বিশ্বাস হবে না তারপরও করছি ছেলের বিয়ের গালগপ্প

গোলসান আরা বেগমঃ চাকুরীজীবি বউকে ঘরে এনে বিয়ের রাতেই আলাদা ফ্লাটে থাকতে দেই।তবে খাওয়া দাওয়ার পর্বটা আমার ডাইনিং টেবিলেই রাখি। আত্মীয় স্বজন তো অবাক,চোখ কপালে তুলে ফেলে। মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে।কিন্তু কিছু বলার সাহস পায় না।

কেউ বলে –এ কি বউয়ের হাতের রান্নার যশ কেমন জানবো না? বউ এর বাবার বাড়ী থেকে কি কি দিয়েছে, তা দেখবো না।আমি তাদের সব আশায় গুড়ে বালি ঢেলে দেই। কথাগুলো বলছি –আমি একজন নারীবাদী নেত্রী।

বিয়ের পরদিন মেহমানরা ছেলের মায়ের কাছে ছুটে আসে, বিয়ের আসরে কে কি দিয়েছে দেখাও।
দেখাবো এক শর্তে – যে যাই দিক, সমালোচনা করতে পারবে না। সব দেখানোর পর, আগত মেহমানদের মাঝে কিছু গিফট বিলি বন্টন করে দেই।বাদ বাকী সব তুলে রাখি বউয়ের জন্য।

ছেলে মেয়ে প্রেম করে,ছেলে বলেছিলো মা’কে —আমার বিয়ে নিয়ে মা ভাববে না।আমি আমার কলিগকে বিয়ে করবো।
— বাবা আমায় বাঁচালে। আজকাল মেয়ে দেখাদেখি করা খুবই কঠিন কাজ।
বেশ তো, মেয়ের বাবাকে বলো– বিয়ের পাকা কথা বলতে কবে যাবো।

কয়েক দিন পর ছেলে বলে– মা ওরা আমাদের সাথে আত্মীয়তা করবে না। প্রথম দোষ ছেলের মা চাকুরী করে।দ্বিতীয় দোষ — ছেলের মা রাজনীতি করে।

মেয়ের বাবাকে আমার সাথে কথা বলতে বলো।বর্তমান যুগে এগুলো দোষ নয় বরং একট্রা কোয়ালিটি।গর্ব করার মতো যোগ্যতা।

না মা, তোমার কথা বলার দরকার নেই।আমিই মুখাবেলা করবো। প্রয়োজন হলে বিয়ে করবো না।

পাঁচ ছয় দিন পর মেয়ে দেখার দাওয়াত এলো। ইচ্ছে করেই আত্মীয় স্বজন কাউকে সঙ্গে নেইনি। আমি ও আমার স্বামী ছেলের ভালোবাসার পাত্রী দেখতে যাই।

ও বাসায় ঢুকে মেয়ের মা বাবার সাথে কুশল বিনিময় করে সোফায় বসি।পাশে একটা টেবিলে দু’টো মেয়ে খাবার সাজাচ্ছে। কোন মেয়ে আমাদের বউ হতে যাচ্ছে জানি না।আমার স্বামী পাত্রীর ভাইয়ের বউকে পছন্দ করে ফেলে।এই বিষয়টি নিয়ে কতবার হাসাহাসি করেছি।

আমার মধ্যে কোন গোড়ামি নেই। মেয়ের হাঁটা চলা কেমন, মেয়ে নামাজ পড়ে কি না,হাত ঢলে গায়ের স্কিনের রং উদ্ধার করা, প্রতিবন্ধি কি না যাচাই করা, উচ্চতা কত ফুট, রান্না করতে পারে কি না ইত্যাদি কোন পরীক্ষার দিতে দেইনি মেয়েকে।

আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো, কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে যেনো বিয়েটি ভেঙ্গে না যায়। ছেলের পছন্দকে ১০০% প্রাধান্য দেই।হবু বিয়াইকে প্রকাশ্যে বলি -আপনি ভয় পাবেন না। যৌতুকের কোন পণ্য আমার বাসায় পাঠাতে হবে না।শুধু বিয়ের দিন আমার ১০০ শত জন মেহমান কে আপনার সাধ্য ও রুচি অনুযায়ী খাওয়াবেন।বউয়ের সঙ্গে পান সুপারি দিবেন। আলাহ’র রহমত চাই– আমার ছেলে ও আপনার মেয়ের জন্য।

কোন কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়নি। নির্দিষ্ট তারিখে বউ নিয়ে আসি ঢাকার বাসায় আগার গাওঁ এ গুলশান কুজ্ঞে। পরদিন সকালে ২০ রখমের নাশতা খাবার টেবিলে সাজিয়ে বিয়ের মেহমান সহ বউ কে নাশতা করাই। কেউ বলে বউ এর হাতের রান্না খাবে,চা খেতে চায় কেউ।আমি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলি, আমি চা করে নিয়ে আসছি তোমরা বস।বেশ হাসী খুশী রঙ্গ তামশা করে বিয়ে পর্ব শেষ হলে স্বজনরা ফিরে যেতে থাকে আপন গন্তব্যে।

হঠাৎ করেই ছেলের বাবা একদিন বলতে শুরু করে, কি ব্যাপার মেয়ের বাবা লেপ তোষকও দিলো না? এ টা তো নবীজীর সুন্নত।

আমি থামিয়ে দিয়ে বলি – গলফ ক্লাবের মতো নামী দামী জায়গায় বিয়ের অনুষ্ঠান করেছ,তারাও করেছে।দুই টাকার লেফ কম্বল নিয়ে টানাটানি না করলে হয় না।

বউকে আরো বলেছি,তুমি যখন যেখানে যেতে ইচ্ছে করে যাবে।আমার পারমিশনের জন্য অপেক্ষা করবে না। চাকুরীর টাকা ইচ্ছে মত খরচ করবে, বাবা মা কে দিবে।আমাকে দেবার প্রয়োজন নেই।বরং হাত খরচ তোমাকে আমি দেবো। বিয়ের বার বছর পার হওয়ার পরও, কোন বিষয়ে মুখ কালো রাখিনী বা দেখিনী। সবাইকে উদার,সহনশীল,মানবিক হওয়া দরকার,সুখের সংসার সাজানোর লক্ষ্যে।

মানুষ এক সময় বলতো –সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে। এখন বলবো–সংসারের সুখ দুঃখ নির্ভর করে পরিবারের সকল সদস্যের উপর।

লেখকঃ উপদেষ্ঠা মন্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ কৃষক লীগ,কেন্দ্রীয় কমিটি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর