ঢাকা ০৩:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তামাক চাষে আর্থিক লাভের চেয়ে বহুগুণে বেশি স্বাস্থ্য ব্যয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৮:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের ৯৯ হাজার ৬০০ একর জমিতে তামাক চাষ হয়। যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এ পরিমাণ জমিতে তুলা চাষ করতে পারলে দেশ আরও লাভবান হবে বলে দাবি করেছে দেশের তামাকবিরোধী জোট। রবিবার সচিবালয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতে এ দাবি করা হয়। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানান, তামাক চাষ থেকে সরকার যে টাকা রাজস্ব আয় করে, তার চেয়ে বেশি চিকিৎসা বেয়ে খরচ হয়। তাঁদের করা গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান তাঁরা।

সাক্ষাৎকালে তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে তুলা চাষের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন শক্তিশালীকরণ ও তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষ বৃদ্ধির সমর্থন চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল দাবি করে, তামাক জনস্বাস্থ্য, সামাজিক অবক্ষয়, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা, যেখানে একই অর্থবছরে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ছিল ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

প্রতিবছর দেশের প্রায় ৯৯ হাজার ৬০০ একর জমিতে তামাক চাষ হয়। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ‘বস্ত্র’ থেকে সরকারের রপ্তানি আয় ৩১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও দেশের মাত্র ৮ হাজার ৪৩০ একর জমিতে তুলা চাষ হয়। যা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০ বেল তুলা উৎপাদন হয়, যা মোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ।

মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮৫ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন, যেখানে প্রায় ৮০ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে হয়। যার আমদানি মূল্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষ করা গেলে বর্তমান উৎপাদন থেকে প্রায় সাড়ে ১৩ গুণ বা মোট চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ তুলা বেশি উৎপাদন করা সম্ভব। যা প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা আমদানি ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে। তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষ করা গেলে তা দেশ ও সরকারের জন্য লাভজনক এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তায় আইন শক্তিশালীকরণে আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ বিষয়ে আমার ও আমার মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সমর্থন সব সময় থাকবে।’ তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তুলা উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং দেশে তুলার ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখবে তুলা চাষ। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করব।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রকল্প পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান, প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, টিসিআরসি’র প্রকল্প কর্মকর্তা মো. জুলহাস আহমেদ, বিভূতী ভূষণ মাহাতো, ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. সামিউল হাসান সজীব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তামাক চাষে আর্থিক লাভের চেয়ে বহুগুণে বেশি স্বাস্থ্য ব্যয়

আপডেট টাইম : ১২:৫৮:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের ৯৯ হাজার ৬০০ একর জমিতে তামাক চাষ হয়। যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এ পরিমাণ জমিতে তুলা চাষ করতে পারলে দেশ আরও লাভবান হবে বলে দাবি করেছে দেশের তামাকবিরোধী জোট। রবিবার সচিবালয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতে এ দাবি করা হয়। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানান, তামাক চাষ থেকে সরকার যে টাকা রাজস্ব আয় করে, তার চেয়ে বেশি চিকিৎসা বেয়ে খরচ হয়। তাঁদের করা গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান তাঁরা।

সাক্ষাৎকালে তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে তুলা চাষের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন শক্তিশালীকরণ ও তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষ বৃদ্ধির সমর্থন চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল দাবি করে, তামাক জনস্বাস্থ্য, সামাজিক অবক্ষয়, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা, যেখানে একই অর্থবছরে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ছিল ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

প্রতিবছর দেশের প্রায় ৯৯ হাজার ৬০০ একর জমিতে তামাক চাষ হয়। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ‘বস্ত্র’ থেকে সরকারের রপ্তানি আয় ৩১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও দেশের মাত্র ৮ হাজার ৪৩০ একর জমিতে তুলা চাষ হয়। যা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০ বেল তুলা উৎপাদন হয়, যা মোট চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ।

মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮৫ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন, যেখানে প্রায় ৮০ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে হয়। যার আমদানি মূল্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষ করা গেলে বর্তমান উৎপাদন থেকে প্রায় সাড়ে ১৩ গুণ বা মোট চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ তুলা বেশি উৎপাদন করা সম্ভব। যা প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা আমদানি ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে। তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষ করা গেলে তা দেশ ও সরকারের জন্য লাভজনক এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তায় আইন শক্তিশালীকরণে আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ বিষয়ে আমার ও আমার মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সমর্থন সব সময় থাকবে।’ তামাক চাষের জমিতে তুলা চাষের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তুলা উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং দেশে তুলার ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখবে তুলা চাষ। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করব।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রকল্প পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান, প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, টিসিআরসি’র প্রকল্প কর্মকর্তা মো. জুলহাস আহমেদ, বিভূতী ভূষণ মাহাতো, ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. সামিউল হাসান সজীব।