্ত করে চলেছেন।

সূত্রটি আরও বলছে, নূরু ভূঞা নোংরা রাজনীতে মেতে ওঠে সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে পুঁজি বানিয়ে সত্যকে দামাচাপা দিয়ে বরাবরই মিথ্যা ও অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট রয়েছেন। অত্র এলাকার সমাজে তার ভিলেজ হোয়াইট ক্রিমিনালগিরির একচেটিয়া দৌরাত্ম্যে দেখা দিয়েছে ন্যায়বিচারের তীব্র অভাব এবং সৃষ্টি হয়েছে প্রবল অসাম্য ও বিশৃঙ্খলা।

আসলে আমরা সেই মিথ্যাবাদী রাখাল বালকের সমাজেই বসবাস করছি। যিনি কিনা মিথ্যাবাদী রাখাল বালক সেজে তলে তলে হীরক রাজা ভগবান বনতে চাইছেন।

মোদ্দাকথা, সমাজে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই সমস্ত মিথ্যাবাদী রাখাল বালকদের থানার ভিসিএনবি’তে অন্তর্ভুক্ত করে ওয়াচে রাখার বিকল্প নেই। এছাড়া ওদের নিভৃত না করে জিইয়ে রাখা হলে রাজনীতিতে যেমন বিভাজন তৈরি হবে তেমনি সমাজব্যবস্থায়ও অরাজকতা ছড়িয়ে পড়বে। এতে একতা ও শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মিথ্যাবাদী রাখাল বালকের সমাজে বসবাস

আপডেট টাইম : ০৯:৩১:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

রফিকুল ইসলামঃ বিষয়টি টক অব দ্যা হাওরে পরিণত হয়েছে। এখনই পলিটিক্সের (রাজনীতি) পরিবর্তে পলিট্রিক্সকে (চালাকি) আবর্তিত করা শঠতা আর কপটতার অলিগলি পথ রুদ্ধ করা না গেলে এবং আলোকপাতের বিচ্ছিন্নতাবাদীর দুষ্কর্মের আস্ফালন ঠেকানো না গেলে হাওর সমাজে নৈরাজ্য ও জনবিভাজন অনিবার্য।

অকুস্থল কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা গোপদিঘী ইউনিয়নের ধলাই-বগাদিয়া দুটি গ্রাম। গত ২২/০৪/২০২৩ খ্রি. ঈদুল ফিতরের দিন ও ২৯/০৬/২০২৩ খ্রি. ঈদুল আজহার দিন অভিন্ন প্রেক্ষাপটে পরপর দুবার ঘটানো হলো একই ঘটনা।

তা যে আরও কতবার ঘটানো হয় জানিনে। তবে, এই মিথ্যাচার না আবার সেই ঈশপের গল্পের রূপায়ণ ঘটে।

এক রাখাল বালক মাঠে গরু চড়াতো। ভীষণ অবাধ্য ও দুষ্টু প্রকৃতির সে। এলাকাবাসীকে ধোঁকা দেয়ার খায়েশ চাপে তার মনে।

একদিন ‘বাঘ আমায় খেয়ে ফেললো’ বলে ডাকাডাকি ও চিৎকার জুড়ে দিলো সে। এতে এলাকাবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলো মাঠে।

কিন্তু কই বাঘ? সবাই বুঝল রাখাল মজা নিতে চালাকি করে ফাঁকি দিয়েছে। কি আর করা! ফিরে গেলো সবাই।

দ্বিতীয় দিনও রাখাল বালক এরূপ চিৎকার শুরু করে দিলো। এলাকাবাসী ছুটে এসে দেখলো বাঘ নেই। রাখালের ভাঁওতাবাজিতে বিরক্ত ও রুষ্ট হয়ে ফের ফিরে গেলেন তারা।

এসবে রাখাল বালক কিন্তু বেজায় মজা পেয়ে গেলো।

একদিন সত্যি সত্যিই বাঘ রাখাল বালককে আক্রমণ করলো। রাখাল বালক প্রাণভয়ে ‘বাঘ বাঘ’ আর ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার জুড়ে দিলো।

কিন্তু সেদিন কেউ এগিয়ে এলো না। সবাই ভাবলো, রাখাল বালক আবারও মজা করছে। ফলে রাখাল বালকের ঠাঁই হলো গিয়ে বাঘের পেটে।

সংশ্লিষ্ট থানা সূত্রে জানা যায়, এ ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী রাখাল বালক গল্পের উদগাতা নতুন বগাদিয়া গ্রামের জনৈক মো. নূরুল হক ভূঞা। তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার বায়বীয় অভিযোগ তুলে তাতে রাজনৈতিক রঙ মেখে তিনি নিজে এবং উপরমহল থেকে ফোন করিয়ে পুলিশকে বিভ্রম তথ্যে হয়রানি করছেন এবং বারবার জুজুর ভয় দেখিয়ে স্বীয় ইমেজ তৈরির ফায়দা লুটে জনসম্মুখে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

সূত্রটি বলছে, ওই দুই ঈদের দিন নূরু ভূঞা নিজে তারই ব্যক্তি মালিকানাধীন ধলাই-বগাদিয়া বাজারে বহিরাগত লোক জমায়েত করে সশস্ত্র মহড়া চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং অপরদিকে তিনি সাধু সেজে থানা পুলিশ ডেকে এনে এলাকাবাসীর কাছে তার শক্তিমত্তার জানান দিতে চাইছেন। তার এই ডবল স্ট্যান্ডার্ড চরিত্র লুকিয়ে একাধারে নাশকতা ও অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় তৎপর রয়েছেন। যা দিয়ে এলাকাবাসীর চোখে ধূলো এমনকি পুলিশ প্রশাসনকে পর্যন্ত বিভ্রান্ত করে চলেছেন।

সূত্রটি আরও বলছে, নূরু ভূঞা নোংরা রাজনীতে মেতে ওঠে সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে পুঁজি বানিয়ে সত্যকে দামাচাপা দিয়ে বরাবরই মিথ্যা ও অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট রয়েছেন। অত্র এলাকার সমাজে তার ভিলেজ হোয়াইট ক্রিমিনালগিরির একচেটিয়া দৌরাত্ম্যে দেখা দিয়েছে ন্যায়বিচারের তীব্র অভাব এবং সৃষ্টি হয়েছে প্রবল অসাম্য ও বিশৃঙ্খলা।

আসলে আমরা সেই মিথ্যাবাদী রাখাল বালকের সমাজেই বসবাস করছি। যিনি কিনা মিথ্যাবাদী রাখাল বালক সেজে তলে তলে হীরক রাজা ভগবান বনতে চাইছেন।

মোদ্দাকথা, সমাজে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই সমস্ত মিথ্যাবাদী রাখাল বালকদের থানার ভিসিএনবি’তে অন্তর্ভুক্ত করে ওয়াচে রাখার বিকল্প নেই। এছাড়া ওদের নিভৃত না করে জিইয়ে রাখা হলে রাজনীতিতে যেমন বিভাজন তৈরি হবে তেমনি সমাজব্যবস্থায়ও অরাজকতা ছড়িয়ে পড়বে। এতে একতা ও শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।