বিজয় দাস, প্রর্তিনিধি, নেত্রকোনাঃ নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। জেলার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সবচেয়ে বেশি । এই দুই উপজেলায় প্রায় সাত শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে চার হাজারের বেশি পুকুরের মাছ।নষ্ট হয়েছে বীজতলা। আজ (২০ জুন) সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর তথ্যমতে, উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কংশ এবং ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে,দুর্গাপুর সদর, চন্ডিগড়,গাঁওগান্দিয়া ও বিরিশিরি ইউনিয়নের ৪০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির স্রোতে অন্তত দেড় শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। উপজেলার ৯৫ ভাগ তলিয়ে গেছে। কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাশেম জানান,লেঙ্গুরা ইউনিয়নে দুই শতাধিক বাড়িঘরসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে। খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন,বন্যা অবস্থা এমন খারাপ পর্যায়ে গেছে যে,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। উপজেলার ৭০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। রবিবার থেকে ১০৪ জন সেনাসদস্য উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ কাজে সহায়তা করছেন। দুর্গত পরিবারগুলো সহায়-সম্পদ ও গবাদিপশু নিয়ে ৫২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা তাদের শুকনা খাবার সরবরাহ করছি।’ তিনি আরও জানান,উপজেলার বেশিরভাগ সরকারি অফিস এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলো বন্যা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের নিচতলায় কোমরসমান পানি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অফিসে ও হাসপাতাল ভবনে রাতযাপন করছেন। বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম মাজহারুল ইসলাম জানান, বারহাট্টা উপজেলার ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার্তরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিদিন নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ মহোদয় নেত্রকোণা জেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন। এসময় তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, গোখাদ্য ও ত্রান সামগ্রী বিতরণ করেন। ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেললাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন স্থানটি পরিদর্শন এবং মেরামতের জন্য রেলসচিব বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয় লোকদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত বলেন,কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করছে।
সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার ৫৭২ সেন্টিমিটার নিচে আছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। তবে উব্দাখালি, কংসসহ ধনু নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, জেলার কংস, সোমেশ্বরী, উব্দাখালি, ধনুসহ বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এরই মধ্যে ২৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। খালিয়াজুরির ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার ২১০ জন আশ্রয় নিয়েছে।”