ঢাকা ১০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেঙ্গুইন হাঁস ওজন হয় আড়াই কেজি, ডিম দেয় ৩০০

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২
  • ১২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পেঙ্গুইন হাঁস বা ভারতীয় রানার হাঁসের গড় শরীরের ওজন ১.৪ থেকে ২ কেজি। এবং drakes হাঁসের চেয়ে সামান্য বড়। ড্র্যাকের গড় শরীরের ওজন ১.৩ এবং ২.৫ কেজি হয়। বছরে ডিম দেয় ৩০০ টি।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁস একটি হালকা জাতের হাঁস। যদিও এদের নাম ‘ইন্ডিয়ান রানার’, তবে এর নির্ভরযোগ্য এমন কোন তথ্য নেই যে তারা ইন্ডিয়া বা ভারত থেকেই এসেছে।

ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে জাতটির প্রাচীন অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর নামকরনে সম্ভবত, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘ইন্ডিয়া-ম্যান’ জাহাজ বা জাহাজের বন্দরকে বোঝানোর জন্য ‘ইন্ডিয়ান’ শব্দটি নেয়া হতে পারে। আমেরিকা ও ইউরোপে আমদানি করা অন্যান্য অনেক জাতের ক্ষেত্রে এই ধরনের নামকরন দেখাতে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, মাস্কোভি হাঁস। (যা আসলে মস্কো শহর থেকে নেয়া হয়নি)

ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের প্রাচীন ‘জাওয়ান মন্দিরের’ কবর দ্বারা প্রমাণিত একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যা ইঙ্গিত দেয় যে প্রায় ২০০০ বছর আগেও ইন্দো চীনে ভারতীয় রানার হাঁসের অস্তিত্ব ছিল। এই এলাকায় শত শত বছর ধরে হাঁস পালন করা হয়েছে। তারা তাদের হাঁসকে শস্য-ফসলি জমিতে চড়ানোর প্রশিক্ষণ দেয় এবং আগাছা বীজ, কীটপতঙ্গ, লার্ভা, গোলাগুলি, ছোট সরীসৃপ ইত্যাদি সন্ধান করে।

১৯ শতকের শেষ দিকে ইন্ডিয়ান রানার হাঁস ইউরোপ ও আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তখন এটি পেঙ্গুইন এর মত চলার কারণে ‘পেঙ্গুইন ডাক’ নামে পরিচিত ছিল। জাতটি ব্রিটিশ ওয়াটারফাউল স্ট্যান্ডার্ড এবং আমেরিকান পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অফ পারফেকশন উভয় দ্বারা স্বীকৃত।

বর্তমানে রানার হাঁস প্রধানত ডিম উত্পাদনের জন্য পালন করা হয়। এদের থেকে অনেক আধুনিক হাঁসের জাত তৈরি করা হয়েছে। আবাকোট রেঞ্জার, খাকি ক্যাম্পবেল, ওয়েলস হারলেকিন ইত্যাদি ভাল উদাহরণ।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের বৈশিষ্ট্য

ইন্ডিয়ান রানার হচ্ছে সুন্দর পালনযোগ্য জাতের হাঁস। এদের পাতলা শরীর এবং লম্বা ঘাড় আছে। এদের চোখে চোখ রেখে হালকা মাথা আছে এবং পিঠ সোজা। ভারতীয় রানার হাঁসের পা তাদের শরীরের নিচের দিকে,যার ফলে প্রজননতন্ত্র নিচের অবস্থান লক্ষনীয়।

কিছু রানার হাঁস যখন উত্তেজিত হয় তখন এরা সম্পূর্ণরূপে সোজা দাঁড়াতে পারে। এদের উচ্চতা (মাথা থেকে লেজ টিপ পর্যন্ত) মদ্দা ৫০ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি) আর মায়া হাঁস ৭৬ সেন্টিমিটার (৩০ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। মদ্দা হাঁসের লেজ কিছুটা টিকি মতন থাকে। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মায়া ও মদ্দা হাঁস নির্ধারণ করা খুব কঠিন।

গৃহপালিত যত রকমের হাঁস আছে তার মধ্যে সবথেকে বেশি কালার বৈচিত্র দেখা যায় এই হাঁসের মধ্যে । সাধারনত ৮ রঙের হাঁসের বৈচিত্র বেশি দেখা যায়। তবে ১৪ রঙের ইন্ডিয়ান রানার হাঁস ব্রিটিশ ওয়াটারফ্লল স্ট্যান্ডার্ডগুলি দ্বারা স্বীকৃত। এর স্বীকৃত বর্ণ বৈচিত্র্য কালো, বাফ, চকোলেট, কুম্বল্ল্যান্ড ব্লু, ফাওন, গ্রে, পেনসিল, হোয়াইট।

ভারতীয় রানার হাঁস অনেক উদ্দেশ্যেই পালিত হয়ে থাকে। এরা বেশ লম্বা সময় ধরে ডিম দেয় এবং এদের প্রজনন ক্ষমতাও ভালো। সৌখিন ভাবে ও জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্যেও এদের পালন করা হয়।

জাতের তথ্য

ইন্ডিয়ান রানার একটি চমৎকার গৃহস্থ হাঁস। এরা খুব চঞ্চল ও সক্রিয়। যার ফলে অন্যান্য হাঁসের তুললনায় জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য এরা বেশ দক্ষ। সম্প্রতি চিন ও পাকিস্তানে পংগপাল নিয়ন্ত্রণে এই জাতের হাঁস কার্যকরি ভুমিকা রাখে।

রানার হাঁস একটি ভালো ডিম পারা জাত। এরা বছরে প্রায় ২৫০ ডিম পারে। সুন্দর পরিচর্যা ও ভালো হাঁস বাছাই করে রাখলে এদের থকে বছরে প্রায় ৩০০ এর উপর ডিম পাওয়া যায়। এদের ডিমের রং বিভিন্ন হতে পারে, তবে অদিকাংশই রঙিন সবুজ-সাদা।

সাধারণত অন্যান্য হাঁসের তুলনায় এদের কম পানি প্রয়োজন। পুকুর ছাড়াই রানার হাঁস পালন করা যায়। ইন্ডিয়ান রানার হাসের গড় জীবদ্দশা প্রায় ৮-১২ বছর।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁস | জাতের তথ্য বা প্রোফাইল 

জাতের নাম : ইন্ডিয়ান রানার ।
অন্য নাম : পেংগুইন হাঁস, রানার।
পালনের উদ্দ্যেশ্য : ডিমের জন্য, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ।
জাতের আচরণ : শান্ত,আকর্ষনীয়,শক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ ।
আকার : মাঝারি। সাধারণত ১.৫ থেকে ২.৩ কেজি।
তা দেয়ার প্রবনতা : সাধারণ।
জলবায়ু সহনশীলতা : সব জলবায়ু।
ডিম রঙ : সাদা, সবুজাভ সাদা।
ডিমের আকার : বড়।(৬৫-৮০ গ্রাম প্রায়)
ডিম উৎপাদনশীলতা : ভাল (প্রায় ৩০০ ডিম/বছর)
বৈচিত্র্য অনেক রঙ জাতের মধ্যে প্রদর্শিত হয়।
মূল দেশ : ভারত,তবে অনেকের মতেই ইন্দোনেশিয়ার উপদ্বীপে।
টেবিলঃ ইনন্ডিয়ান রানার হাঁস
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পেঙ্গুইন হাঁস ওজন হয় আড়াই কেজি, ডিম দেয় ৩০০

আপডেট টাইম : ০৯:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পেঙ্গুইন হাঁস বা ভারতীয় রানার হাঁসের গড় শরীরের ওজন ১.৪ থেকে ২ কেজি। এবং drakes হাঁসের চেয়ে সামান্য বড়। ড্র্যাকের গড় শরীরের ওজন ১.৩ এবং ২.৫ কেজি হয়। বছরে ডিম দেয় ৩০০ টি।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁস একটি হালকা জাতের হাঁস। যদিও এদের নাম ‘ইন্ডিয়ান রানার’, তবে এর নির্ভরযোগ্য এমন কোন তথ্য নেই যে তারা ইন্ডিয়া বা ভারত থেকেই এসেছে।

ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে জাতটির প্রাচীন অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর নামকরনে সম্ভবত, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘ইন্ডিয়া-ম্যান’ জাহাজ বা জাহাজের বন্দরকে বোঝানোর জন্য ‘ইন্ডিয়ান’ শব্দটি নেয়া হতে পারে। আমেরিকা ও ইউরোপে আমদানি করা অন্যান্য অনেক জাতের ক্ষেত্রে এই ধরনের নামকরন দেখাতে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, মাস্কোভি হাঁস। (যা আসলে মস্কো শহর থেকে নেয়া হয়নি)

ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের প্রাচীন ‘জাওয়ান মন্দিরের’ কবর দ্বারা প্রমাণিত একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যা ইঙ্গিত দেয় যে প্রায় ২০০০ বছর আগেও ইন্দো চীনে ভারতীয় রানার হাঁসের অস্তিত্ব ছিল। এই এলাকায় শত শত বছর ধরে হাঁস পালন করা হয়েছে। তারা তাদের হাঁসকে শস্য-ফসলি জমিতে চড়ানোর প্রশিক্ষণ দেয় এবং আগাছা বীজ, কীটপতঙ্গ, লার্ভা, গোলাগুলি, ছোট সরীসৃপ ইত্যাদি সন্ধান করে।

১৯ শতকের শেষ দিকে ইন্ডিয়ান রানার হাঁস ইউরোপ ও আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তখন এটি পেঙ্গুইন এর মত চলার কারণে ‘পেঙ্গুইন ডাক’ নামে পরিচিত ছিল। জাতটি ব্রিটিশ ওয়াটারফাউল স্ট্যান্ডার্ড এবং আমেরিকান পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অফ পারফেকশন উভয় দ্বারা স্বীকৃত।

বর্তমানে রানার হাঁস প্রধানত ডিম উত্পাদনের জন্য পালন করা হয়। এদের থেকে অনেক আধুনিক হাঁসের জাত তৈরি করা হয়েছে। আবাকোট রেঞ্জার, খাকি ক্যাম্পবেল, ওয়েলস হারলেকিন ইত্যাদি ভাল উদাহরণ।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের বৈশিষ্ট্য

ইন্ডিয়ান রানার হচ্ছে সুন্দর পালনযোগ্য জাতের হাঁস। এদের পাতলা শরীর এবং লম্বা ঘাড় আছে। এদের চোখে চোখ রেখে হালকা মাথা আছে এবং পিঠ সোজা। ভারতীয় রানার হাঁসের পা তাদের শরীরের নিচের দিকে,যার ফলে প্রজননতন্ত্র নিচের অবস্থান লক্ষনীয়।

কিছু রানার হাঁস যখন উত্তেজিত হয় তখন এরা সম্পূর্ণরূপে সোজা দাঁড়াতে পারে। এদের উচ্চতা (মাথা থেকে লেজ টিপ পর্যন্ত) মদ্দা ৫০ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি) আর মায়া হাঁস ৭৬ সেন্টিমিটার (৩০ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। মদ্দা হাঁসের লেজ কিছুটা টিকি মতন থাকে। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মায়া ও মদ্দা হাঁস নির্ধারণ করা খুব কঠিন।

গৃহপালিত যত রকমের হাঁস আছে তার মধ্যে সবথেকে বেশি কালার বৈচিত্র দেখা যায় এই হাঁসের মধ্যে । সাধারনত ৮ রঙের হাঁসের বৈচিত্র বেশি দেখা যায়। তবে ১৪ রঙের ইন্ডিয়ান রানার হাঁস ব্রিটিশ ওয়াটারফ্লল স্ট্যান্ডার্ডগুলি দ্বারা স্বীকৃত। এর স্বীকৃত বর্ণ বৈচিত্র্য কালো, বাফ, চকোলেট, কুম্বল্ল্যান্ড ব্লু, ফাওন, গ্রে, পেনসিল, হোয়াইট।

ভারতীয় রানার হাঁস অনেক উদ্দেশ্যেই পালিত হয়ে থাকে। এরা বেশ লম্বা সময় ধরে ডিম দেয় এবং এদের প্রজনন ক্ষমতাও ভালো। সৌখিন ভাবে ও জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্যেও এদের পালন করা হয়।

জাতের তথ্য

ইন্ডিয়ান রানার একটি চমৎকার গৃহস্থ হাঁস। এরা খুব চঞ্চল ও সক্রিয়। যার ফলে অন্যান্য হাঁসের তুললনায় জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য এরা বেশ দক্ষ। সম্প্রতি চিন ও পাকিস্তানে পংগপাল নিয়ন্ত্রণে এই জাতের হাঁস কার্যকরি ভুমিকা রাখে।

রানার হাঁস একটি ভালো ডিম পারা জাত। এরা বছরে প্রায় ২৫০ ডিম পারে। সুন্দর পরিচর্যা ও ভালো হাঁস বাছাই করে রাখলে এদের থকে বছরে প্রায় ৩০০ এর উপর ডিম পাওয়া যায়। এদের ডিমের রং বিভিন্ন হতে পারে, তবে অদিকাংশই রঙিন সবুজ-সাদা।

সাধারণত অন্যান্য হাঁসের তুলনায় এদের কম পানি প্রয়োজন। পুকুর ছাড়াই রানার হাঁস পালন করা যায়। ইন্ডিয়ান রানার হাসের গড় জীবদ্দশা প্রায় ৮-১২ বছর।

ইন্ডিয়ান রানার হাঁস | জাতের তথ্য বা প্রোফাইল 

জাতের নাম : ইন্ডিয়ান রানার ।
অন্য নাম : পেংগুইন হাঁস, রানার।
পালনের উদ্দ্যেশ্য : ডিমের জন্য, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ।
জাতের আচরণ : শান্ত,আকর্ষনীয়,শক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ ।
আকার : মাঝারি। সাধারণত ১.৫ থেকে ২.৩ কেজি।
তা দেয়ার প্রবনতা : সাধারণ।
জলবায়ু সহনশীলতা : সব জলবায়ু।
ডিম রঙ : সাদা, সবুজাভ সাদা।
ডিমের আকার : বড়।(৬৫-৮০ গ্রাম প্রায়)
ডিম উৎপাদনশীলতা : ভাল (প্রায় ৩০০ ডিম/বছর)
বৈচিত্র্য অনেক রঙ জাতের মধ্যে প্রদর্শিত হয়।
মূল দেশ : ভারত,তবে অনেকের মতেই ইন্দোনেশিয়ার উপদ্বীপে।
টেবিলঃ ইনন্ডিয়ান রানার হাঁস