ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইডেন মহিলা কলেজে সিট বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নানা অজুহাতে ছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। মৌখিকভাবে ছাত্রীরা বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও তারা লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।
অভিযোগ আছে, হলে সিট বরাদ্দের নীতিমালায় কী আছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ছাত্রলীগ নেত্রী হলে ওঠানোর সময় ছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে থাকে। এছাড়া আজ এই অনুষ্ঠান, কাল ঐ অনুষ্ঠান উপলক্ষে চাঁদা তো আছেই। এখন আবার যোগ হয়েছে হলে ওঠা ছাত্রীদের বৈধতার অজুহাতে টাকা আদায়। নেত্রীর সাফ বক্তব্য হলে বৈধতা দেয়ার জন্য এখন তিন হাজার টাকা করে দিতে হবে।
শনিবার রাতে হলে হলে গিয়ে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাত জাহান অর্চি রাত ১০টার মধ্যে টাকা দেয়ার সময় বেধে দেয়। তার হুংকারে সাধারণ ছাত্রীরা একদিন সময় বাড়িয়ে নেন। এর আগে বৈধতার অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি মাঝে মধ্যে ঘটলেও গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি রুটিনে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে নানা অপকর্মের জন্য ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ কমিটিকে স্থগিত করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু তাদের কার্যক্রম থেমে নেই। তারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সব কাজই করছে ছাত্রলীগের নামে। এটা যেন দেখারও কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইডেন মহিলা কলেজের ছয়টি হলের সব কটিতেই সিট দেয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। সাধারণ কোনো ছাত্রী হলে উঠতে চাইলে তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে হলে উঠতে হয়। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ এখানেই শেষ নয়। মোটা অংকের টাকা দিয়ে হলে উঠার পর সিটের বৈধতা দেয়ার জন্যও টাকা দাবি করা হয়।
ভুক্তভোগী একাধিক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শনিবার সন্ধ্যায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাত জাহান অর্চি রাজিয়া হলের বিভিন্ন রুমে গিয়ে ছাত্রীদের হলে বৈধতা দেয়ার অজুহাত দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছে আরও তিন হাজার টাকা করে দাবি করেন। রাত দশটার ভিতরে টাকা না দিলে হল থেকে বের করে দেয়ারও হুমকিও দেয় ছাত্রলীগ নেত্রী নামধারী ওই নারী। এসময় অর্চি তার দলবল নিয়ে রুমে রুমে ঢুকে একটা ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। ছাত্রীদের গালাগাল করে।
কয়েকজন ছাত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, হলে ওঠার সময় মোটা অংকের টাকা দেয়ার পরও বৈধতা দেয়ার অজুহাতে সে আরও তিন হাজার টাকা দাবি করছে। হল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানালেও তারা এগিয়ে আসছে না। আমরা রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছি তাদের অত্যাচারে। পরে সাধারণ ছাত্রীদের অনুনয় বিনয়ে একদিনের সময় দেয়া হয়। তবে যাওয়ার সময় বলে যায়, রবিবার সকালের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে ইডেনের ক্যাম্পাসে কি করে থাকিস দেখে নেবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রী বলেন, আমি অর্চি আপুকে হলে ওঠার সময় ১৪ হাজার টাকা দিয়ে হলে উঠেছি। তখন কিন্তু বৈধতার কথা বলা হয়নি। এখন এই অত্যাচার কী সহ্য হয় বলেন?
এর আগে ২০১৩ সালে ইডেনের রাজিয়া হলে অর্চির রুমে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইমের অবস্থান নিয়ে তখন তোলপাড় হয়েছিল। ঐ সময় হলের অন্য ছাত্রীরা অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিল। অভিযোগের কপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে ইসরাত জাহান অর্চি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রীদের হলে বৈধতা কিংবা বের করে দেয়ার আমি কে। এগুলো শুধুই অভিযোগ। আপনি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই না’
এব্যাপারে জানতে চাইলে রাজিয়া হলের হোস্টেল সুপার কামরুন নাহার ঢাকাটাইমসকে বলেন, কেউ আমার কাছে এমন অভিযোগ করে নাই। আমি রাত দশটা পর্যন্ত হোস্টেলেই ছিলাম। অভিযোগ করা হলে এর বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিব।