ঢাকা ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বছরে করোনার চেয়ে ৫ গুণ বেশি মৃত্যু হয় তামাকে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৯:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩
  • ৮৪ বার

দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সব মিলিয়ে ৩০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে দেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যা করোনায় মৃত্যুর চেয়ে ৫ গুণ বেশি। এমনকি তামাক ব্যবহারের চূড়ান্ত পরিণতিতে এক দিনেই প্রাণ হারাচ্ছেন সাড়ে ৪০০ মানুষ। এ অবস্থায় আগামী সংসদ অধিবেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব তথ্য জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুস সোবহান।

তিনি জানান, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নির্মিত করার ক্ষেত্রে এখনো সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত সংশোধনীটি আসন্ন সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে পাশ করে চূড়ান্ত করা হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. মু. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, তামাকে শুধু যে ফুসফুসে ক্যানসার হয় তা নয়, শারীরিক অন্য নানা সমস্যাও দেখা দেয়। বিশেষ করে সুপারি, গুল, জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন যেসব তামাক রয়েছে, সেগুলোর কারণে জিহ্বা ও ঠোঁটের ক্যানসার হয়।

তিনি বলেন, তামাকের এই ভয়াবহতা রোধে আমরা শক্তিশালী আইনে জোর দিচ্ছি। আমরা চাই আইনটিকে আরও শক্তিশালী ও জোরদার করা হোক। কারণ শুধু মানুষকে সচেতন করে কখনোই তামাকের ব্যবহার শতভাগ কমানো সম্ভব নয়। আমরা যদি কঠোর একটি আইন করে তামাক বন্ধ করতে পারি, তাহলে আমাদের সমস্যাগুলো ৮০-৯০ ভাগ প্রতিহত করতে পারব।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) বলেন, আমরা শুধু তামাকে ক্ষতির একটা আংশিক হিসাব দেখি। কিন্তু তামাকের প্রভাবে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হয়, সেটি আমরা হিসাব করি না। এমনকি সেই ক্ষতি হিসাব করার সক্ষমতাও আমাদের নেই। কিন্তু তামাক কোম্পানির পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান, সরকারের আয়ের কথা বলা হয়। কিন্তু এই আয়ের তুলনায় বরং ক্ষতিটাই যে বেশি হয়, সেটাকেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নতির ধারা বজায় রাখতে জনগণের সুস্থ থাকা জরুরি। অসুখ হলে কষ্ট, এর মধ্যে আছে অর্থনৈতিক কষ্ট, সামাজিক কষ্ট। অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাক। যারা জর্দা, তামাক খায়, তাদের ফুসফুস, মুখগহ্বরের ক্যানসার হয়।

অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে।
সেগুলো হলো-আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বছরে করোনার চেয়ে ৫ গুণ বেশি মৃত্যু হয় তামাকে

আপডেট টাইম : ১১:০৯:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সব মিলিয়ে ৩০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে দেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যা করোনায় মৃত্যুর চেয়ে ৫ গুণ বেশি। এমনকি তামাক ব্যবহারের চূড়ান্ত পরিণতিতে এক দিনেই প্রাণ হারাচ্ছেন সাড়ে ৪০০ মানুষ। এ অবস্থায় আগামী সংসদ অধিবেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব তথ্য জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুস সোবহান।

তিনি জানান, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নির্মিত করার ক্ষেত্রে এখনো সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত সংশোধনীটি আসন্ন সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে পাশ করে চূড়ান্ত করা হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. মু. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, তামাকে শুধু যে ফুসফুসে ক্যানসার হয় তা নয়, শারীরিক অন্য নানা সমস্যাও দেখা দেয়। বিশেষ করে সুপারি, গুল, জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন যেসব তামাক রয়েছে, সেগুলোর কারণে জিহ্বা ও ঠোঁটের ক্যানসার হয়।

তিনি বলেন, তামাকের এই ভয়াবহতা রোধে আমরা শক্তিশালী আইনে জোর দিচ্ছি। আমরা চাই আইনটিকে আরও শক্তিশালী ও জোরদার করা হোক। কারণ শুধু মানুষকে সচেতন করে কখনোই তামাকের ব্যবহার শতভাগ কমানো সম্ভব নয়। আমরা যদি কঠোর একটি আইন করে তামাক বন্ধ করতে পারি, তাহলে আমাদের সমস্যাগুলো ৮০-৯০ ভাগ প্রতিহত করতে পারব।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) বলেন, আমরা শুধু তামাকে ক্ষতির একটা আংশিক হিসাব দেখি। কিন্তু তামাকের প্রভাবে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হয়, সেটি আমরা হিসাব করি না। এমনকি সেই ক্ষতি হিসাব করার সক্ষমতাও আমাদের নেই। কিন্তু তামাক কোম্পানির পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান, সরকারের আয়ের কথা বলা হয়। কিন্তু এই আয়ের তুলনায় বরং ক্ষতিটাই যে বেশি হয়, সেটাকেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নতির ধারা বজায় রাখতে জনগণের সুস্থ থাকা জরুরি। অসুখ হলে কষ্ট, এর মধ্যে আছে অর্থনৈতিক কষ্ট, সামাজিক কষ্ট। অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাক। যারা জর্দা, তামাক খায়, তাদের ফুসফুস, মুখগহ্বরের ক্যানসার হয়।

অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে।
সেগুলো হলো-আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।