কৃষকের মাঝে সারের হাহাকার বেশ পুরোনো খবর। কৃষিনির্ভর এদেশে সারের অভাবে ব্যহত হতো উৎপাদন। সারের জন্য কৃষকের জীবন বিসর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। সেই দেশে এখন আর নেই সারের কমতি। অতি সস্তায় মিলছে বিভিন্ন ধরনের সার। গেল ১৪ বছরে সারের দাম কমেছে। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ পর্যন্ত।
বর্তমান সরকার সারের মূল্য কয়েক দফায় কমিয়ে প্রতিকেজি টিএসপি ৭২ শতাংশ কমে ৮০ টাকা থেকে ২২ টাকায় নেমে এসেছে। এমওপি ৭৮ শতাংশ কমে প্রতিকেজি ৭০ টাকা থেকে হয়েছে ১৫ টাকা, ডিএপি ৮২ শতাংশ কমে ৯০ টাকা থেকে কমে এসেছে ১৬ টাকায়। এক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে গিয়ে ইউরিয়া সার ৭৫ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে কৃষকের নিকট ২২ টাকা দরে সরবরাহ করছে সরকার। যদিও সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী সারের দামের বৃদ্ধির কারণে প্রতিকেজি সার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সারের এ পরিমাণ দাম কমে যাওয়ায় দেশব্যাপী কৃষি উৎপাদনের হার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষকদের মাঝে কৃষি পণ্য উৎপাদনের প্রবণতা।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯’ প্রণয়ন করে সার ব্যবস্থাপনা সংস্কারের উদ্যাগ গ্রহণ করে। যার ফলে কৃষকের দোরগোড়ায় সার প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং ভোগান্তির অবসান ঘটে। এর ফলে ফসল উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য আসে। এ উৎপাদন অব্যহত থাকলে বৈশ্যিক যেকোনো সংকট মোকাবেলা করে দেশের কৃষি পণ্যের ঘাটতির আশঙ্কা থাকবে না।
খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন
সরকারের কৃষি বিভাগ বলছে, সার সুবিধা দেওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টনে উন্নিত হয়েছে। ২০০৯ সাল হতে বর্তমানে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮ গুণ, আলু ২ গুণ, ডাল ৪ গুণ, তেলবীজ ২ গুণ, সবজি ৭ গুণ ও পেঁয়াজ ৫ গুণ। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চাল ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য় স্থানে
সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে ৩য় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে ৩য়, পেঁয়াজ উৎপাদানে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে রয়েছে। করোনার কষাঘাত মোকাবিলায় দেশের কৃষিখাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় সচেষ্ট রয়েছে।
পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনে বড় সাফল্য
পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনে কৃষককে বিনামূল্যে বীজ, সার, নেট, পানির পাত্র ইত্যাদি উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। মোট ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৪০০টি বাগান স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। এর মধ্যে ২ লাখ ৫২ হাজার ৯৬ টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে।
দেশের কৃষির উন্নতি ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন অধিক ফলনশীল ও কাঙ্ক্ষিত গুণাগুণ সম্পন্ন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকার। গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, গবেষণা অবকাঠামোর উন্নয়ন, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি, দেশে বিদেশে বিজ্ঞানীদের উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে বিগত ১৪ বছরে বৈরি পরিবেশেও সহনশীল জাতসহ মোট ৬৯০টি উন্নত বা উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ফসলের লবণাক্ত সহনশীল ৪১টি, জলমগ্নতা সহনশীল ৬টি ও খরা সহনশীল ২৯টি জাত আছে যার উৎপাদনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও ভারসাম্যতা অর্জিত হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ বলছে, ভোজ্য তেলের আমদানি কমে ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ৩ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যা আগামী ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরিষার আবাদ এলাকা ছিল ৬ দশমিক ১০ লাখ হেক্টর। বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরিষার আবাদ এলাকা ৮ দশমিক ১২ লাখ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। ফলে প্রায় ৩৩ শতাংশ সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।-কালের কণ্ঠ।