ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অসময়ে মাচায় ঝুলছে হলুদ-সবুজ-ডোরাকাটা তরমুজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১৪৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দূর থেকে দেখে মনে হয় মাচায় ঝুলে আছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু কাছে গিয়ে ভালো করে খেয়াল করলে ভুল ভাঙে। লাউ বা কুমড়া নয়, মাচায় নেট দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে আছে রসাল তরমুজ।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক জাব্বির হোসেনের বাগানে অসময়ে উৎপাদিত এই তরমুজ এক চমকপ্রদ দৃশ্য।
এই হাইব্রিড তরমুজ নিয়েই বড় স্বপ্ন দেখছেন চাকলমা গ্রামের জাব্বির।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের চারদিকে বেড়িবাঁধের মতো উঁচু মাটির ঢাল। সেই ঢালে মাচা থেকে তরমুজ ঝুলে আছে। একটি-দুটি নয়, শত শত। তরমুজগুলোর রংও বাহারি। কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি কালচে সবুজ, কোনোটি আবার হলুদ। ফলগুলোর ভেতরের রঙেও পার্থক্য আছে। কাটলে টকটকে লাল বা পাকা মাল্টার মতো হলুদাভ কমলা রং দেখা যাবে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে জাব্বির হোসেন ‘তৃপ্তি’, ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করছেন। এ বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত। তিনি জাব্বিরকে তরমুজ চাষের জন্য উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে দেন।

কৃষক জাব্বির হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ২০ শতক জমিতে বীজ লাগানো হয়েছে। রোপণের ৪৪ দিনের মাঝে তরমুজে ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৫০০ তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এর মাঝে দুই থেকে তিন কেজি ওজনের তরমুজও আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১৫ থেকে ২০ দিন পরই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এই তরমুজ উৎপাদনে জাব্বির হোসেন প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করেছেন। কাজেই কোনো বিষ এতে প্রয়োগ করা হয়নি। পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন, ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপপদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। এসবই তিনি করেছেন কৃষি অফিসের পরামর্শে।

সব মিলিয়ে জাব্বিরের খরচ হয়েছে ৩৭ হাজার টাকার মতো। এখন বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সেই হিসাব করে লাভের আশায় কৃষক জাব্বির হোসেনের মুখে ফুটেছে প্রশান্তির হাসি।

এলাকার কৃষক মিলন সরকার বলেন, ‘অসময়ে তরমুজ চাষ করে জাব্বির হোসেন এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। আমি নিজে তার বাগান দেখেছি। বাগানে প্রচুর ফল এসেছে। সঙ্গে অনেক ফুলও আছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আরো ফল আসবে বলে মনে হচ্ছে। এগুলো বিক্রি করে সে ভালো লাভ করতে পারবে। ’

নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিশ্রম করলে তার ফল আসবেই। কৃষক জাব্বির হোসেন তার প্রমাণ। এই কৃষক সামান্য জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলন করে উপজেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ করা এই ফসল এখানকার আরো অনেক কৃষককে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ’ এ বিষয়ে তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অসময়ে মাচায় ঝুলছে হলুদ-সবুজ-ডোরাকাটা তরমুজ

আপডেট টাইম : ০৩:০৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দূর থেকে দেখে মনে হয় মাচায় ঝুলে আছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু কাছে গিয়ে ভালো করে খেয়াল করলে ভুল ভাঙে। লাউ বা কুমড়া নয়, মাচায় নেট দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে আছে রসাল তরমুজ।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক জাব্বির হোসেনের বাগানে অসময়ে উৎপাদিত এই তরমুজ এক চমকপ্রদ দৃশ্য।
এই হাইব্রিড তরমুজ নিয়েই বড় স্বপ্ন দেখছেন চাকলমা গ্রামের জাব্বির।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের চারদিকে বেড়িবাঁধের মতো উঁচু মাটির ঢাল। সেই ঢালে মাচা থেকে তরমুজ ঝুলে আছে। একটি-দুটি নয়, শত শত। তরমুজগুলোর রংও বাহারি। কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি কালচে সবুজ, কোনোটি আবার হলুদ। ফলগুলোর ভেতরের রঙেও পার্থক্য আছে। কাটলে টকটকে লাল বা পাকা মাল্টার মতো হলুদাভ কমলা রং দেখা যাবে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে জাব্বির হোসেন ‘তৃপ্তি’, ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করছেন। এ বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত। তিনি জাব্বিরকে তরমুজ চাষের জন্য উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে দেন।

কৃষক জাব্বির হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ২০ শতক জমিতে বীজ লাগানো হয়েছে। রোপণের ৪৪ দিনের মাঝে তরমুজে ফুল ও ফল আসে। বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৫০০ তরমুজ রয়েছে তার জমিতে। এর মাঝে দুই থেকে তিন কেজি ওজনের তরমুজও আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১৫ থেকে ২০ দিন পরই তিনি তরমুজ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এই তরমুজ উৎপাদনে জাব্বির হোসেন প্রাকৃতিক জৈব সার ব্যবহার করেছেন। কাজেই কোনো বিষ এতে প্রয়োগ করা হয়নি। পোকামাকড় নিধনের জন্য তিনি ফেরোমন, ফাঁদ ও ইয়োলো কালার ট্যাপপদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। এসবই তিনি করেছেন কৃষি অফিসের পরামর্শে।

সব মিলিয়ে জাব্বিরের খরচ হয়েছে ৩৭ হাজার টাকার মতো। এখন বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সেই হিসাব করে লাভের আশায় কৃষক জাব্বির হোসেনের মুখে ফুটেছে প্রশান্তির হাসি।

এলাকার কৃষক মিলন সরকার বলেন, ‘অসময়ে তরমুজ চাষ করে জাব্বির হোসেন এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। আমি নিজে তার বাগান দেখেছি। বাগানে প্রচুর ফল এসেছে। সঙ্গে অনেক ফুলও আছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আরো ফল আসবে বলে মনে হচ্ছে। এগুলো বিক্রি করে সে ভালো লাভ করতে পারবে। ’

নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিশ্রম করলে তার ফল আসবেই। কৃষক জাব্বির হোসেন তার প্রমাণ। এই কৃষক সামান্য জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলন করে উপজেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ করা এই ফসল এখানকার আরো অনেক কৃষককে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ’ এ বিষয়ে তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।