একের পর এক নাটকীয় পরিবর্তন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে। শিবির ক্যাডার গুন্নুকে গ্রেফতারের পর বলা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি জড়িত রয়েছে। সেই জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে শিবির ক্যাডার গুন্নু।এরপর গ্রেফতার করা হয়েছে ফুটেছে দেখা দাড়িওয়ালা এক জঙ্গিকে। তাকে মিতু হত্যাকাণ্ডের হোতা বলা হয়েছে। এরপর ফুটেজে দেখা আরেক ভাড়াটিয়া হত্যাকারী রবিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বলা হচ্ছে ‘মূল হোতা’।
তবে এখনে আসল রহস্য বের হয়নি তাও বলা হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে।মূল হোতা গ্রেফতার হলে কেন আসল রহস্য বের হচ্ছে না এ নিয়ে দেখা দিয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন। তাহলে মিতু হত্যাকাণ্ডের আসল হোতা কে? চারিদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে এ প্রশ্নের। অবশ্য সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও ইতিমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাকে এখানে স্থলভিষিক্ত করা হয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো.কামরুজ্জামানকে।
এছাড়াও মিতু হত্যা মামলার তদন্তে সহায়তার জন্য পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে সিএমপি।রোববার ১২ জুন দুপুরে সিএমপিতে এক সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) একেএম শহীদুল হকের উপস্থিতিতে পাঁচটি কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ পাঁচটি কমিটি হচ্ছে, অভিযান, আসামিকে জেরা, কেস ডকেট পর্যালোচনা, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ।প্রতিটি কমিটিতে সর্বনিম্ন পাঁচজন থেকে সর্বোচ্চ নয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। নগর পুলিশ ও বিভিন্ন থানার দক্ষ এবং চৌকস কর্মকর্তাদের এসব কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, এর আগে কখনো জঙ্গিদের সন্দেহ, কখনও শিবির, আবার কখনো স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এসব বিষয়গুরো খোদ পুলিশের মধ্যেও ধুম্রজালের সৃষ্টি করেছে।শিবির নেতা গুন্নুকে গ্রেফতারের পর গ্রেফতার করা হল দেলোয়ার নামের দাড়িওয়ালা এক জঙ্গিকে। তাকে বলা হয়েছে সেই পরিকল্পনাকারী। ফুটেজ দেখে রবিনকে গ্রেফতার করার পর বলা হয়েছে সেই ‘মূলহোতা’। এরপর আবার সিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আসল হোতাকে এখনো গ্রেফতার হয়নি।তাহলে সবার প্রশ্ন আসল হোতা কে?
এদিকে স্বর্ণ চোরাচালানি মাফিয়াদের ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।অথচ এর আগে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি রাতে নগরীর কোতয়ালি থানার রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাহার মার্কেটের ছয়তলার দুটি কক্ষ থেকে তিনটি লোহার সিন্দুক জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।এর মধ্যে একটি সিন্দুকে আড়াইশ স্বর্ণের বার এবং আরেকটিতে নগর ৬০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। ওই স্বর্ণ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে একটি চোরাচালানি মাফিয়া সিন্ডিকেটের তথ্য পান বাবুল আক্তার।ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারে কার্যক্রমও শুরু করেছিলেন বাবুল আক্তার। স্বাভাবিকভাবে চোরাচালানি মাফিয়াদের হাত অনেক লম্বা হয়।তারা বাবুল আক্তারের উপর সংক্ষুব্ধ ছিল। তারাই ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তদন্ত হচ্ছে। এদিকে কিছু দিন আগে চট্টগ্রামের জেএমবি প্রধান জাবেদকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।কারণ জাবেদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে অপরেশন হয়।
এদিকে রোববার চট্টগ্রামে এসে মিতু হত্যা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।এ বিষয়টি তদন্ত শেষে বলা যাবে। সারাদেশে এ পর্যন্ত যত গুপ্ত হত্যা হয়েছে এসব হত্যার সঙ্গে জেএমবির সম্পৃক্ততা রয়েছে। মিতু হত্যার ওই সব হত্যার মধ্যে সাদৃশ্য কম।তবে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের মানষের হৃদয় জয় করেছিল। যারা তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে তাদের রেহাই হবে না।
মিতু হত্যার ব্যাপারে নগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জানান, পুলিশের চ্যালেঞ্জ মিতু হত্যাকাণ্ড তাই তদন্তের স্বার্থে সবকিছু মিডিয়াকে বলা যাচ্ছে না।তবে আসল রহস্য শীঘ্রই উদঘাটন হবে।ইতিমধ্যে এ মামলায় ব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে।