কর ফাঁকি ঠেকাতে বাজেটে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। করের আওতার বাইরে থাকা সামর্থ্যবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতেও বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভুল তথ্য দেয়ার জন্য বড় অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি এবার সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যদিকে কর আদায়কারী কর্মকর্তা বিশেষত উপকর কমিশনারদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বাড়ানো হয়েছে।
সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ভুল তথ্য দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। অবৈধ বিদেশি নাগরিকের নিয়োগকর্তা, মিথ্যা অডিট রিপোর্ট দিলে জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডের বিধান আনা হয়েছে। বিদেশি লেনদেনের তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হলে জরিমানা গুণতে হবে।
অর্থ আইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে ২৫টি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির টিআইএন (কর সনাক্তকরণ নম্বর) যাচাই করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে টিআইএন যাচাই না করে সেবা দিলে ওই প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
এখন থেকে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিল করা করদাতাদের সব রিটার্নের তথ্য উপ-কর কমিশনার চাইলে যাচাই করতে পারবেন। এসব রিটার্নে কোন গাণিতিক ভুলের মাধ্যমে কর ফাঁকি দেয়া হলে অর্থ আদায়ে ডিমান্ড নোটিস জারি করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোন ধরনের ভুল তথ্যের মাধ্যমে কর রেয়াত বা অব্যাহতি নিলেও তাদের কাছে নোটিস পাঠিয়ে অর্থ দাবি করতে পারবেন।
বর্তমানে বছরে প্রায় ১২ লাখ ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। এসব রিটার্নের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হতো। সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে করদাতারা নিজেই নিজের সম্পদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে থাকেন। এর উপর তারা প্রযোজ্য হারে আয়কর দিয়ে থাকেন। এটি করা হয়েছে করদাতাদের হয়রানি কমানোর জন্য। প্রস্তাবিত বাজেটে যে উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে তা এই নীতির সঙ্গে বেমানান বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, দেশে অনেক অবৈধ বিদেশি বস্ত্রখাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এমন হাজার হাজার অবৈধ বিদেশি নাগরিক মোটা অঙ্কের বেতন পেলেও সরকার তাদের কাছ থেকে কোন কর পাচ্ছে না। অন্যদিকে তাদের একটি অংশ জঙ্গিবাদের বিস্তারসহ নানামুখী অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এখন থেকে বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদনহীন এসব নাগরিকের নিয়োগকর্তা ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুণতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোন অবৈধ কর্মীকে পাওয়া গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় করের অর্ধেক জরিমানা দিতে হবে। এ অর্থ ৫ লাখ টাকার কম হতে পারবে না। সেই সঙ্গে ওই নিয়োগকর্তা ব্যক্তিকে ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ডও দেয়া হবে।
কোন প্রতিষ্ঠানের মিথ্যা অডিট রিপোর্ট পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে। সেই সঙ্গে ৩ মাস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও থাকছে।
আন্তর্জাতিক লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষত বহুজাতিক কোম্পানির আন্তর্জাতিক লেনদেনের বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে ওই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় করের ২ শতাংশ জরিমানা আরোপ হবে। অন্যদিকে করের আওতা বাড়াতে এবারের বাজেটে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাত্ কোন শিক্ষার্থীকে এ ধরনের স্কুলে ভর্তি করতে হলে বাবা-মা আয়করের আওতায় আসবেন।
এনবিআরের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে ইত্তেফাককে বলেন, মূলত আয়কর খাতে শৃঙ্খলা আনা ও ফাঁকি রোধের স্বার্থে আইনে এবার এসব নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে ফাঁকি বন্ধ হবে, কর আদায় বাড়বে। তবে বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন, এর ফলে হয়রানি বাড়বে। করদাতাদের মনে ভীতির সঞ্চার ঘটবে।