অতি সুখের খোঁজে বেগম পাড়ার জন্ম

 গোলসান আরা বেগমঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে বাংলাদেশ,চীন, ভারতের কতিপয় দূর্নীতিবাজ,অর্থপাচারকারী,লুটপাটকারীদের  দ্বিতীয় আবাসস্থল হলো কানাডার টরেন্টোর বেগম পাড়া। শুধু কানাডা নয় উন্নত জীবনের আশায় দুবাই সিঙ্গাপুর,মালেশিয়া,ইংলেন্ড,অস্ট্রেলিয়ায়ও রয়েছে অসংখ্য এই বেগম পাড়া।
 আজকাল রাজনৈতিক অঙ্গনে,জনমনে কানাডায়  গড়ে ওঠা বেগমপাড়া বেশ কৌতুহল সৃস্টি করেছে।  আলোচনা সমালোচনার ঝড় ও তুলপাড় তৈরী করছে। নিরিবিলি,বরফশীতল,নান্দনিক  এলাকায় বিত্তশালীদের আবাসিক ও আয়েশী ঠিকানাকে কেউ কেউ বলে দ্বিতীয়  আয়েশী আবাসহোম। যাদের দেশের বাহিরে রয়েছে এই ঠিকানা তারা নিজেদের খুব গর্বিত মনে করে। অথচ দেশের পকেট কেটে অবৈধ ভাবে টাকা বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে, তার জবাব দেবে কে?
জিএফআইয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।অর্থ পাচারকারী ১৩৫টি উন্নয়শীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩ তম ( তথ্য সূত্র গুগল)। প্রায় ২০০ জন দূর্নীতিবাজ শীত নীবারনের জন্য লেপ কম্বল,ক্ষুধা সামাল দিতে বিপুল পরিমানের অর্থ মানিলন্ডারিং করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বেগম পাড়ায়। বাংলাদেশী ১০০০ পরিবার রয়েছে বেগম পাড়ায়। শোনা যায় ৩৬ শত কোটি টাকা পাচার করে পিকে হালদারও সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রকৃত অর্থে অফিসিয়ালী ভাবে  বেগম পাড়া বলে কানাডার কোন জায়গার নাম নেই।বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ধনার্ঢ্য ব্যক্তিরা তাদের বিশাল অংকের অবৈধ বা বৈধ অর্থ বিনিয়োগ করে বিলাস বহুল বাড়ী নির্মান করেছে বেগম পাড়ায়। এক একটি বাড়ির নির্মান ব্যয় হবে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় পনের বা ষোল কোটি টাকা।এই বাড়ীগুলিতে তাদের স্ত্রীরা সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে।স্বামীরা থাকে নিজের দেশে। ব্যবসা বানিজ্য  বা চাকুরী করে যে অর্থ আয় করে তা দিয়ে বেগম পাড়ার সন্তান পরিজনদের খরচ মিট আপ করে।
 টরেন্টোর প্রধান শহর থেকে বিশ মিনিট গাড়ী ড্রাইভ করলেই বেগম পাড়ায় যাওয়া যায়। নিরিবিলি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জায়গাটি টরেন্টো থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কেউ কেউ বলছে অভিবাসিরা অবৈধ পথে সরকারের কোষাগার থেকে অর্থ লুটপাট করে নিয়ম বর্হিভুত পথে কানাডায় নিয়ে গিয়েছে।অতঃপর স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য গড়ে তুলে বেগম পাড়া।প্রতিটি বাড়ী দু’তলা বিশিষ্ট। মাটির নীচেও রয়েছে একটি গ্রাউন্ড ফ্লোর। সঙ্গে গাড়ীর গ্যারেজ,একটু খোলা জায়গায় খেলাধূলা করার আয়োজন,তা ছাড়া সামান্য স্পেস যেখানে ফুলের বাগান বা পছন্দ মত সবজি চাষ  করতে পারে। চারপাশে থাকে খোলামেলা জায়গা সবুজ লাবণ্য পরিবেষ্টিত। কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করার শর্তে বাড়ি কেনা যায়।যেমন ৬ লক্ষ ডলারের বাড়িটি এক কোটি টাকার সম পরিমান অর্থ ডাউন পেমেন্ট করে বাড়ী কেনা যাবে।পরবতী অর্থ মাসিক কিস্ততে পরিশোধ যোগ্য।
জানা যায় — বেগম পাড়ায় বিলাসী অধিকাংশ বেগমদের মন ভালো নেই। অতি সুখে দুখে পাথর বেগম পাড়া। কেউ কেউ ছুটে আসছে নিজের দেশে ফিরে। কারণ তাদের স্বামীরা দেশে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে,জড়িয়ে যায় পরোকিয়ায়, করে উশৃঙ্ক্ষল,বেসামাল নীতিহীন চরিত্রহীন পথভ্রষ্ট  জীবন যাপন। বেগমদের ভারী নিঃশ্বাসে সুখ হারিয়ে যায় বেগম পাড়ার মাটিতে। রাত জেগে বেগমরা স্বামীর ভিডিও কলের অপেক্ষায় নির্ঘুমে ভাঙ্গে নিশুতি প্রহর।
আমাদের দেশের মানুষরা, শস্য শ্যামল সোনা ফলানো বাংলাদেশ ছেড়ে কেন কানাডায় বেগম পাড়ার জন্ম দিচ্ছে জানি না। তাদের মনে কি নিজের দেশের প্রতি দয়া মায়া ভালোবাসা নেই। ঐ সমস্ত পাষাণ, যারা বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে নিজের সুখের সন্ধানে বেগম পাড়ায় সাজায় আয়েশের বিন্যাস,তাদের বলবো স্বার্থপর। রক্তের বিনিময়ে অর্জিন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি বিন্দু মাত্র দয়া মায়া, ভালোবাসা নেই। নেই মাটি মানুষের প্রতি,ইতিহাস, ঐতিহ্য,সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা,মমত্ব ও দায়িত্ব বোধ। অথচ বাংলাদেশে সুখে শান্তিতে বসবাস করার মতো প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
 কানাডার বেগম পাড়ায় একটা বাড়ি কিনতে মোটা অংকের টাকা বিদেশের মাটিতে ঢেলে দেয়, শূন্য করে  বাংলাদেশের ব্যাংক ভান্ডার। এতো টাকা দেশ থেকে বিদেশে পাচার করতে তাদের বুক কাঁপে না। হউক তাদের অর্জিত  সম্পদ,তা তো বাংলাদেশেরও সম্পদ।
উড়ন্ত ডানার পাখী তোমরা, বিদেশের মাটিতে যতই সুখের সুরেলা গান গাও, পাবে না আমার সোনার বাংলার স্বাদ, সবুজের মায়া, উদাস দুপুর, জোনাকের আলো, মাটির সোঁদা গন্ধ। জানি আসিবে না ফিরে, বাংলাকে ঘিরে শোধিবে না তোমার জনমের ঋণ।
আদিকাল থেকেই সুখের খোঁজে ঘটি বাটি সঙ্গে নিয়ে মানুষ পরিবর্তন করেছে তাঁর আবাসস্থল, আদি ঠিকানা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠেছে নতুন নতুন সভ্যতা।শীতের পাখী হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেও উড়ন্ত ডানার এই মানুষগুলো ভুলে যায় পৈতৃক ঠিকানা। মা’য়ের হাতের দুধ ভাতের কথা মনে পরে না।  বেগম পাড়ার মাটি হবে তাদের  জীবনের শেষ বিছানা। তা কি মেনে নেয়া যায়।বলো হে বেগম পাড়া।
লেখকঃ উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ,কেন্দ্রীয় কমিটি।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর