চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম এক ভয়াবহ হামলায় বিপুলসংখ্যক সৈন্য নিহত হওয়ার তথ্য স্বীকার করেছে রাশিয়া। রোববার নববর্ষের দিন মধ্যরাতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই সৈন্যদের প্রাণহানি ঘটেছে। ইউক্রেন বলছে, অধিকৃত দনেৎস্ক অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০০ রুশ সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে। ইউক্রেনের লড়াইরত সৈন্যদের প্রাণহানির এই ঘটনায় রাশিয়াজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে।
সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রুশ-অধিকৃত দনেৎস্কের আঞ্চলিক রাজধানী মাকিভকা শহরের একটি পরিত্যক্ত কারিগরি কলেজের অস্থায়ী ব্যারাক আক্রান্ত হয়েছে। রুশ সৈন্যদের আবাস হিসাবে ওই কলেজটি ব্যবহার করা হয়েছিল। রোববার মাঝরাতে ইউক্রেনের রকেট হামলায় ওই ব্যারাকে ৬৩ জন সৈন্য মারা গেছেন।
মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমারস লঞ্চার থেকে ছোড়া চারটি রকেট আঘাত হেনেছে সৈন্যদের ওই অস্থায়ী ব্যারাকে। এছাড়া আরও দু’টি রকেট গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া।
কিয়েভ বলেছে, দনেৎস্কে রাশিয়ার কয়েকশ’ সৈন্য মারা গেছেন। যদিও রাশিয়াপন্থী কর্মকর্তারা এই সংখ্যাকে ‘অতিরঞ্জন’ বলে অভিহিত করেছেন।
রাশিয়ার সামরিক ব্লগাররা বলেছেন, অস্থায়ী ব্যারাকের মতো ভবনে সৈন্যদের অবস্থানের পাশাপাশি গোলাবারুদের মজুত ছিল। যে কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই ব্লগাররা। এই ব্যারাক ইউক্রেনের রকেটের পাল্লার আওতায় থাকা সত্ত্বেও রুশ সৈন্যরা সেখানে কেন অবস্থান করছিলেন, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
ইউক্রেন বলেছে, সোমবার টানা তৃতীয় রাতের মতো কিয়েভ এবং অন্যান্য শহরে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে রাশিয়ার নজিরবিহীন বিমান হামলা হয়েছে। এ সময় রাশিয়ার ছোড়া অন্তত ৩৯টি ড্রোন গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের এই সাফল্য ইউক্রেনের জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার চালানো বিমান হামলার কৌশল ক্রমবর্ধমানভাবে যে ব্যর্থ হয়েছে সেটি প্রমাণ করেছে। কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করায় রাশিয়ার এই ব্যর্থতা বলে দাবি করেছেন তারা।
মাকিভকা শহরে রুশ ব্যারাকে ইউক্রেনের রকেট হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিশাল একটি ভবন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে। হামলায় ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী সৈন্যদের সাবেক কমান্ডার ও রাশিয়ার জাতীয়তাবাদী সামরিক ব্লগার হিসাবে পরিচিত ইগর গিরকিন টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, দনেৎস্ক হামলায় নিহতের সংখ্যা শত শত। পরে পোস্ট সম্পাদনা করে সেখানে আহতদের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত করেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, আক্রান্ত ব্যারাকে গোলাবারুদের মজুত এবং রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম খোলামেলাভাবে রাখা ছিল। দেশটির জাতীয়তাবাদী আরেক ব্লগার রিবার বলেছেন, ইউক্রেনের হামলায় অন্তত ৭০ জন সৈন্য নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
টেলিগ্রামে ৭ লাখের বেশি ফলোয়ার আছে রাশিয়ার সামরিক ব্লগার আরচ্যাঞ্জেল স্পেৎজনাজ জেডের। তিনি লিখেছেন, মাকিভকা শহরে যা ঘটেছে তা একেবারে ভয়ানক।
জেডের প্রশ্ন, ‘এক ভবনে বিপুলসংখ্যক সৈন্যকে রাখার ধারণাটা কে দিয়েছিল, যেখানে একজন বোকাও বোঝেন যে, গোলাবারুদের আঘাতে অনেক সৈন্য আহত অথবা নিহত হবেন? যুদ্ধক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল অবস্থায় মজুত রাখা গোলাবারুদের ব্যাপারে কমান্ডাররা ভয়ডরহীন থাকতে পারেন না।’
তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিটি ভুলের একটি নাম আছে।’
কেবল একটি ঘটনায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সৈন্যের মৃত্যুর তথ্য স্বীকারের নজির রাশিয়ার খুব বেশি নেই। এমনকি চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার কত সৈন্য নিহত হয়েছেন সেবিষয়েও এখন পর্যন্ত সঠিক কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি দেশটি।
নতুন বছরে কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের কয়েকশ’ কিলোমিটার অগ্রভাগ লক্ষ্য করে নৈশকালীন আক্রমণ চালিয়ে আসছে রাশিয়া। রাতের বেলা এ ধরনের হামলা রাশিয়ার যুদ্ধের কৌশলের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর রাশিয়া নতুন বছরের প্রথম দু’দিন (১ ও ২ জানুয়ারি) ইরানের তৈরি কয়েক ডজন শাহেদ ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। তবে সোমবার কিয়েভ গুলি চালিয়ে রাশিয়ার ছোড়া ৩৯টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে। আর এসব ড্রোনের মধ্যে অন্তত ২২টি কিয়েভে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেন বলেছে, যুদ্ধের নতুন কৌশল রাশিয়ার হতাশার একটি লক্ষণ। কারণ ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।