হাওর বার্তা ডেস্কঃ আবারও শুরু হয়েছে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া। প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর সোমবার (১৩ জুন) শুরু হয়েছে নিবন্ধন কার্যক্রম। এই প্রক্রিয়ায় দেশটিতে যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা নিবন্ধন করতে পারবেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল আলম জানান, মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের ডাটাবেজ করা হচ্ছে। আগ্রহী কর্মীদের প্রথমে বিএমইটির ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। তারপর তারা এখান থেকে কর্মী বাছাই করবে।
কোন কোন কাজে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া
মূলত কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবেই কর্মী নেবে তারা।
যেভাবে নিবন্ধন করবেন
মোহাম্মদ শহিদুল আলম জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএমইটির ৪২টি কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া দেশের ১১টি সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সরাসরি নিবন্ধন করা যাবে। সেক্ষেত্রে আগ্রহী কর্মীদের সঙ্গে পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি এবং কোনো সার্টিফিকেট থাকলে তা নিয়ে যেতে হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
নিবন্ধন কেন্দ্রে আগ্রহী শ্রমিকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের নির্ধারিত কর্মীরা আগ্রহীর তথ্য নিবন্ধন পোর্টালে সংযুক্ত করতে সহায়তা করবেন। এছাড়া সরকার অনুমোদিত ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপেও নিবন্ধন করা যাবে। সেক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি ২০০ টাকার সঙ্গে অ্যাপটির সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১০০, অর্থাৎ ৩০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে সশরীরে কেন্দ্র থেকে নিবন্ধন করতে ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
নিবন্ধনের যোগ্যতা
১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যে কেউ নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দক্ষতা সনদের প্রয়োজন নেই। তবে আগ্রহী কর্মীর নামে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এই নিবন্ধনের কার্যকারিতা থাকবে দুই বছর। এই সময়ের মধ্যে আগ্রমী কর্মী নিজের সম্পের্কে যেকোনো তথ্য আপডেট অথবা এডিট করতে পারবেন। কর্মীর নতুন কোনে ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করলে সেই সম্পর্কিত সার্টিফিকেট আপলোড করা যাবে। তবে বিদেশ যাওয়ার জন্য যারা আগে বিএমইটিতে নিবন্ধন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে নতুন করে নিবন্ধন করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আগে থেকে নিবন্ধিত কর্মীও আপডেট করতে পারবেন। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কর্মীর ফোন নম্বরে একটি বার্তা যাবে।
নিবন্ধনের পর যেভাবে নিয়োগ হবে
বিএমইটি থেকে রোববার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসকল কর্মীর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি অথবা অন্যকোনো বৈধ কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ রয়েছে তারা সেই প্রশিক্ষণের সনদ নিবন্ধনের সময় আপলোড করলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এনিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সেসময় কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে নূন্যতম ইংরেজির জ্ঞান। মালয় ভাষার জ্ঞান বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে মালয় ভাষার জ্ঞান না থাকলে তাকে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।
বিএমইটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল আলম জানান, আগ্রহীরা কে কোন খাতে কাজ করতে চান নিবন্ধনে তা উল্লেখ করতে হবে। নিবন্ধনে যে তথ্য থাকবে তা এজেন্সি ও মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারাও দেখতে পাবেন। বিভিন্ন খাতের নিয়োগকর্তা নিবন্ধিত কর্মীদের কেমন যোগ্যতা, বয়স এমনকি ছবিতে চেহারা দেখে সেই অনুযায়ী তাদের কেমন কর্মী দরকার, কত দরকার তা চেয়ে পাঠালে বিএমইটি যে ধরনের পদ চাওয়া হয়েছে, যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তার চেয়ে হয়ত দ্বিগুণ নাম পাঠাবে হবে রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটির মহাপরিচালক বলেন, তারা (নিয়োগদাতা) কর্মী বাছাই করার পর ওই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ ও মেডিকেল পরীক্ষা করাবেন। এখান থেকে যারা বাদ পড়বেন তাদের নাম আবার নিবন্ধিত তালিকায় ফেরত যাবে। নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে গেলে ভিসার আবেদন পাঠাবে এজেন্সি। পরে মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগদাতা বিমান টিকেট পাঠাবেন। তবে বাংলাদেশ অংশের স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ কর্মীকে বহন করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার যারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হবেন, মালয়েশিয়া সরকার যদি সেগুলো নির্বাচন করে শুধুমাত্র তারাই মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের মেডিকেল পরীক্ষা করতে পারবেন।
সুযোগ সুবিধা
মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর বাংলাদেশি কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত খরচ, মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ ইত্যাদি সেখানকার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে। তবে একেক খাতে কর্মীদের বেতন একেক রকম।
মোহাম্মদ শহিদুল আলম বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনেকটা সিভি আপলোড করে রাখার মতো। যা বিএমইটি, এজেন্সি ও মালয়েশিয়ায় নিয়োগদাতা কোম্পানি দেখতে পাবেন। কর্মী যখন একবার বুঝবেন যেকোনো ধরণের দক্ষতা থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়, তখন তিনি নিজেই প্রশিক্ষণ নেবে। কয়দিন পরে ক্লিনারের কাজেও নানা মেশিন ব্যবহারের দক্ষতা লাগবে। না হলে কেউ নিয়োগ পাবে না।
বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজার হিসেবে মালয়েশিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ থেকে দুইবার কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। সর্বশেষ ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী প্রেরণবিষয়ক একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করে। এরপরও কর্মী নিয়োগ বন্ধ ছিল। কারণ মালয়েশিয়ার তরফ থেকে শুধুমাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। পরে বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। এছাড়া বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে। এরপর থেকে ছয়মাস ধরে দুই দেশের সরকারের মধ্যে শুধু চিঠি চালাচালি হয় এবং বারবার মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে চলতি মাসের দুই তারিখ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানানের উপস্থিতিতে ঢাকায় দুই দেশের একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিষয়টির এক ধরণের সুরাহা হয়। নিদিষ্ট সংখ্যায় এজেন্সির উল্লেখ না থাকলেও মালয়েশিয়া শুধুমাত্র তার পছন্দমতো এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি বলছে, যে ১২টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নেয় তাদের কোনোটির ক্ষেত্রেই রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের বিষয়টি এমন নয় যেমনটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চাওয়া হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি