ঢাকা ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরির পেছনে না ছুটে ফলবাগান করেন ফারুক, বছরে আয় লাখ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৯:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১২৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উচ্চশিক্ষা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের হরিরাম গ্রামের আবু রায়হান ফারুক (২৫)। তার সমন্বিত ফলের বাগান থেকে প্রতি বছর লাখ টাকা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৮-৯ জনের।

আবু রায়হান ফারুক সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করছেন।

ফারুকের বাগানে বিভিন্ন জাতের ফলের মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৫০০ মাল্টার গাছ, পেঁপেগাছ ৪০০, আমগাছ ৬০০,
কমলা গাছ ৩০০, পেয়ারা ১ হাজার, ড্রাগন ২০০ ও ১৩০টি আঙুরগাছসহ বিভিন্ন সবজিও রয়েছে। ফারুকের বাগানের সব গাছে কম বেশি ফলও আসছে।

 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। গত বছর ৯ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আবু রায়হান ২০১৮ সালে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২৫ বিঘা জমিতে মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করেন। সারিবদ্ধভাবে লাগানো গাছগুলোয় থোঁকায় থোঁকায় ঝুলছে সবুজ বর্ণের গ্রিন ব্রি-১ জাতের মাল্টা ও পেয়ারা।

কীটনাশক ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার্থে ফুড প্যাক দিয়ে মোড়ানো হয়েছে মাল্টাগুলোকে। মাল্টার পাশাপাশি পেঁপে, পেয়ারা, আম, কমলা, আঙুরসহ সবজিও করা হয়েছে। একদিকে ফলের বাগান অপরদিকে সবজির ক্ষেত থেকে হচ্ছে বাড়তি আয়। সমন্বিত এই বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা।

 

স্থানীয় মোক্তার আলী বলেন, ফারুক সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। তার মাল্টাবাগান দারুন সাড়া ফেলেছে আমাদের এখানে। ওর মাল্টার বাগান দেখে আমি খুবই খুশি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে মাল্টা চাষ মনে হয় লাভজনক হবে। আমিও চিন্তা ভাবনা করছি, ওর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে মাল্টার বাগান করব।

আবু রায়হান ফারুকের বাবা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি আগে আমার এই জায়গায় বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করতাম। আমার ছেলের ছোট থেকে গাছের প্রতি খুব ভালোবাসা। আগে সে বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করত। তার সেই ভালোবাসা ও ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফলের বাগান করেছে। আমি তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছি। আবু রায়হান ফারুক বলেন, ছোট থেকেই গাছের প্রতি ভালোবাসা ও ইউটিউব দেখে মাল্টা চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার বাগানে বিভিন্ন জাতের মাল্টাগাছ আছে। এর মধ্যে ৩টি জাত দিয়ে বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করছি। পাইকাররা বাগান থেকে মাল্টা প্রতি মণ ৪-৫ হাজার টাকায় কিনছেন। শুরু করার দ্বিতীয় বছরে ২ টন আর গত বছরে ৪ টন মাল্টা বিক্রি করেছি।

তিনি আরও বলেন, পেঁপে বিক্রি করছি ৫-৬শ টাকা মণ ও পেয়ারা ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। আমার মতে, বেকার হয়ে বসে না থেকে মাল্টা চাষ করতে পারেন। মাল্টা চাষ লাভজনক হবে আশা করছি।

ফারুক বলেন, এক বিঘা জমিতে মাল্টা চাষে ব্যয় হয় ৩০ হাজার টাকার মতো। খরচ বাদে প্রতি বছর লাভ হয় এক লাখের বেশি। যা আগামীতে আরও দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শামসুদ্দিন বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় কৃষকরা বিক্ষিপ্তভাবে মাল্টা চাষ করেছেন। গত মৌসুমে জেলায় ৯ মেট্রিক টনের বেশি মাল্টা চাষ হয়েছিল এ মৌসুমে মাল্টা চাষ আরও সম্প্রসারণ হওয়ায় জেলাজুড়ে ১৪-১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চাকরির পেছনে না ছুটে ফলবাগান করেন ফারুক, বছরে আয় লাখ টাকা

আপডেট টাইম : ১১:৫৯:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উচ্চশিক্ষা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের হরিরাম গ্রামের আবু রায়হান ফারুক (২৫)। তার সমন্বিত ফলের বাগান থেকে প্রতি বছর লাখ টাকা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৮-৯ জনের।

আবু রায়হান ফারুক সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করছেন।

ফারুকের বাগানে বিভিন্ন জাতের ফলের মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৫০০ মাল্টার গাছ, পেঁপেগাছ ৪০০, আমগাছ ৬০০,
কমলা গাছ ৩০০, পেয়ারা ১ হাজার, ড্রাগন ২০০ ও ১৩০টি আঙুরগাছসহ বিভিন্ন সবজিও রয়েছে। ফারুকের বাগানের সব গাছে কম বেশি ফলও আসছে।

 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। গত বছর ৯ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আবু রায়হান ২০১৮ সালে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২৫ বিঘা জমিতে মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করেন। সারিবদ্ধভাবে লাগানো গাছগুলোয় থোঁকায় থোঁকায় ঝুলছে সবুজ বর্ণের গ্রিন ব্রি-১ জাতের মাল্টা ও পেয়ারা।

কীটনাশক ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার্থে ফুড প্যাক দিয়ে মোড়ানো হয়েছে মাল্টাগুলোকে। মাল্টার পাশাপাশি পেঁপে, পেয়ারা, আম, কমলা, আঙুরসহ সবজিও করা হয়েছে। একদিকে ফলের বাগান অপরদিকে সবজির ক্ষেত থেকে হচ্ছে বাড়তি আয়। সমন্বিত এই বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা।

 

স্থানীয় মোক্তার আলী বলেন, ফারুক সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। তার মাল্টাবাগান দারুন সাড়া ফেলেছে আমাদের এখানে। ওর মাল্টার বাগান দেখে আমি খুবই খুশি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে মাল্টা চাষ মনে হয় লাভজনক হবে। আমিও চিন্তা ভাবনা করছি, ওর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে মাল্টার বাগান করব।

আবু রায়হান ফারুকের বাবা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি আগে আমার এই জায়গায় বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করতাম। আমার ছেলের ছোট থেকে গাছের প্রতি খুব ভালোবাসা। আগে সে বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করত। তার সেই ভালোবাসা ও ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফলের বাগান করেছে। আমি তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছি। আবু রায়হান ফারুক বলেন, ছোট থেকেই গাছের প্রতি ভালোবাসা ও ইউটিউব দেখে মাল্টা চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার বাগানে বিভিন্ন জাতের মাল্টাগাছ আছে। এর মধ্যে ৩টি জাত দিয়ে বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করছি। পাইকাররা বাগান থেকে মাল্টা প্রতি মণ ৪-৫ হাজার টাকায় কিনছেন। শুরু করার দ্বিতীয় বছরে ২ টন আর গত বছরে ৪ টন মাল্টা বিক্রি করেছি।

তিনি আরও বলেন, পেঁপে বিক্রি করছি ৫-৬শ টাকা মণ ও পেয়ারা ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। আমার মতে, বেকার হয়ে বসে না থেকে মাল্টা চাষ করতে পারেন। মাল্টা চাষ লাভজনক হবে আশা করছি।

ফারুক বলেন, এক বিঘা জমিতে মাল্টা চাষে ব্যয় হয় ৩০ হাজার টাকার মতো। খরচ বাদে প্রতি বছর লাভ হয় এক লাখের বেশি। যা আগামীতে আরও দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শামসুদ্দিন বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় কৃষকরা বিক্ষিপ্তভাবে মাল্টা চাষ করেছেন। গত মৌসুমে জেলায় ৯ মেট্রিক টনের বেশি মাল্টা চাষ হয়েছিল এ মৌসুমে মাল্টা চাষ আরও সম্প্রসারণ হওয়ায় জেলাজুড়ে ১৪-১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে।