হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৫ বছর ধরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় ছিল না বাংলাদেশের। ২০০৭ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে মূল পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সির প্রতিনিধিরা। এরপর একে একে ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০২১ বিশ্বকাপে খেললেও দীর্ঘ ১৫ বছরের খরা কাটাতে পারেনি। লম্বা সময় পর তাসকিন আহমেদের দ্যুতিময় বোলিংয়ে হারের বৃত্ত ভাঙলো বাংলাদেশ। করোনার সময় সবকিছু যখন বন্ধ, তাসকিন তখন কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে গড়েছেন একটু একটু করে। কঠোর পরিশ্রমের ফল পাচ্ছেন তরুণ পেসার। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ের ভেলায় চড়ে আক্ষেপ আর হতাশার গল্পের ইতি টেনেছে বাংলাদেশ।
নেদারল্যান্ডসের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটাররা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ডাচদের মাত্র ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছেন তারা। তারপরও নেদারল্যান্ডসকে আটকে রাখতে বেলিরিভ ওভালে প্রথম ওভারের আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন তাসকিন। পরপর দুই বলে ডাচ দুই ওপেনার বিক্রমজিৎ সিং ও বাস ডি লিডিকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
শুধু ওই ২ উইকেটই নয়, নিজের শেষ ওভারে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা কলিন কলিন অ্যাকারম্যানকে সাজঘরের পথ দেখান তাসকিন। ১৭তম ওভারের শেষ বলে তিনি কলিনকে সাজঘরে না ফেরালে চিত্রনাট্য অন্যরকম হতে পারতো। সব মিলিয়ে তাসকিন দেখিয়েছেন কীভাবে ভিনদেশি উইকেটে চোখে চোখ রেখে ব্যাটারদের বিপক্ষে বোলিং করতে হয়। দারুণ লাইন-লেন্থে বোলিং করে তাসকিন ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য পেয়েছেন। ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
ইনজুরি ও অফফর্মের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর কঠোর পরিশ্রমই তাসকিনকে সাফল্য এনে দিচ্ছে। ওই সময়টাতে নিজেকে তৈরি করার বিভিন্ন ভিডিও এবং ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতেন। সেইসব নিয়ে নানামুখী ট্রলের শিকার হতে হয়েছিল। ডানহাতি পেসার সেসবে পাত্তা দেননি, উল্টো ব্যক্তিগত ট্রেনার নিয়োগ দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে হলরুমে চালিয়ে গেছেন নিজের প্রস্তুতি। বাসার গ্যারেজ থেকে শুরু করে সিঁড়ি, ধানমন্ডি চার নম্বর মাঠ, জিম, মোহাম্মপুরের বালুমাঠ- কোনও কিছুই বাদ যায়নি। তাসকিনকে ফিরিয়ে আনার মূল কারিগর তার প্রিয় কোচ মাহবুব আলী জ্যাকি। তার তত্ত্বাবধানেই মূলত বদলে গেছেন ডানহাতি পেসার।
২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় তাসকিনের। এরপর নানা সময়ে ছন্দপতন ঘটলেও ফিরে এসেছেন তিনি। তাসকিন এখন জানেন কীভাবে সাফল্য নিজের হাতের মুঠোই আনতে হয়। ম্যাচ শেষে হোবার্টে সাফল্যের রহস্য জানিয়েছেন এই পেসার, ‘আমি মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক মতো করার জন্য চেষ্টা করেছি। প্রথম ইনিংসে নেদারল্যান্ডসের বোলিং দেখছিলাম। ভালো মুভমেন্ট ছিল। ক্যারিও ছিল। সেজন্য আমি টেস্ট ম্যাচ লেংথে বল করেছি। দুই দিকে বল মুভ করাতে চেয়েছি। এটাই কাজে দিয়েছে।’
নিজেকে আরও ধারালো, আরও নিখুত করতে নানা রকম অনুশীলন করেছেন তাসকিন। দুবাইতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে টায়ারকে লক্ষ্য করে অনুশীলন করতে দেখা গেছে তাসকিনকে। সেই টায়ার অনুশীলন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম। মূলত নিখুঁত ইয়র্কার ও ওয়াইড ইয়র্কার করতেই এই প্রস্তুতি। সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন সেই রহস্যও উন্মোচন করে গেছেন, ‘টায়ার অনুশীলন আসলে প্রধান কোচের তৈরি। ইয়র্কার, ওয়াইড ইয়র্কারে উন্নতি করার জন্য। ইয়র্কারে উন্নতি করতে এই অনুশীলনটা আমরা প্রায়ই করি। ডেথ ওভারে হয়তো আমাদের আগের রেকর্ড ভালো না। কিন্তু আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে। সামনে আরও ধারাবাহিক হতে চাই।’
তাসকিন নিজের উন্নতির কথা বললেও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে তাসকিনের উন্নতি কতটা হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৯ টি-টোয়েন্টি খেলে ১২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। বেশিরভাগ ম্যাচেই দেখা গেছে নিয়ন্ত্রণহীন। এরপর ২০১৮ সালের মার্চে দল থেকে বাদ পড়ার পর ফেরেন ২০২১ সালের মার্চে। গত দুই বছরে দারুণ বোলিংয়ে সাফল্যের ভেলায় ভাসছেন এই গতি তারকা। এই সময় ২৩ ম্যাচে তার শিকার ২০ উইকেট। বেশ কিছু ম্যাচে উইকেট না পেলেও ছিলেন ইমপ্যাক্টফুল বোলার। শুধু এই ফরম্যাটেই নয়, বাকি দুই ফরম্যাটেও সাফল্যের নিশান উড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।
হোবার্টের ম্যাচ শেষে তাসকিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও, ‘তাসকিন আমাদের জন্য ভালো বোলার। তার অভিজ্ঞতা ও পেস আমাদের সাফল্য এনে দিবে।’
এমন বোলিংয়ের পর তাসকিন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার!