ঢাকা ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওড়ে বন্যায় দুর্দশাগ্রস্ত বানভাসিদের পাশে এক ঝাঁক তরুণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
  • ১২১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দুর্দশাগ্রস্ত বানভাসিদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেশ কয়েকটি ফেসবুক এবং অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল ও ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান।

এসব প্রতিষ্ঠানের এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী নিজ উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানবতার সেবায়।

বিশেষ করে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওড় অঞ্চলের বন্যাকবলিতদের আশ্রয়, নিরাপত্তা, খাবার ও ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন তারা।

ই- ট্যুরিজম এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইটাব) অন্যতম সদস্য মুইজ মাসুম  জানিয়েছেন, তাদের সংস্থার সহযোগিতায় ট্যুরিস্ট বোট মালিক এসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জের অধীনে এ মুহূর্তে ৭০টির মতো হাউজবোট নিয়ে এসব মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে গ্রুপগুলো। প্রায় দেড় হাজারের মতো মানুষ এসব বোটে অস্থায়ী নিবাস গেড়েছেন।

এদের মধ্যে ‘স্বপ্নঘুড়ি’ ও ‘ব ট্রাভেলার্স’ – এর সঙ্গে কথা হয় ।

জানা যায়, গত ১৪ জুন রাতে ‘জলতরঙ্গ’ ও ‘জলনিবাস’ নামে নিজেদের প্রিয় দুটি বোট নিয়ে একটি কর্পোরেট ট্রিপে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যায় স্বপ্নঘুড়ি গ্রুপ। সেটি শেষ করে নতুন ট্রিপের অপেক্ষায় প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। এরইমধ্যে ১৬ জুন আকস্মিক ঢলে সুনামগঞ্জের সাহেব বাড়ী ঘাট তলিয়ে যায়। ট্রিপের চিন্তা ভুলে গিয়ে নিজেদের দুই বোটে সেখানকার স্থানীয়দের আশ্রয় দেন তারা। তখন থেকেই এখন পর্যন্ত স্থানীয়রা তাদের বোট দুটিতে অবস্থান করছেন।

শুধু আশ্রয়ই নয়; এসব বানভাসিদের বিনামূল্যে খাবার জোগাড় করছেন তারা। বোটেই রান্নাবান্না করে তাদের খাওয়াচ্ছেন।

খাবারের জোগানে ঢাকা ও সিলেট থেকে তাদের বন্ধু, সহকর্মীরা বিকাশ, নগদের মাধ্যমে যে যতটুকু পারছেন সহায়তা করে যাচ্ছেন।

স্থানীয় প্রশাসনও মাঝেমধ্যে এসে তাদের দেখভাল করছেন।

স্বপ্নঘুড়ি গ্রুপটির অন্যতম তিন সদস্য ইফতেখার হামিদ, সিয়াম আহমেদ ও কলি চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, বর্তমানে তাদের দুই বোটে নারী ও শিশুসহ ১৭০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বোট দুটি সুনামগঞ্জ সাহেববাড়ীর ঘাটে আছে। বোটে মজুদ করা খাবার প্রথমদিনই শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে ছোট নৌকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করছেন তারা। নিজেদের গ্রুপ আর পেজে পোস্টের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করছেন। গ্রুপের ফলোয়াররা ব্যাপক সাড়াও দিচ্ছেন। শিগগিরই ঢাকা থেকে তাদের একটি টিম ২০০ মানুষের জন্য ত্রাণ-সামগ্রী নিয়ে যাবে টাঙ্গুয়ায়।

কথা হয় ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের ব-ট্রাভেলার্সের মালিক সাদিফুজ্জামান দিগন্তের সঙ্গে।

নিজের ‘ব-বোট’, ‘বজরা হাউস’সহ ৫টি বোট দিয়ে হাওড়ে বানভাসিদের সহায়তা করে যাচ্ছেন তিনি।

তার বোটে দেড়শ’র মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ মুহূর্তে টাঙ্গুয়ার হাওড় অঞ্চলেই অবস্থান করছেন দিগন্ত।

শনিবার রাতে এক অডিওবার্তায় তিনি সুনামগঞ্জের বন্যা ও বন্যাপীড়িত মানুষের ভয়াবহ দুর্দাশার কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘এমন বন্যা সুনামগঞ্জের মানুষেরা আগে দেখেনি। পানিতে তলিয়ে যায়নি এমন স্থান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সবচেয়ে কম পানি ওঠা স্থানেও হাঁটু সমান পানি। কোথাও কোমর, কোথাও বুক সমান। অনেকের ঘরের চাল ডুবে গেছে। মৌলিক চাহিদা পূরণই অসম্ভব এখন। আমরা শুধু খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছি। মাথা গোঁজার জন্য আমাদের নৌকাগুলো ছেড়ে দিয়েছি।’

দিগন্ত বলেন, ‘গত ১৬ তারিখে আমাদের তত্ত্বাবধানে সুনামগঞ্জে বেশি কয়েকজন পর্যটক অবস্থান করছিলেন। এদিন বিকেলে সুরমা নদীতে হঠাৎ করে পানি বেড়ে যায়। আমাদের একটি বোটে ১৭ জন পর্যটক আছেন এখন। আর একশ’র মতো স্থানীয় বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সবার খাবারের ব্যবস্থা করছি আমরা। আগামীকাল (রোববার) পর্যন্ত খাবারের জোগান দিতে পারব। এরপর কী হবে বলতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন,‘রোববার সকালে চামড়া বন্দরের উদ্দেশ্যে আমদের মল্লিকঘাট থেকে একটি বোট ছাড়বে। আমাদের উদ্দেশ্য পথে বন্যায় আটকেপড়াদের উদ্ধার করে উঁচু কোনো জায়গায় তাদের পৌঁছে দেওয়া। বন্যার্তদের সেবায় আমাদের মতো এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবী নিরলস ও নিঃস্বার্থ কাজ করে যাচ্ছেন। জলতরঙ্গ বোটের আরাফাত ভাই কোমর পানিতে নেমে অসহায়দের জন্য খাবার সংগ্রহ করছেন। এছাড়া নায়োরিসহ অনেকগুলো বোটে সবমিলিয়ে দেড় হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধারের বিষয়কে এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছি আমরা। উদ্ধার করে আনা মানুষের জন্য ডিসি কার্যালয়সহ সরকারি সব অফিস এবং বেসরকারি অনেক ভবনে দোতলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আকস্মিক পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছুতে পারেননি। তারা হাওড়ে বিভিন্ন নৌকায় আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওড়ে বন্যায় দুর্দশাগ্রস্ত বানভাসিদের পাশে এক ঝাঁক তরুণ

আপডেট টাইম : ১০:০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দুর্দশাগ্রস্ত বানভাসিদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেশ কয়েকটি ফেসবুক এবং অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল ও ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান।

এসব প্রতিষ্ঠানের এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী নিজ উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানবতার সেবায়।

বিশেষ করে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওড় অঞ্চলের বন্যাকবলিতদের আশ্রয়, নিরাপত্তা, খাবার ও ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন তারা।

ই- ট্যুরিজম এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইটাব) অন্যতম সদস্য মুইজ মাসুম  জানিয়েছেন, তাদের সংস্থার সহযোগিতায় ট্যুরিস্ট বোট মালিক এসোসিয়েশন অব সুনামগঞ্জের অধীনে এ মুহূর্তে ৭০টির মতো হাউজবোট নিয়ে এসব মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে গ্রুপগুলো। প্রায় দেড় হাজারের মতো মানুষ এসব বোটে অস্থায়ী নিবাস গেড়েছেন।

এদের মধ্যে ‘স্বপ্নঘুড়ি’ ও ‘ব ট্রাভেলার্স’ – এর সঙ্গে কথা হয় ।

জানা যায়, গত ১৪ জুন রাতে ‘জলতরঙ্গ’ ও ‘জলনিবাস’ নামে নিজেদের প্রিয় দুটি বোট নিয়ে একটি কর্পোরেট ট্রিপে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যায় স্বপ্নঘুড়ি গ্রুপ। সেটি শেষ করে নতুন ট্রিপের অপেক্ষায় প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। এরইমধ্যে ১৬ জুন আকস্মিক ঢলে সুনামগঞ্জের সাহেব বাড়ী ঘাট তলিয়ে যায়। ট্রিপের চিন্তা ভুলে গিয়ে নিজেদের দুই বোটে সেখানকার স্থানীয়দের আশ্রয় দেন তারা। তখন থেকেই এখন পর্যন্ত স্থানীয়রা তাদের বোট দুটিতে অবস্থান করছেন।

শুধু আশ্রয়ই নয়; এসব বানভাসিদের বিনামূল্যে খাবার জোগাড় করছেন তারা। বোটেই রান্নাবান্না করে তাদের খাওয়াচ্ছেন।

খাবারের জোগানে ঢাকা ও সিলেট থেকে তাদের বন্ধু, সহকর্মীরা বিকাশ, নগদের মাধ্যমে যে যতটুকু পারছেন সহায়তা করে যাচ্ছেন।

স্থানীয় প্রশাসনও মাঝেমধ্যে এসে তাদের দেখভাল করছেন।

স্বপ্নঘুড়ি গ্রুপটির অন্যতম তিন সদস্য ইফতেখার হামিদ, সিয়াম আহমেদ ও কলি চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, বর্তমানে তাদের দুই বোটে নারী ও শিশুসহ ১৭০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বোট দুটি সুনামগঞ্জ সাহেববাড়ীর ঘাটে আছে। বোটে মজুদ করা খাবার প্রথমদিনই শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে ছোট নৌকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করছেন তারা। নিজেদের গ্রুপ আর পেজে পোস্টের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করছেন। গ্রুপের ফলোয়াররা ব্যাপক সাড়াও দিচ্ছেন। শিগগিরই ঢাকা থেকে তাদের একটি টিম ২০০ মানুষের জন্য ত্রাণ-সামগ্রী নিয়ে যাবে টাঙ্গুয়ায়।

কথা হয় ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের ব-ট্রাভেলার্সের মালিক সাদিফুজ্জামান দিগন্তের সঙ্গে।

নিজের ‘ব-বোট’, ‘বজরা হাউস’সহ ৫টি বোট দিয়ে হাওড়ে বানভাসিদের সহায়তা করে যাচ্ছেন তিনি।

তার বোটে দেড়শ’র মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ মুহূর্তে টাঙ্গুয়ার হাওড় অঞ্চলেই অবস্থান করছেন দিগন্ত।

শনিবার রাতে এক অডিওবার্তায় তিনি সুনামগঞ্জের বন্যা ও বন্যাপীড়িত মানুষের ভয়াবহ দুর্দাশার কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘এমন বন্যা সুনামগঞ্জের মানুষেরা আগে দেখেনি। পানিতে তলিয়ে যায়নি এমন স্থান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সবচেয়ে কম পানি ওঠা স্থানেও হাঁটু সমান পানি। কোথাও কোমর, কোথাও বুক সমান। অনেকের ঘরের চাল ডুবে গেছে। মৌলিক চাহিদা পূরণই অসম্ভব এখন। আমরা শুধু খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছি। মাথা গোঁজার জন্য আমাদের নৌকাগুলো ছেড়ে দিয়েছি।’

দিগন্ত বলেন, ‘গত ১৬ তারিখে আমাদের তত্ত্বাবধানে সুনামগঞ্জে বেশি কয়েকজন পর্যটক অবস্থান করছিলেন। এদিন বিকেলে সুরমা নদীতে হঠাৎ করে পানি বেড়ে যায়। আমাদের একটি বোটে ১৭ জন পর্যটক আছেন এখন। আর একশ’র মতো স্থানীয় বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সবার খাবারের ব্যবস্থা করছি আমরা। আগামীকাল (রোববার) পর্যন্ত খাবারের জোগান দিতে পারব। এরপর কী হবে বলতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন,‘রোববার সকালে চামড়া বন্দরের উদ্দেশ্যে আমদের মল্লিকঘাট থেকে একটি বোট ছাড়বে। আমাদের উদ্দেশ্য পথে বন্যায় আটকেপড়াদের উদ্ধার করে উঁচু কোনো জায়গায় তাদের পৌঁছে দেওয়া। বন্যার্তদের সেবায় আমাদের মতো এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবী নিরলস ও নিঃস্বার্থ কাজ করে যাচ্ছেন। জলতরঙ্গ বোটের আরাফাত ভাই কোমর পানিতে নেমে অসহায়দের জন্য খাবার সংগ্রহ করছেন। এছাড়া নায়োরিসহ অনেকগুলো বোটে সবমিলিয়ে দেড় হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধারের বিষয়কে এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছি আমরা। উদ্ধার করে আনা মানুষের জন্য ডিসি কার্যালয়সহ সরকারি সব অফিস এবং বেসরকারি অনেক ভবনে দোতলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আকস্মিক পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছুতে পারেননি। তারা হাওড়ে বিভিন্ন নৌকায় আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন।