হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তেমনি একটি নিদর্শন কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের কুতুব শাহী মসজিদ। শতশত বছর আগে গড়ে ওঠা এমনই অনেক নিদর্শন এখনও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। তবে সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অনেক প্রত্নসম্পদ।
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত উপজেলা অষ্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কুতুব শাহ মসজিদের সুখ্যাতি আছে দেশজুড়ে। এর কোনও শিলালিপি অবশিষ্ট নেই। তবে নির্মাণশৈলী অনুযায়ী ষোড়শ শতকের সুলতানি আমলের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। যদিও স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস, ঐশ্বরিক মহিমায় মাটির নিচ থেকে উঠে এসেছে ঐতিহাসিক এই স্থাপনা!
কুতুব শাহ মসজিদের চারকোণে চারটি অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। প্রতিটির ওপর একটি করে মিনার। এছাড়া আছে পাঁচটি গম্বুজ। দেয়ালে চোখে পড়ে সুলতানি আমলের বিভিন্ন কারুকাজ। এর কার্নিশ বক্রাকার। পশ্চিম ছাড়া তিন দিক থেকে মসজিদে প্রবেশ করা যায়। পাশে সমান্তরালে আছে কয়েকটি কবর। এর মধ্যে একটি কুতুব শাহের সমাধি হিসেবে প্রচলিত।
৯০৯ সালে তৎকালীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কুতুব শাহ মসজিদকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করে। বর্তমানে এতে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এছাড়া অনেকে সুলতানি আমলের এই স্থাপত্যশৈলী দেখতে সমবেত হন।
এমনই একজন দর্শনার্থী সারোয়ার জাহানের সঙ্গে কথা হলো। তিনি মনে করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদ দেখতে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
সত্যিকার অর্থেই কুতুব মসজিদ দেখতে হলে একটু ঝক্কি পোহাতে হয়। কারণ অষ্টগ্রাম উপজেলায় যাওয়ার একমাত্র উপায় জলপথ। যারা নদী পথে ভ্রমণ উপভোগ করেন তাদের জন্য এটি হতে পারে চমৎকার গন্তব্য। একইসঙ্গে অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণও হয়ে যাবে।
কুতুব মসজিদ যেতে হলে ঢাকা থেকে সকালবেলার কিশোরগঞ্জগ্রামী ট্রেনে চেপে কিংবা বাসে চড়ে নামতে হবে কুলিয়ারচর। তারপর লঞ্চঘাট। সেখান থেকে দুপুর ১২টা-১টা নাগাদ মিলে যাবে অষ্টগ্রামগামী দুটি লঞ্চ। একটু সাহসীদের জন্য বিকল্প হিসেবে আছে স্পিডবোট।
হাওরের সুন্দর হিমেল হাওয়া, স্বচ্ছ জল ও পানকৌড়ি দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিকাল ৩টা নাগাদ লঞ্চ পৌঁছে যাবে অষ্টগ্রাম ঘাটে। এরপর রিকশা কিংবা অটোরিকশায় চড়ে কুতুব শাহ মসজিদ। ফিরে আসার পথ একই। অবশ্য চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করে থাকা যাবে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয়।