ঢাকা ১২:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পান নিয়ে বিপাকে চাঁদপুরের চাষিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩
  • ১১৪ বার

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় বহু বছর ধরেই বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। তবে বিদেশি পান বাজারে আসার কারণে স্থানীয় পানের বাজারমূল্যে হতাশ কৃষক। দাম কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পান চাষিরা। ফলে পান চাষে অনেকটা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি চাষিদের।

চাষিরা জানান, একই জমিতে একবার পান চাষ করলে ১৮-২০ বছর ওই জমিতে আর হাত দিতে হয় না। অর্থাৎ ওই জমিতে ১৮-২০ বছর পান পাতা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, একই জমিতে টানা ৫ বছরের বেশি রাখা ঠিক হবে না। এতে ফলন ভাল হবে না।

dhakapost

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হেক্টর এবং হাইমচর উপজেলায় ২১৯ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। এতে ৩ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন পান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

হাইমচর উপজেলার পূর্ব চর কৃষ্ণপুরের চাষি আব্বাস তালুকদার বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান আমল থেকে পান চাষ করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এখানে পান চাষ করে আসছি। আমার ৪৮ শতাংশ জমিতে আজ থেকে ৩২ বছর আগে চাষ শুরু করি। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো পান গাছের চারা রোপন করার প্রয়োজন হয়নি।

dhakapost

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের পান চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ ভারতীয় পান বাজারে আসার কারণে আমরা দাম কম পাচ্ছি। প্রতিদিন জনপ্রতি শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা ৮০০ টাকা দিতে হয়। সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় নিয়মিত। সেগুলোর দামও এখন বেড়ে গেছে।

চর কৃষ্ণপুরের আরেক চাষি আফাজ উদ্দিন বেপারী বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা চাষ করেছিল। তাই ধারাকাহিকতায় আমরাও পান চাষ করে আসছি। আমরা এই চাষ করেই সংসার চালাই। এক সময় পানের বাজার ভাল ছিল। তবে এখন ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পান এসে ব্যবসাটা নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া পান চাষে প্রযোজনীয় উপকরণের দামও বেশি। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দৈনিক হাজিরা ২-৩শ’ টাকা দিতাম। এখন তাদের দৈনিক ৮০০ টাকার বেশি দিতে হয়। এক কেজি খৈলের দাম ৬০ টাকা। এক ক্রাউন চটির দাম ১৪শ’ টাকা। এ সমস্ত হিসেব মিলিয়ে লাভ হয় না। পূর্বপুরুষরা এই চাষ করে আসছে বিধায় আমরাও করছি।

dhakapost

আরেক চাষি মিয়া তালুকদার বলেন, মাটি ভালো হলে পানের খোলা টিকে যায়। তা না হলে পান চাষে লোকসান হয়। আমার পানের খোলার বয়স আঠারো বছর হয়েছে। ভারত, বরিশাল ও চট্টগ্রামের পানের চেয়ে চাঁদপুরের পান অনেক সুস্বাদু। তবে ভারতের পানের কারণে লোকসানে আছি। কারণ তাদের পান সস্তা। দাম কম বিধায় চলে বেশি। এলসি মাধ্যমে বিভিন্ন পন্যের সঙ্গে তাদের পান আসে বলে দাম কমে বিক্রয় করতে পারে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি বিধায় আমাদের পানের দাম একটু বেশি হয়।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ২৩৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়ে থাকে। হাইমচর ও ফরিদগঞ্জে পানের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এই চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা মনে করি এই ফসলটা যদি আরও থাকে তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে। একই জমিতে ৫ বছর অন্তর অন্তর পানের গাছ পরিবর্তন করতে হবে। যাতে মাটির উর্বরতা ও পান গাছের রোগ বালাই কম হয়। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পান নিয়ে বিপাকে চাঁদপুরের চাষিরা

আপডেট টাইম : ০৮:১৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় বহু বছর ধরেই বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। তবে বিদেশি পান বাজারে আসার কারণে স্থানীয় পানের বাজারমূল্যে হতাশ কৃষক। দাম কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পান চাষিরা। ফলে পান চাষে অনেকটা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি চাষিদের।

চাষিরা জানান, একই জমিতে একবার পান চাষ করলে ১৮-২০ বছর ওই জমিতে আর হাত দিতে হয় না। অর্থাৎ ওই জমিতে ১৮-২০ বছর পান পাতা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, একই জমিতে টানা ৫ বছরের বেশি রাখা ঠিক হবে না। এতে ফলন ভাল হবে না।

dhakapost

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হেক্টর এবং হাইমচর উপজেলায় ২১৯ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। এতে ৩ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন পান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

হাইমচর উপজেলার পূর্ব চর কৃষ্ণপুরের চাষি আব্বাস তালুকদার বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান আমল থেকে পান চাষ করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এখানে পান চাষ করে আসছি। আমার ৪৮ শতাংশ জমিতে আজ থেকে ৩২ বছর আগে চাষ শুরু করি। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো পান গাছের চারা রোপন করার প্রয়োজন হয়নি।

dhakapost

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের পান চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ ভারতীয় পান বাজারে আসার কারণে আমরা দাম কম পাচ্ছি। প্রতিদিন জনপ্রতি শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা ৮০০ টাকা দিতে হয়। সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় নিয়মিত। সেগুলোর দামও এখন বেড়ে গেছে।

চর কৃষ্ণপুরের আরেক চাষি আফাজ উদ্দিন বেপারী বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা চাষ করেছিল। তাই ধারাকাহিকতায় আমরাও পান চাষ করে আসছি। আমরা এই চাষ করেই সংসার চালাই। এক সময় পানের বাজার ভাল ছিল। তবে এখন ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পান এসে ব্যবসাটা নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া পান চাষে প্রযোজনীয় উপকরণের দামও বেশি। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দৈনিক হাজিরা ২-৩শ’ টাকা দিতাম। এখন তাদের দৈনিক ৮০০ টাকার বেশি দিতে হয়। এক কেজি খৈলের দাম ৬০ টাকা। এক ক্রাউন চটির দাম ১৪শ’ টাকা। এ সমস্ত হিসেব মিলিয়ে লাভ হয় না। পূর্বপুরুষরা এই চাষ করে আসছে বিধায় আমরাও করছি।

dhakapost

আরেক চাষি মিয়া তালুকদার বলেন, মাটি ভালো হলে পানের খোলা টিকে যায়। তা না হলে পান চাষে লোকসান হয়। আমার পানের খোলার বয়স আঠারো বছর হয়েছে। ভারত, বরিশাল ও চট্টগ্রামের পানের চেয়ে চাঁদপুরের পান অনেক সুস্বাদু। তবে ভারতের পানের কারণে লোকসানে আছি। কারণ তাদের পান সস্তা। দাম কম বিধায় চলে বেশি। এলসি মাধ্যমে বিভিন্ন পন্যের সঙ্গে তাদের পান আসে বলে দাম কমে বিক্রয় করতে পারে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি বিধায় আমাদের পানের দাম একটু বেশি হয়।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার ২৩৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়ে থাকে। হাইমচর ও ফরিদগঞ্জে পানের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এই চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা মনে করি এই ফসলটা যদি আরও থাকে তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে। একই জমিতে ৫ বছর অন্তর অন্তর পানের গাছ পরিবর্তন করতে হবে। যাতে মাটির উর্বরতা ও পান গাছের রোগ বালাই কম হয়। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি।