হাওর বার্তা ডেস্কঃ চতুর্থবারের মতো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হচ্ছে শিক্ষা আইন। বুধবার এটির খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষ্যে এদিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের ১৩ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কমিটির দেওয়া পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সেটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ সামনে রেখে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু আছে কি না, তাও সতর্কতার সঙ্গে দেখা হয়েছে। আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাষাগত ত্রুটিবিচ্যুতি ঠিক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আসলে শিক্ষার জন্য অসংখ্য আইন আছে। সবকিছু এক আইনে অন্তর্ভুক্ত করার যেমন দরকার নেই, তেমনই এটা সম্ভবও নয়। তাই প্রয়োজনের নিরিখে খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
সূত্রমতে, এর আগে শিক্ষা আইন যখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়, তখন তাতে নানা ধরনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। যে কারণে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক থেকে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে সরকার। এরপর এটির পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১১ সালে এই আইন তৈরির উদ্যোগ নেয়। এই আইনের বিভিন্ন দিক প্রথম থেকেই ব্যাপক আলোচনায় এসেছিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-শিক্ষকদের কোচিং ও কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট টিউশন, নোট-গাইড ও সহায়ক পাঠ্য ব্যবসা। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও বিদেশি শিক্ষাক্রমের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ইত্যাদিও আলোচনায় ছিল।
প্রথম খসড়া প্রকাশের পরপরই এ আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষক ও পুস্তক সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। ফলে প্রথমে শাস্তির বিধানসহ একটি শক্তিশালী আইনের খসড়া প্রস্তাব করা হলেও ২০১৩ সালে তা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ‘দুর্বল’ করে খসড়া তৈরি করা হয়। পরে রহস্যজনক কারণে আইনটির খসড়া তৈরির কাজে ধীরগতির সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রথমে শিক্ষা আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এর ঢাউস আকৃতি, অস্পষ্টতা, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসে।
সূত্রমতে, প্রস্তাবিত আইনে শিক্ষকদের শাস্তির ব্যাপারে মোটামুটি নমনীয়তা দেখানো হয়েছে। যথারীতি বাণিজ্যিক কোচিংকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা কোচিং সেন্টার করলেও সেখানে নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারবেন না। তারা অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন পড়াতে পারবেন। এতে বলা হয়, কোনো নামেই নোট-গাইড চলবে না। আইনে পাঁচ স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো-প্রথম শ্রেণির আগে প্রাক-প্রাথমিক, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চ মাধ্যমিক এবং এর পর উচ্চশিক্ষা স্তর।
পরে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরের বছর তা ১২টি পর্যবেক্ষণসহ ফেরত আসে। প্রস্তাবিত ১৮ পৃষ্ঠার খসড়ায় মোট ৫৭টি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের প্রথম খসড়ায় ৬৭টি ধারা ছিল।