হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ধীরগতিতে পানি নামতে শুরু করলেও পরিস্থি তি এখনো ভয়াবহ। এখন নদনদীর দুই কূল প্লাবিত বানের পানি ধাবিত হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চলের দিকে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণাধীন ১০৯টি নদনদীর মধ্যে ৯৫টির পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনক মাত্রায়। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, ধরলা, দুধকুমারসহ ৯টি প্রধান নদনদীর পানি ১৯টি পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল রাতে বলেন, বর্তমানে দেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। আরো তিন জেলায় বন্যার বিস্তার ঘটবে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা উপদ্রুত জেলাগুলো থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি বাড়ছে মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে। আগামী তিন দিন এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এই যাত্রায় দেশে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার সম্ভাবনা নেই।
মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেল অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তত্সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, ধরলা, দুধকুমারসহ সব প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ভারতের মেঘালয় প্রদেশে ভারী বর্ষণের প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অন্যদিকে হবিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ সময় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার নদনদীসমূহের পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নদনদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯১ মিটার। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া, হাতিয়া, চিলমারী ও ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে বইছে। বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও পোড়াবাড়ি পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপরে উঠেছে যমুনা নদীর পানি। সুরমার পানি কানাইঘাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে, কুশিয়ারার পানি অমলশীদ ও শেওলায় বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা, খোয়াই নদীর পানি বল্টা, পুরাতন সুরমা নদীর পানি দেরাই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমলাকান্দা পয়েন্টে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, দেশের আট বিভাগেই আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে ৭২ ঘণ্টার আগে আবহাওয়ার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সিলেট, রংপুরসহ দেশের পাঁচ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে বন্যার অবনতি ঘটতে পারে। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশেই বৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টির প্রবণতা বেশি ছিল চট্টগ্রাম বিভাগে। এই সময়ে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয়। আজ রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।