ঢাকা ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পড়ালেখার পাশাপাশি ড্রাগন চাষে সফলতা দেখছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাকিব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৯:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাকালীন ঘরে বসেছিলাম। এ সময় নিজের ওপর বিরক্তি চলে আসে। ভাবতেছিলাম কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু টাকা কোথায় পাই? নিজের কাছে তো তেমন টাকা নেই। অনেক ভেবে কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার চাই। তারাও আমাকে টাকা ধার দেয়। এরপর বাড়ির পাশে ছোট এক একর জমির পুকুর লিজ নেই। পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। পরে ইউটিউবে ড্রাগন ফলের চাষ দেখি। কম জায়গায় ড্রাগন চাষ করা যায়। তাই পুকুর পাড়ের এক বিঘা জমিতে শুরু করি ড্রাগন চাষ। কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মো. রাকিব হোসেন (২৪)।

রাকিব হোসেন উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের তিলই দিঘীরপাড় এলাকার মো. আলী আকবর সরদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা তিন ভাই দুই বোন। পরিবারে সবার ছোট রাকিব।

রাকিব বলেন, ছোটবেলা থেকে কৃষিকাজেও প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাই বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন ফলের গাছ রোপণ করি। করোনার সময় ঘরে বসে ছিলাম। এ সময় ইউটিউবে ড্রাগন ফল চাষের ভিডিও দেখি। ড্রাগন চাষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। আবার ঝুঁকিও কম। আমি উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে পরামর্শ দেয়। আমি সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ শুরু করি।

 

জানা যায়, রাকিব এক একর জমির পুকুর লিজ নেন। পুকুর পাড়ের এক বিঘা জমিতে পিলারের মাধ্যমে গাছ লাগান। প্রতিটি পিলার বানাতে তার ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। তার বাগানে এমন ১০০ পিলার রয়েছে। প্রতিটি পিলারে চারটি করে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ১০-১৫ কেজি ফল হয়। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি দুই থেকে তিনশত টাকা। বর্তমানে তার বাগানে ৬০-৭০ হাজার টাকার ফল রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাকিবের বাগানে ড্রাগনের পাশাপাশি লেবু, পেয়ারা, মাল্টা, কলা, আম, বেদেনাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রয়েছে। বেশ কিছু গাছে ফলও ধরেছে। পুকুর পাড় যেন হরেক রকম ফলের সমাহার। ফলগাছের ক্ষতি যেন না হয়, সেজন্য পুকুর পাড় নেট দিয়ে আটকানো রয়েছে। আর পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করা হচ্ছে।

রাকিব বলেন, প্রথম যখন কাজ শুরু করি, তখন কেউ আমার পাশে ছিল না। সবাই বিরোধীতা করেছে। নিজের মনের জোরে এখনও কাজ করে যাচ্ছি। তবে সফলতা পেয়েছি। আমার বাগানে উন্নতজাতের কলা, আম, লেবু, পেয়ারাসহ বেশ কিছু ফলের গাছ রয়েছে। জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আরও বড় করে বাগান করার জন্য। সবচেয়ে ভালো লাগে, আমার বাগানের ফল বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। বাজারে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাগানে লাল, হলুদ ও সাদা জাতের ড্রাগন ফল রয়েছে। এর মধ্যে লাল ড্রাগন বেশি রয়েছে। বাগানে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না, শুধু কেঁচো সার ব্যবহার করি। এতে মাটির উৎপাদন শক্তি বজায় থাকে। প্রাকৃতিকভাবে সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়।

 

স্থানীয় যুবক সুলাইমান বলেন, রাকিব যখন শুরু করে, তখন অনেকেই তাকে নিয়ে নানা মন্তব্য করত। আবার অনেকেই বলত যা খরচ হবে, তা উঠবে না। এগুলো করে এখন আর কেউ আয় করতে পারে না। তারপরও রাকিব থেমে থাকেনি। নিজের উদ্যমে কাজ করে গেছে। নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে গেছে। এখন সে সফল। আমিও তার কাছ থেকে গাছ নিয়ে লাগিয়েছি। তার চারার মান ভালো।নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে রাকিব বলেন, ঘরের পাশে ছোট জায়গায় প্রথমে ফলের গাছ লাগাতে পারেন। এতে করে যেমন পরিবেশ সুন্দর হবে তেমনই ফল বিক্রি করে আয় করা যাবে। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে, আমরা চাকরি দেব এটা ভাবি তাহলে দেশে বেকারত্ব কমে যাবে।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি কনেশ্বর ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছি। আমার এই এলাকায় রাকিব নামে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা রয়েছে। তাকে আমরা বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। নিয়মিত তার বাগানে গিয়ে খোঁজ-খবর নিই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে ড্রাগন চাষের কোনো প্রকল্প আমাদের এখানে নেই। কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় করতে চায়, তাহলে তাকে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি। পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাকিব একজন সফল ড্রাগন চাষি। আমরা তাকে সব ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ফলে কোনো রোগ হলে কীভাবে তার প্রতিকার করা যায়, সেই ধরনের পরামর্শ আমরা দিয়েছি। তাকে প্রাকৃতিকভাবে কেঁচো সারের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি। আমাদের পরামর্শ মতো সে নিয়মিত কেঁচো সার দিচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পড়ালেখার পাশাপাশি ড্রাগন চাষে সফলতা দেখছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাকিব

আপডেট টাইম : ১১:২৯:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাকালীন ঘরে বসেছিলাম। এ সময় নিজের ওপর বিরক্তি চলে আসে। ভাবতেছিলাম কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু টাকা কোথায় পাই? নিজের কাছে তো তেমন টাকা নেই। অনেক ভেবে কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার চাই। তারাও আমাকে টাকা ধার দেয়। এরপর বাড়ির পাশে ছোট এক একর জমির পুকুর লিজ নেই। পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। পরে ইউটিউবে ড্রাগন ফলের চাষ দেখি। কম জায়গায় ড্রাগন চাষ করা যায়। তাই পুকুর পাড়ের এক বিঘা জমিতে শুরু করি ড্রাগন চাষ। কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মো. রাকিব হোসেন (২৪)।

রাকিব হোসেন উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের তিলই দিঘীরপাড় এলাকার মো. আলী আকবর সরদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা তিন ভাই দুই বোন। পরিবারে সবার ছোট রাকিব।

রাকিব বলেন, ছোটবেলা থেকে কৃষিকাজেও প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাই বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন ফলের গাছ রোপণ করি। করোনার সময় ঘরে বসে ছিলাম। এ সময় ইউটিউবে ড্রাগন ফল চাষের ভিডিও দেখি। ড্রাগন চাষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। আবার ঝুঁকিও কম। আমি উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে পরামর্শ দেয়। আমি সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ শুরু করি।

 

জানা যায়, রাকিব এক একর জমির পুকুর লিজ নেন। পুকুর পাড়ের এক বিঘা জমিতে পিলারের মাধ্যমে গাছ লাগান। প্রতিটি পিলার বানাতে তার ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। তার বাগানে এমন ১০০ পিলার রয়েছে। প্রতিটি পিলারে চারটি করে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ১০-১৫ কেজি ফল হয়। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি দুই থেকে তিনশত টাকা। বর্তমানে তার বাগানে ৬০-৭০ হাজার টাকার ফল রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাকিবের বাগানে ড্রাগনের পাশাপাশি লেবু, পেয়ারা, মাল্টা, কলা, আম, বেদেনাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রয়েছে। বেশ কিছু গাছে ফলও ধরেছে। পুকুর পাড় যেন হরেক রকম ফলের সমাহার। ফলগাছের ক্ষতি যেন না হয়, সেজন্য পুকুর পাড় নেট দিয়ে আটকানো রয়েছে। আর পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করা হচ্ছে।

রাকিব বলেন, প্রথম যখন কাজ শুরু করি, তখন কেউ আমার পাশে ছিল না। সবাই বিরোধীতা করেছে। নিজের মনের জোরে এখনও কাজ করে যাচ্ছি। তবে সফলতা পেয়েছি। আমার বাগানে উন্নতজাতের কলা, আম, লেবু, পেয়ারাসহ বেশ কিছু ফলের গাছ রয়েছে। জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আরও বড় করে বাগান করার জন্য। সবচেয়ে ভালো লাগে, আমার বাগানের ফল বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। বাজারে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাগানে লাল, হলুদ ও সাদা জাতের ড্রাগন ফল রয়েছে। এর মধ্যে লাল ড্রাগন বেশি রয়েছে। বাগানে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না, শুধু কেঁচো সার ব্যবহার করি। এতে মাটির উৎপাদন শক্তি বজায় থাকে। প্রাকৃতিকভাবে সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়।

 

স্থানীয় যুবক সুলাইমান বলেন, রাকিব যখন শুরু করে, তখন অনেকেই তাকে নিয়ে নানা মন্তব্য করত। আবার অনেকেই বলত যা খরচ হবে, তা উঠবে না। এগুলো করে এখন আর কেউ আয় করতে পারে না। তারপরও রাকিব থেমে থাকেনি। নিজের উদ্যমে কাজ করে গেছে। নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে গেছে। এখন সে সফল। আমিও তার কাছ থেকে গাছ নিয়ে লাগিয়েছি। তার চারার মান ভালো।নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে রাকিব বলেন, ঘরের পাশে ছোট জায়গায় প্রথমে ফলের গাছ লাগাতে পারেন। এতে করে যেমন পরিবেশ সুন্দর হবে তেমনই ফল বিক্রি করে আয় করা যাবে। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে, আমরা চাকরি দেব এটা ভাবি তাহলে দেশে বেকারত্ব কমে যাবে।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি কনেশ্বর ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছি। আমার এই এলাকায় রাকিব নামে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা রয়েছে। তাকে আমরা বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। নিয়মিত তার বাগানে গিয়ে খোঁজ-খবর নিই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে ড্রাগন চাষের কোনো প্রকল্প আমাদের এখানে নেই। কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় করতে চায়, তাহলে তাকে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি। পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাকিব একজন সফল ড্রাগন চাষি। আমরা তাকে সব ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ফলে কোনো রোগ হলে কীভাবে তার প্রতিকার করা যায়, সেই ধরনের পরামর্শ আমরা দিয়েছি। তাকে প্রাকৃতিকভাবে কেঁচো সারের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি। আমাদের পরামর্শ মতো সে নিয়মিত কেঁচো সার দিচ্ছে।