ড. গোলসান আরা বেগমঃ নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারী সমাজকে অন্ধকার কুটুরী থেকে টেনে বের করে এনেছিলো আলোর দুয়ারে। নারীকে দেখিয়েছিলো সূর্যের মুখ, স্বাধীনতার শুবিশাল আকাশ।শুনিয়েছিলো নারী মুক্তির গান। হাতে তুলে দিয়েছিলো নারী জাগরণের অগ্নিশিখা। মাতৃতান্ত্রীক সমাজব্যবস্থা বিলুপ্তির পর নারীর ক্ষমতায়ন তলানীতে গিয়ে পৌঁছে।নারীর উপর নেমে আসে বিভিন্ন ঝুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, অবমূল্যায়ন। নারী জন্ম নেওয়া বা দেয়া যেন একটা মহা পাপ। নারী বয়ে বেড়ায় নীপিড়নের অর্ন্তজালা। নারীর জীবনে সুখের ঝলকানি দেখা দিলেও স্থায়ী হয় না।
হাজার বছরের অবরুদ্ধ দ্বার খুলে,বতর্মান সমাজে নারীরা বহু নীপিড়নের পর হাত খুলে, মুখ তুলে দাঁড়িয়েছে। বুঝতে পেরেছে- আর নারীর মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গতে দেয়া যাবে না। সে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে কোমড় সোজা করে দাঁড়াবার জন্য করছে অঙ্গিকার। সে শিক্ষায় এগিয়েছে বহু দুর।এখন কুয়ার ব্যাঙ নয়। উত্তর দক্ষিনে এমন কি মহাশুণ্যে বাড়িয়েছে তার বিচরণের পরিধি। তার মৌলিক অধিকার রক্ষায় হয়েছে সচেতন। শুধু চূল বাঁধে আর রাঁধে না। চার হাত পা এগিয়ে দিয়ে ভাঙ্গে প্রতিদিনের আলো ছায়া।
আজকাল গ্লোবাল বিশ্ব অঙ্গনে পিছিয়ে নেই নারী সমাজ,বরং যুদ্ধবাজ বিশ্বে কূটষঢ়যন্ত্রেও রাখছে মেধার প্রতিফলন। শান্তির মাথায় হাত রেখে বলছে – হে মানবতা মানুষের হৃদ মাজারে শান্তি পৌঁছে দাও। জাতে মতে ভেদাভেদ ভুলে যাও। নারী পুরুষে সমাধিকার করো প্রতিষ্টিত। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক মানবীয় দৃস্টি ভঙ্গির পরিবর্তন। বদলাতে হবে নারীর প্রতি সহৃদয়তা।নারীও মানুষ এই স্বীকৃতি দিতে হবে মানবতায়, বুদ্ধি বিবেচনায়,রাস্ট্রীয় পরিচানার মূল কাঠামোতে।
কর্মের সকল স্তরেই নারী করছে নিজেকে সম্পৃক্ত। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য করছে প্রাণপন চেষ্টা।তারপরও নারী শিক্ষায়,দীক্ষায়,অর্থে, ক্ষমতায় যত বড় লাট বাহাদুর হউক না কেন, নারীর স্নায়ুবিক,মানুষিক, শারীরিক নিরাপত্তা নেই।চারপাশ থেকে একগুচ্ছ সাপ দাঁড়িয়ে থাকে ধংশন করার জন্য। ঘরে, বাইরে, যাত্রা পথে ফণা তুলে রাখে। হাতে মারবে না ভাতে মারবে খোঁজতে থাকে সে রাস্তা। হউক সে আপন স্বজন বা জঠর নিসৃত সন্তান।
হাত পোড়ে ভাত রেঁধে খেতে দেয় বলে, রাতের বিছানায় যৌন দাসী হিসাবে ঘুমুতে দেয়। ঘর দোয়ার পাহাড়া দেয়,সন্তান লালন পালন করে,হাড়িপাতিল সাজায়,
ফুলের টবে পানি দেয়,সন্তান উৎপাদন করে, দশ আঙ্গুল প্রসারিত রাখে সুখের ঘি বিলিবন্টনে,তারপরও কারো মন পাইলেও স্নেহ আদর পায় না, বিনিময় হয় না ঠোঁটের হাসি কান্না। কিন্তু কেন? সেওতো সৃস্টির সেরা জীব, সমাজের অংশিদার। তার অনুপস্থিতে পৃথিবীর জীবন ব্যবস্থা থমকে দাঁড়াবে। তা সবার বিবেচনায় বোধগম্য থাকা দরকার।
ঘরে বাইরে সারাক্ষণ মানিয়ে চলতে হয় বা আতঙ্কে থাকতে হয়। পান থেকে চুন খসলে রক্ষে নেই। গুম করে ফেলে।বিচার চাইবে বা পাইবে, সে তো লম্বা চওড়া কাহিনী। নারীর পক্ষে সচারাচর কেউ দাঁড়াতে চায় না। মামলা ট্রায়ালে ওঠলেও তারিখ বদল করতে করতে কেয়ামতের কাছে পৌঁছে যায়।আবার বিচারের রায় হলেও প্রায় ক্ষেত্রেই কার্যকর হয় না।বরং আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে মওকুফ পেয়ে যায়।এ কেই বলে নারী ভাগ্যের বিড়ম্বনা।
নারীকে শক্ত ভীতের উপর প্রতিষ্টিত করার জন্য তৈরী করা হয়েছে নানা ধরনের নিয়ম কানুন, শুধু তৈরী নয় তা বাস্তবায়নও হচ্ছে।নারীরা আজকাল মুক্ত আলো বাতাসে মুক্তির স্বাদ গ্রহন করছে। দেশ পরিচালনা, যুদ্ধ জয়, নভেল জয়,হিমালয় বিজয় নারীর নখদর্পনে চলে এসেছে। সিওডসনদ,নারীউন্নয়ন নীতি,পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, মানবাধিকার আইন নারীর অগ্রযাত্রায় মাইল ফলক হিসেবে কাজ করছে। তাছাড়াও বিভিন্ন এনজিও ফোরাম, রাস্ট্রীয় নীতি নির্ধারনী কাঠামো নারীকে অগ্রযাত্রায় অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত নারীরাও কর্মে,ধর্মে,ব্যবসা বানিজ্যে,সমাজ সেবায়,প্রশাসনিক কাজে,মানানসই আড্ডায় এগিয়ে রাখছে কর্মের হাত পা।
কোন একজন নারী যদি নাক কান খুলা রেখে চলে, কিছুটা নিয়ম কানুন বুঝে।তা হলে তার মাথার উপর কাক চিল উড়তে থাকে।অবদমন করার জন্য,বেকায়দায় ফেলার জন্য নানা কূট ষঢ়যন্ত্র চলতে থাকে। অযতাই অপমান অপদস্ত হতে থাকে। অফিসের বস, ঘরের গৃহকর্তা সবার চোখ রাঙানী সহ্য করতে হয়। এসব তথ্য সবার জানা আছে, তারপরও নারীকে ঠিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্ত ভীত তৈরী করা যাচ্ছে না।
সবার মনে রাখা দরকার — শান্তির শ্বেত কবুতর সবার ঘরে ঘরে পেতে হলে, নারীকে পা রাখার শক্ত ভীত তৈরী করতে হবে, নারী পুরুষ সবার যৌত তৎপরতায়। হাতের ময়লা ধুয়ে ফেলা যাবে, কিন্তু নারীকে কোন অঙ্গন থেকেই বাদ দেয়া যাবে না। অদুর ভবিষ্যতে শান্তির বাহক হয়ে নারী করবে সকল কালিমা দূর।
লেখকঃ উপদেষ্ঠা সদস্য ,বাংলাদেশ কৃষকলীগ,কেন্দ্রীয় কমিটি।