ঢাকা ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিরল দর্শন ধলাভ্রু চুটকি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুন ২০১৫
  • ৩১৪ বার
বিরল দর্শন। প্রচণ্ড শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে দেশে। সুন্দরবন ব্যতীত দেশের প্রায় বনাঞ্চলেই যৎসামান্য নজরে পড়ে। বিচরণ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনাঞ্চলে এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পার্বত্য অরণ্যে। স্যাঁতসেঁতে এলাকা দারুণ পছন্দ এদের। বেশিরভাগ সময় একাকী বিচরণ করে। স্বভাবে মোটামুটি শান্ত। মাঝারি আকৃতির গাছের চিকন ডালে বসে অকারণে এদিক সেদিক ঘাড়টাকে ফেরাতে থাকে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। গান গায় ‘সিট-সি-সি’ সুরে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, লাওস, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত।
প্রিয় পাঠক, একটি সুখবর আছে। দেশের বিভন্ন পত্র-পত্রিকায় পাখ-পাখালি নিয়ে লেখার ফলে অবিশ্বাস্য একটি পরিবর্তন ঘটেছে রাজধানীর কাঁটাবনের পাখির দোকানগুলোতে। আগের মতো কাঁটাবনে এখন আর দেশীয় বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে না। গত সপ্তাহে কাঁটাবন পর্যবেক্ষণকালীন লক্ষ্য করেছি কোনো দোকানেই দেশীয় পাখি নেই। দোকানিদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সাফ জানিয়ে দেন, ‘সাংবাদিক আর পুলিশ ভীতির কারণে দেশীয় পাখি বিক্রি করতে পারছি না। এখানে যা বিক্রি হচ্ছে ওদের সবই ভিনদেশি পাখি। যাদের জন্ম-মৃত্যু খাঁচায়ই ঘটে।’ কথাটা শুনে বেশ ভালো লেগেছে। একটা আত্মতৃপ্তিবোধ কাজ করেছে নিজের ভেতরেও। যাক সচেতনা ফিরে এসেছে দোকানিদের ভেতরে কিছুটা। এখন ভালোয় ভালো এর ধারাবাহিকতাটা রক্ষা হলেই হয়। গোটা দেশের পাখির দোকানিদের কাছ থেকে এ রকমটি আশা করছি আমরা।
যে পাখিটি নিয়ে লিখছি তার বাংলা নাম: ‘ধলাভ্রু চুটকি’, ইংরেজি নাম: স্নোয়ি ব্রোয়েড ফ্লাইকেচার (Snowy-browed Flycatcher), বৈজ্ঞানিক নাম: Ficedula hyperythra। এরা ‘সাদাভ্রু চটক’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য কম-বেশি ১১-১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির চোখের ওপর মোটা সাদাভ্রু। থুতনি, কপাল, চোখের সামনের দিক কালচে। মাথা পিঠ গাঢ় নীল। ডানার মধ্য পালক লালচে। গলা এবং বুক লালচে-কমলা। পেট সাদা। স্ত্রী পাখির ভ্রু কমলা-বাদামি। বুকে ফুটকি। ডানার মধ্য পালক এবং লেজ লালচে। উভয়ের ঠোঁট শিঙ কালো। পা ধূসর।
প্রধান খাবার শুককীট, মাকড়সা, কেঁচো ইত্যাদি।
প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে অক্টোবর। শৈবাল বা তন্তু দিয়ে গাছের ডালে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিরল দর্শন ধলাভ্রু চুটকি

আপডেট টাইম : ০৫:১৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুন ২০১৫
বিরল দর্শন। প্রচণ্ড শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে দেশে। সুন্দরবন ব্যতীত দেশের প্রায় বনাঞ্চলেই যৎসামান্য নজরে পড়ে। বিচরণ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বনাঞ্চলে এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পার্বত্য অরণ্যে। স্যাঁতসেঁতে এলাকা দারুণ পছন্দ এদের। বেশিরভাগ সময় একাকী বিচরণ করে। স্বভাবে মোটামুটি শান্ত। মাঝারি আকৃতির গাছের চিকন ডালে বসে অকারণে এদিক সেদিক ঘাড়টাকে ফেরাতে থাকে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। গান গায় ‘সিট-সি-সি’ সুরে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, লাওস, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত।
প্রিয় পাঠক, একটি সুখবর আছে। দেশের বিভন্ন পত্র-পত্রিকায় পাখ-পাখালি নিয়ে লেখার ফলে অবিশ্বাস্য একটি পরিবর্তন ঘটেছে রাজধানীর কাঁটাবনের পাখির দোকানগুলোতে। আগের মতো কাঁটাবনে এখন আর দেশীয় বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে না। গত সপ্তাহে কাঁটাবন পর্যবেক্ষণকালীন লক্ষ্য করেছি কোনো দোকানেই দেশীয় পাখি নেই। দোকানিদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সাফ জানিয়ে দেন, ‘সাংবাদিক আর পুলিশ ভীতির কারণে দেশীয় পাখি বিক্রি করতে পারছি না। এখানে যা বিক্রি হচ্ছে ওদের সবই ভিনদেশি পাখি। যাদের জন্ম-মৃত্যু খাঁচায়ই ঘটে।’ কথাটা শুনে বেশ ভালো লেগেছে। একটা আত্মতৃপ্তিবোধ কাজ করেছে নিজের ভেতরেও। যাক সচেতনা ফিরে এসেছে দোকানিদের ভেতরে কিছুটা। এখন ভালোয় ভালো এর ধারাবাহিকতাটা রক্ষা হলেই হয়। গোটা দেশের পাখির দোকানিদের কাছ থেকে এ রকমটি আশা করছি আমরা।
যে পাখিটি নিয়ে লিখছি তার বাংলা নাম: ‘ধলাভ্রু চুটকি’, ইংরেজি নাম: স্নোয়ি ব্রোয়েড ফ্লাইকেচার (Snowy-browed Flycatcher), বৈজ্ঞানিক নাম: Ficedula hyperythra। এরা ‘সাদাভ্রু চটক’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য কম-বেশি ১১-১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির চোখের ওপর মোটা সাদাভ্রু। থুতনি, কপাল, চোখের সামনের দিক কালচে। মাথা পিঠ গাঢ় নীল। ডানার মধ্য পালক লালচে। গলা এবং বুক লালচে-কমলা। পেট সাদা। স্ত্রী পাখির ভ্রু কমলা-বাদামি। বুকে ফুটকি। ডানার মধ্য পালক এবং লেজ লালচে। উভয়ের ঠোঁট শিঙ কালো। পা ধূসর।
প্রধান খাবার শুককীট, মাকড়সা, কেঁচো ইত্যাদি।
প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে অক্টোবর। শৈবাল বা তন্তু দিয়ে গাছের ডালে কাপ আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৪টি।