মদন (নেত্রকোণা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোণা মদন উপজেলার ফতেপুর ছত্রকোণা গ্রামের মৃত ফেরদৌস খাঁ’র ছেলে আলম খাঁ আদালতের রায় পাওয়ার পরও তার বসত বাড়িতে তাকে ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছেন না, রহিম উদ্দিন ও তার লাটিয়াল বাহিনী।
রোববার (১১ জুন) সরমিনে গেলে জানা যায়, আলম খাঁ’র পিতা ফেরদৌস খাঁ, ফতেপুর আগপাড়া’র নাগর মিয়ার নিকট হতে ১৯৭০ সালে সাফকাওলা দলিল মূলে ছত্রকোণা মৌজায় ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার দলিল নং- ২৯৪৪। বর্তমানে আলম খাঁ ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হয়ে বসত বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
আলম খাঁ’র পিতা মৃত্যুর পর উক্ত বসত বাড়ির দলিল খুঁজে না পেয়ে, ২০১৫ সালে নেত্রকোণা জেলা রেজিস্ট্রার অফিস হতে সইমুরী নকল উত্তলন করে দেখেন, দলিলে মৌজা, দাতা, গ্রহীতা, পরিমাণ, খতিয়ান, চৌহদ্দি ইত্যাদি ঠিক থাকলেও জমির দাগে ভুল রয়েছে।
দাতা নাগর মিয়া মৃত্যু বরণ করায় তার ওয়ারিশগন (মহিম উদ্দিন, মমিন উদ্দিন, মুখলেছুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন, হুমায়ুন) দাগ সংশোধনী দলিল দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তৃতীয় ব্যাক্তির মধ্যস্থতায় ২০১৭ সালের ৩০ জুন উপজেলার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে শালিশে বসলে, নাগর মিয়া’র ওয়ারিশানরা আলম খাঁ’র কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে বলেন, যদি টাকা না দাও তাহলে অন্যত্র জমি বিক্রি করে দিবো।
তাদের এই হুমকির ভয়ে আলম খাঁ ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলা চলাকালীন সময়ে মহিম উদ্দিন গং তাদের পক্ষের স্বাক্ষী রহিম উদ্দিন খানের কাছে ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে জমি বিক্রি করে দেয়। যার দলিল নং-১৯০৬। পরে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী দাগ সংশোধনের নির্দেশ দিয়ে আলম খাঁ’র পক্ষে আদালত রায় দেয়। এরই সুবাদে রহিম উদ্দিন খানের ১৯০৬ নং দলিল বাতিল বলে গণ্য হয়।
সংশোধিত তপছিল মোতাবেক ২৯৪৪ নং দলিলের ভূমির সি এস খতিয়ান নং- ৫৯, এস খতিয়ান নং- ৯৩, বি আর এস খতিয়ান নং- ২৫০, সি এস দাগ নং- ৩০২, এস এ দাগ নং- ৩০২, বি আর এস দাগ নং- ৪০৭, শ্রেণি- কান্দা, জমির পরিমাণ- ১০ শতাংশ।
পরবর্তীতে ৭৮/২০১৭ ও ২৯৭/২০১৯ নং মোকদ্দমার রায় ও ডিক্রির মোতাবেক খতিয়ান সংশোধন আদেশ রক্ষার্থে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে হাসনপুর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মতার তদন্ত সাপেক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহনূর রহমান স্বাক্ষরে ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর আলম খাঁ’র (মোঃ আলম) নামে নামজারি করা হয়। যার খারিজ খতিয়ান নং- ৩৫১ এবং তার নামে খাজনা গ্রহন করা হয়। যার হোল্ডিং নাম্বার- ৩৫১।
কান্না জরিত কন্ঠে আলম খাঁ বলেন, আমার বর্তমান প্রতিপক্ষ রহিম উদ্দিন খুব শক্তিশালী ও লাটিয়াল প্রকৃতির মানুষ। একমাত্র আল্লাহর বিশেষ রহমতে আমি এখন পর্যন্ত এই বাড়িতে ঠিকে আছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অযুহাতে আমার উপর হামলা-মামলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২২ সালের ২৮ মার্চ আমার উপর হামলা হয়। আমার স্ত্রী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলো। আমার মেয়েদের আর্থিক সহযোগিতায় আমার ভিটেতে পুরাতন ঘর ভেঙ্গে নতুন ঘর নির্মাণ করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু পুরাতন ঘর ভাঙ্গার পর নতুন ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না রহিম ও তার লাটিয়াল বাহিনী। পরিবারের লোকজন নিয়ে এখন আমার মেয়ের ঘরে বসবাস করছি। তিনি সংবাদ প্রতিনিধকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভাই গরীবের কোন বিচার নাই।
এ বিষয়ে রহিম উদ্দিন খান বলেন, আলমের পক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে আমি ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী আদালতে আপিল করেছি। দীর্ঘ দিন যাবৎ এই জমি আমার দখলে ছিলো। মাঝখানে কিছু দিন আমি অসুস্থ ছিলাম এবং ২০১৯ সালের ০৭ অক্টোবর হাসানপুর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার রিপোর্ট আমার পক্ষে থাকার পরও দেরিতে পৌঁছানোরা কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ, আমরা কোনো ঝগড়াঝাঁটিতে যাব না। বি আর এস রেকর্ডের মালিকদের কাছ থেকে আমি জমি কিনেছি। আমার বিশ্বাস, আদালত আমার প্রতি ন্যায় বিচার করবে।
এ বিষয়ে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, ছত্রকোণা মৌজায় উল্লেখিত ভূমি আলম খাঁ’র পক্ষে জোত সত্ব আছে মর্মে আদলতের আদেশ ও ডিক্রি হওয়ায়, আলম খাঁ’র নামে খতিয়ান খোলার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর সুপারিশ করি।