ঢাকা ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছ চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ মে ২০১৬
  • ৪৩৪ বার

পাবনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছ চাষ। প্রবাহমান নদীতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির এ চাষাবাদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হয়েছে বেকার যুবকদের। জেলার ফরিদপুর উপজেলার গুমানী নদীতে গড়ে উঠেছে এ ধরণের ১২টি খামার। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিলে দেশের মৎস্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

ফরিদপুরের রতনপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান। ৪০ বছরের এ যুবক চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ দেখে শখের বশে নিজ বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদীতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ২০১০ সালে মাত্র ১০ টি খাঁচা নিয়ে শুরু করেন মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছের খামার। শখের বশে শুরু করা খামার অল্প সময়েই সৌভাগ্যের জাদুর প্রদীপ হিসেবে ধরা দেয় হাফিজুরের জন্য। মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই তার খামারে এখন খাঁচার সংখ্যা বেড়ে দাঁডিয়েছে ৭০-এ। এ খামার থেকে বছরপ্রতি তার আয় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। জেলার শ্রেষ্ঠ মাছ চাষী হিসেবে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন বেশ কয়েকবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাফিজুরের খামারে লোহার রড ও জাল দিয়ে তৈরী করা হয়েছে মাছের খাঁচা। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য , ১০ ফুট প্রস্থ আর ৬ ফুট গভীরতার প্রতিটি খাঁচায় ছাড়া হয়েছে ১০০০ পিস পোনা ।

জানা যায়, পরিণত অবস্থায় প্রতিটি মাছ এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। প্রতিটি খাঁচা থেকে প্রতি তিনমাস অন্তর প্রায় ১০ মণ মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি মাছ পাইকারী বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

এ প্রসঙ্গে হাফিজুর বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে উৎপাদন খরচ কম। প্রবাহমান নদীতে মাছের জন্য আলাদা করে ঔষধ দিতে হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই রোগ বালাই প্রতিরোধ হয়। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র ভাসমান খাবার দিলেই চলে। পুকুর খননের ঝামেলা না থাকায়, আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না।

প্রথমদিকে, হাফিজুরের কর্মকান্ডকে পাগলামী মনে করলেও, পরে তার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে জেলায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু মৎস্য খামার। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরণের খামার আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাফিজুরের প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি মাছ চাষ এতটা লাভজনক হতে পারে। হাফিজুর ভাইয়ের দেখাদেখি আমি ২০১৩ সালে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করি। এ বছর আমার খামার থেকে প্রায় আট লক্ষ টাকা আয় হয়েছে।

তাদের সাফল্য দেখে খাঁচায় মাছ চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন পাশের গ্রাম পুঙ্গলীর পাভেল হাসান। তিনি জানান, একটা চাকরির জন্য কত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। খাঁচায় মাছ চাষ আমার সব দুঃখ ঘুচিয়ে দিয়েছে। আমি এখন স্বাবলম্বী। নদী তীরবর্তী এলাকার বেকার যুবকরা এ ধরণের খামার গড়ে নিজ ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, সরকারী সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে। তিনি বলেন, হাফিজুরের সাফল্যকে মৎসচাষে একটা বিপ্লব বলা যায়। তিনি গতানুগতিক পুকুরভিত্তিক মাছ চাষের বদলে এলাকার অন্য মাছ চাষীদের অনুপ্রাণিত করেছেন নতুন ধরণের মৎসচাষে। এ খামার গুলো জেলার মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্বল্প সময়ে বিরাট আবদান রেখেছে বলেও জানান তিনি।

এ সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয় ও মৎস ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় হাফিজুরকে পৃথক পৃথকভাবে ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ মৎস চাষী পদক প্রদান করে।

প্রবাহমান নদীতে খাঁচার মাছ চাষের এ পদ্ধতির সারাদেশে সম্প্রসারণ হলে, আমিষের চাহিদা পূরণ হবার পাশাপাশি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছ চাষ

আপডেট টাইম : ১১:০৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ মে ২০১৬

পাবনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছ চাষ। প্রবাহমান নদীতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির এ চাষাবাদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হয়েছে বেকার যুবকদের। জেলার ফরিদপুর উপজেলার গুমানী নদীতে গড়ে উঠেছে এ ধরণের ১২টি খামার। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিলে দেশের মৎস্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

ফরিদপুরের রতনপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান। ৪০ বছরের এ যুবক চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ দেখে শখের বশে নিজ বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদীতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ২০১০ সালে মাত্র ১০ টি খাঁচা নিয়ে শুরু করেন মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছের খামার। শখের বশে শুরু করা খামার অল্প সময়েই সৌভাগ্যের জাদুর প্রদীপ হিসেবে ধরা দেয় হাফিজুরের জন্য। মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই তার খামারে এখন খাঁচার সংখ্যা বেড়ে দাঁডিয়েছে ৭০-এ। এ খামার থেকে বছরপ্রতি তার আয় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। জেলার শ্রেষ্ঠ মাছ চাষী হিসেবে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন বেশ কয়েকবার।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাফিজুরের খামারে লোহার রড ও জাল দিয়ে তৈরী করা হয়েছে মাছের খাঁচা। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য , ১০ ফুট প্রস্থ আর ৬ ফুট গভীরতার প্রতিটি খাঁচায় ছাড়া হয়েছে ১০০০ পিস পোনা ।

জানা যায়, পরিণত অবস্থায় প্রতিটি মাছ এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। প্রতিটি খাঁচা থেকে প্রতি তিনমাস অন্তর প্রায় ১০ মণ মনোসেক্স জাতের তেলাপিয়া মাছ উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি মাছ পাইকারী বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

এ প্রসঙ্গে হাফিজুর বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে উৎপাদন খরচ কম। প্রবাহমান নদীতে মাছের জন্য আলাদা করে ঔষধ দিতে হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই রোগ বালাই প্রতিরোধ হয়। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র ভাসমান খাবার দিলেই চলে। পুকুর খননের ঝামেলা না থাকায়, আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না।

প্রথমদিকে, হাফিজুরের কর্মকান্ডকে পাগলামী মনে করলেও, পরে তার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে জেলায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু মৎস্য খামার। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরণের খামার আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাফিজুরের প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি মাছ চাষ এতটা লাভজনক হতে পারে। হাফিজুর ভাইয়ের দেখাদেখি আমি ২০১৩ সালে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করি। এ বছর আমার খামার থেকে প্রায় আট লক্ষ টাকা আয় হয়েছে।

তাদের সাফল্য দেখে খাঁচায় মাছ চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন পাশের গ্রাম পুঙ্গলীর পাভেল হাসান। তিনি জানান, একটা চাকরির জন্য কত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। খাঁচায় মাছ চাষ আমার সব দুঃখ ঘুচিয়ে দিয়েছে। আমি এখন স্বাবলম্বী। নদী তীরবর্তী এলাকার বেকার যুবকরা এ ধরণের খামার গড়ে নিজ ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, সরকারী সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে। তিনি বলেন, হাফিজুরের সাফল্যকে মৎসচাষে একটা বিপ্লব বলা যায়। তিনি গতানুগতিক পুকুরভিত্তিক মাছ চাষের বদলে এলাকার অন্য মাছ চাষীদের অনুপ্রাণিত করেছেন নতুন ধরণের মৎসচাষে। এ খামার গুলো জেলার মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্বল্প সময়ে বিরাট আবদান রেখেছে বলেও জানান তিনি।

এ সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয় ও মৎস ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় হাফিজুরকে পৃথক পৃথকভাবে ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ মৎস চাষী পদক প্রদান করে।

প্রবাহমান নদীতে খাঁচার মাছ চাষের এ পদ্ধতির সারাদেশে সম্প্রসারণ হলে, আমিষের চাহিদা পূরণ হবার পাশাপাশি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।