হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর ওপর জনঘনত্বের চাপ কমাতে নতুন আরও একটি উপশহর গড়তে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজধানীর কাছেই কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৭০০ একর ভূমি নিয়ে গড়ে উঠবে উপশহরটি। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প নিতে প্রয়োজনীয় কার্র্যক্রম শুরু করেছে রাজউক। এবার আর প্লট আকারে না দিয়ে, ব্লকভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হবে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মানদণ্ড মাথায় রেখে আন্তর্র্জাতিক মানের শহর গড়ার ভাবনায় এগোচ্ছে রাজউক। বর্র্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা আমাদের সময়কে বলেন, রাজউক নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৌখিক নির্দেশনা পেয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল প্রজেক্টের অদূরে ৪ হাজার ৭০০ একর ভূমি নিয়ে একটি প্রকল্প হবে। এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য আগামী ৬ মাস পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠাব। সেখানে অনুমোদন পেলে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব পাঠাব। সেখানে আরও ৬ মাস লেগে যাবে। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, উপশহরে কতগুলো ব্লক হবে সেগুলো আরও পরে চূড়ান্ত হবে। উন্নত দেশের শহরগুলো যেভাবে গড়ে উঠেছে, তার থেকে ভালো আয়োজন থাকবে সেখানে। তাতে এককভাবে কাউকে প্লট দেওয়া হবে না। এক বিঘার প্লট দিলে ৪ জনকে দেওয়া হবে। দুই বিঘার প্লট হলে ৮ জন পাবে। এটা করতে পারলে দেখা যাবে কোনো প্লট যদি ১২ জনকে দেওয়া হয়। তা হলে সেই প্লটে সুউচ্চু ভবন বানাতে পারবে। প্রকল্প এলাকার ভেতরে খেলার মাঠ করতে পারবে। এটি আন্তর্র্জাতিক মানের উপশহর হবে ।
জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে রোডের পাশে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ঝিলমিল প্রকল্পের কাছেই নতুন উপশহরে থাকবে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্র্রিজ, ওয়্যার হাউস, ব্যাংকপাড়া। উপশহরটিতে সাড়ে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এক একটি ভবনের উচ্চতা হবে কমপক্ষে ২০তলা। প্রকল্প এলাকায় ২০ শতাংশ জায়গা রাখা হবে গ্রিন স্পেস ও জলাভূমি হিসেবে। এ ছাড়া মাঠ, বাজারসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে এই উপশহরে। এই উপশহরকে বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায় রাজউক। রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ঘোষণার পর এটিই প্রথম ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন করে একটি আন্তর্র্জাতিক মানের শহর গড়ার পরিকল্পনা করেছে রাজউক।
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, উপশহরটির প্রধান লক্ষ্য কর্র্মসংস্থান। পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণবঙ্গের কৃষিপণ্য সহজেই ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছে। কাজেই ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে রোডের পাশে যদি একটি উপশহর গড়ে ওঠে, সেটি হবে দেশের বিজনেস হাব। সেখানে ব্যাংকপাড়া, হাসপাতাল, ওয়্যার হাউস, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্র্রিজসহ অনেক কর্মসংস্থান প্রকল্প থাকবে। শহরটির বহুমাত্রিক ব্যবহার হবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পূর্র্বাচলের মতো বড় না হলেও অনেকগুলো অ্যাপার্র্টমেন্ট বা প্লট হবে। সেখানে প্রশস্ত রাস্তা থাকবে। তা ছাড়া সারাদেশের সঙ্গে সংযোগ রেখে সার্কুলার রোড নির্র্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক একটি প্লটের আয়তন ১ একর হতে পারে। রাজউক মনে করে, প্লটের আয়তন বড় হলে উচ্চ ভবন করা যাবে। এই ধারণা থেকেই ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন করবে। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের অর্থের জোগান নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে চায় রাজউক। সেটি সম্ভব না হলে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপির) আওতায় কাজ করার চিন্তাভাবনা করছে সংস্থাটি।
জানা গেছে, প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর থেকে ৭ বছরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় রাজউক। এজন্য দেশি বড় বড় আবাসন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে পারে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিজও দিতে পারে। দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করেই এই শহর গড়া হবে। সবগুলো সুযোগ হাতে রেখেই প্রকল্প প্রস্তাব করবে রাজউক।