ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটের বন্যার সঙ্গে অল-ওয়েদার সড়কের কোনো সম্পর্ক নেই: বিশেষজ্ঞ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
  • ১৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেট ও সুনামগঞ্জের বর্তমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে কিশোরগঞ্জের ‘অল-ওয়েদার সড়ক’র কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পানি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি এবং ভৌগোলিক পরিবেশগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে এই বন্যা।

 এ বিষয়ে পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলছেন, ‘অল-ওয়েদার সড়কের সঙ্গে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার কোনো সম্পর্ক নেই। মেঘালয় থেকে বৃষ্টির পানি নামছে। গত চারদিনে চেরাপুঞ্জিতে আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় যদি ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় তাহলে গুলশান আর বারিধারা ছাড়া সব ডুবে যাবে। তাহলে কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এটা বোঝা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বলা হচ্ছে যে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে সিলেটে, সেটা সংশোধন করা উচিত। আমার স্মরণকালে আমি এর থেকেও ভয়াবহ বন্যা দেখেছি। আমি ওয়েদার ফোরকাস্টে দেখেছি আরও দুই দিন বৃষ্টিপাত হবে। যদি সেটা হয় তাহলে আরও ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বাড়বে। সেক্ষেত্রে বন্যার ভয়াবহতা স্মরণকালের মাত্রাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

তবে ড.আইনুন নিশাত বলেছেন, ‘ওয়েদার ফোরকাস্ট যা দেয়া হয় তা সবটাই হবে তা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি বৃষ্টি কমে যায়, যেমন ৫০ থেকে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় তাহলে পানি নামতে শুরু করবে। এই কারণেই বলছি এই বন্যার সঙ্গে ইটনার অল-ওয়েদার সড়কের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এছাড়া অল-ওয়েদার সড়ক বন্যার জন্য দায়ী কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, ‘একটা সড়ক কখনো বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভয়ংকর বৃষ্টি হয়েছে। আসলে আমরা যে অবস্থানে আছি; আপনি যদি ম্যাপে দেখেন তাহলে বুঝবেন আমরা হিমালয় পেনিনসুলার একটা ড্রেন ( পানি পরিবহনের স্থান)। আমরা যেহেতু নিচু অবস্থানে আছি সেক্ষেত্রে এটা একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যে পানি এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হবে। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

সেক্ষেত্রে পানির যে পরিমাণ সেটা কোনো সড়ক কেন বড় কোনো বাঁধ দিয়েও ঠেকানো সম্ভব নয় । বন্যার সঙ্গে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে সারা জীবন ধরেই। বরং সরকারের উচিত বন্যা চলে যাওয়ার পর যাতে আমাদের রাস্তাঘাট ঠিক থাকে সেটার বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বলেন তিনি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের অল-ওয়েদার সড়ক নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মতামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বন্যার জন্য অল-ওয়েদার সড়ককে দায়ী করে অনেকেই লিখেছেন, বায়োডাইভার্সিটির বিরুদ্ধে গিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই রাস্তা। অনেকেই লিখেছেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জ বাঁচাতে কিশোরগঞ্জের অল-ওয়েদার সড়ক ভেঙে দিন।’

অন্যদিকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী জানিয়েছেন,  সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ মূলত হাওড় প্রধান অঞ্চল এবং এ অঞ্চলে অবস্থিত হাওড়গুলোর পানি বিভিন্ন ছোট-বড় নদী দিয়ে দক্ষিণমুখি ধারা হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়। এই প্রবাহ ধারায় বড় কোনো বাধা সৃষ্টি হলেই তা কেবল বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে সম্ভব। অল-ওয়েদার সড়কের অবস্থান অনেকটা উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। এর ফলে হাওর দিয়ে পানি প্রবাহে কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না এই সড়ক।

কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হয় ২৯.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই অল-ওয়েদার সড়ক। প্রায় ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মিত হয়। কিশোরগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অল-ওয়েদার সড়কে ৫৯০.৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসিগার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯.৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ রয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে সড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেটসহ হাওরাঞ্চল। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও থইথই পানিতে পুরো জনপদ। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষকে উদ্ধারে প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও। বন্ধ হয়ে গেছে বিমান চলাচল। পানির তীব্র স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ অবস্থায় আশ্রয়ের খোঁজে শেষ সম্বল হাতে নিয়ে নিজ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বানভাসিরা। এছাড়া সিলেট বিভাগে বন্যার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলেও বন্যার তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৪টি জেলায়ও বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সিলেটের বন্যার সঙ্গে অল-ওয়েদার সড়কের কোনো সম্পর্ক নেই: বিশেষজ্ঞ

আপডেট টাইম : ০৮:১৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেট ও সুনামগঞ্জের বর্তমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে কিশোরগঞ্জের ‘অল-ওয়েদার সড়ক’র কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পানি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি এবং ভৌগোলিক পরিবেশগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে এই বন্যা।

 এ বিষয়ে পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলছেন, ‘অল-ওয়েদার সড়কের সঙ্গে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার কোনো সম্পর্ক নেই। মেঘালয় থেকে বৃষ্টির পানি নামছে। গত চারদিনে চেরাপুঞ্জিতে আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় যদি ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় তাহলে গুলশান আর বারিধারা ছাড়া সব ডুবে যাবে। তাহলে কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এটা বোঝা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বলা হচ্ছে যে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে সিলেটে, সেটা সংশোধন করা উচিত। আমার স্মরণকালে আমি এর থেকেও ভয়াবহ বন্যা দেখেছি। আমি ওয়েদার ফোরকাস্টে দেখেছি আরও দুই দিন বৃষ্টিপাত হবে। যদি সেটা হয় তাহলে আরও ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বাড়বে। সেক্ষেত্রে বন্যার ভয়াবহতা স্মরণকালের মাত্রাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

তবে ড.আইনুন নিশাত বলেছেন, ‘ওয়েদার ফোরকাস্ট যা দেয়া হয় তা সবটাই হবে তা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি বৃষ্টি কমে যায়, যেমন ৫০ থেকে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় তাহলে পানি নামতে শুরু করবে। এই কারণেই বলছি এই বন্যার সঙ্গে ইটনার অল-ওয়েদার সড়কের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এছাড়া অল-ওয়েদার সড়ক বন্যার জন্য দায়ী কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, ‘একটা সড়ক কখনো বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভয়ংকর বৃষ্টি হয়েছে। আসলে আমরা যে অবস্থানে আছি; আপনি যদি ম্যাপে দেখেন তাহলে বুঝবেন আমরা হিমালয় পেনিনসুলার একটা ড্রেন ( পানি পরিবহনের স্থান)। আমরা যেহেতু নিচু অবস্থানে আছি সেক্ষেত্রে এটা একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যে পানি এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হবে। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

সেক্ষেত্রে পানির যে পরিমাণ সেটা কোনো সড়ক কেন বড় কোনো বাঁধ দিয়েও ঠেকানো সম্ভব নয় । বন্যার সঙ্গে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে সারা জীবন ধরেই। বরং সরকারের উচিত বন্যা চলে যাওয়ার পর যাতে আমাদের রাস্তাঘাট ঠিক থাকে সেটার বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বলেন তিনি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের অল-ওয়েদার সড়ক নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মতামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বন্যার জন্য অল-ওয়েদার সড়ককে দায়ী করে অনেকেই লিখেছেন, বায়োডাইভার্সিটির বিরুদ্ধে গিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই রাস্তা। অনেকেই লিখেছেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জ বাঁচাতে কিশোরগঞ্জের অল-ওয়েদার সড়ক ভেঙে দিন।’

অন্যদিকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী জানিয়েছেন,  সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ মূলত হাওড় প্রধান অঞ্চল এবং এ অঞ্চলে অবস্থিত হাওড়গুলোর পানি বিভিন্ন ছোট-বড় নদী দিয়ে দক্ষিণমুখি ধারা হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়। এই প্রবাহ ধারায় বড় কোনো বাধা সৃষ্টি হলেই তা কেবল বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে সম্ভব। অল-ওয়েদার সড়কের অবস্থান অনেকটা উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। এর ফলে হাওর দিয়ে পানি প্রবাহে কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না এই সড়ক।

কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হয় ২৯.৭৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই অল-ওয়েদার সড়ক। প্রায় ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মিত হয়। কিশোরগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অল-ওয়েদার সড়কে ৫৯০.৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসিগার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯.৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ রয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে সড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেটসহ হাওরাঞ্চল। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও থইথই পানিতে পুরো জনপদ। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষকে উদ্ধারে প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও। বন্ধ হয়ে গেছে বিমান চলাচল। পানির তীব্র স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ অবস্থায় আশ্রয়ের খোঁজে শেষ সম্বল হাতে নিয়ে নিজ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বানভাসিরা। এছাড়া সিলেট বিভাগে বন্যার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলেও বন্যার তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৪টি জেলায়ও বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।