হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতে মহানবী (সা.) ও তার সহধর্মিণীকে নিয়ে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গতকাল শনিবারও বিভিন্ন সংগঠনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। নেতৃবৃন্দ মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্যই ভারত উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্টে পরিণত হয়েছে। ভারত থেকে মুসলমানদের নাম নিশানা মুছে ফেলা যাবে না। অবিলম্বে নবী (সা.) ও তার সহধর্মিণীকে নিয়ে কটূক্তিকারী কুলাঙ্গারদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান এবং মুসলিম বিশ্বের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বিভিন্ন ইসলামী দলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আত বাংলাদেশ ঢাকা : নবীপ্রেমিক বিক্ষুব্ধ জনতা ভারতের মোদি সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ভারত থেকে মুসলিম উৎখাতের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। মহানবী (সা.) শানে কটূক্তির প্রতিবাদে অবিলম্বে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে আগামী ১৫ জুন ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও ও স্মারকলিপি পেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি প্রিন্সিপাল আব্দুল আলিম রেজভীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব রাখেন, দলের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস কাজী মো. মুঈন উদ্দিন আশরাফী।
শাইখুল হাদীস কাজী মুঈন উদ্দিন আশরাফী বলেন, মহানবী (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য ঈমানী চেতনার ওপর চরম আঘাত। রাসূলুল্লাহ (সা.) এঁর শানে কটূক্তি ও চরম অবমাননাকর মন্তব্য করায় গোটা মুসলিম বিশ্বের হৃদয়ে আগুন জ্বলছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব মহান আল্লাহ পাকের মনোনীত প্রিয় নবীকে নিয়ে নূপুর শর্মা ও প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল যে জঘন্য মন্তব্য করেছে তা’ একজন ঈমানদার মেনে নিতে পারে না। এটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করার একটা ইস্যু মাত্র। রাসূলের (সা.) প্রতি এমন অবমাননাকর মন্তব্যই প্রমাণ করে ভারতের বিজিপি সরকার মুসলিম ধর্মবিদ্বেষী।
তিনি আরো বলেন, তার কট্টর বক্তব্যের কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা মানে দায়িত্ব শেষ হয়ে যাওয়া নয় তাঁকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ঘাপটিমেরে থাকা অসংখ্য শর্মারা এ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে। স্টান্ডিং কমিটির সিনিয়র সদস্য এম এ মতিন বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চলতি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে হবে। ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে নিন্দা জানাতে হবে এবং জবাব চাইতে হবে। নইলে আগামী ১৫ জুন ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি দিতে বাধ্য হব। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
আরো বক্তব্য রাখেন, সৈয়দ মুজাফফর আহমদ মুজাদ্দেদী, মুফতি আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, কাজী মুহাম্মদ মোবারক হোসাইন ফরায়েজী, মুফতি মাহমুদুল হাসান কাদেরী, আবদুল মালেক বুলবুল, মোহাম্মদ কাশেম, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম আশরাফী, আবুল হাশেম, গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা মুহিউদ্দীন হামিদী, কাজী জসিম উদ্দীন সিদ্দীকি, ড. মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন নঈমী, মুহাম্মদ মাঈনুদ্দীন হেলাল, পীর সিরাজুল আমিন রেজবী, পীর ওয়ালী উল্লাহ আশেকী, মোহাম্মদ ইকবাল, মুফতি এহসানুল হক বারী জিহাদী, সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আজহারী, আবদুল মোস্তফা রাহীম আজহারী, মাওলানা ফরহাদুল ইসলামী বুলবুলি, মাও. হারুনুর রশিদ সিদ্দীকি, আনিসুর রহামন আনিস, সাইফুদ্দীন আহমদ, সিদ্দীকুর রহমান সরকার, আব্দুল্লাহ আল জাবের, আবু নাসের মুসা, মুহাম্মদ ইমরান হুসাইন তুষার, হাজী রুবেল হোসেন, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, হাফেজ মুহাম্মদ ওমর ফারুক, কাজী জসিম উদ্দীন নুরী, নাজমুল হক ও আমান উল্লাহ সুন্নী।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি : ভারতের সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ব মুসলিমকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ভারতের উগ্র সাম্প্রদায়িক মোদি সরকারের মদদেই কুলাঙ্গাররা মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিতে সাহস পেয়েছে। নবী (সা.)-এর শানে বেয়াদবি করে কোনো কুলাঙ্গাররাই রেহাই পাবে না। গোটা মুসলিম সমাজের হৃদয়ে আঘাত দিয়ে ইসলামের দুশমনরা টিকে থাকতে পারবে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদে নবীর দুশমনদের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করতে হবে। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে দলের মহানগরী আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহের খান সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
আরো বক্তব্য রাখেন, মুফতী দ্বীনে আলম হারুনী, বংশাল শাখার সভাপতি মুফতী মুহিউদ্দীন, যাত্রাবাড়ী সভাপতি মুফতী ওয়াহীদুজ্জামান, সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, তেজগাঁও সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী, ছাত্র সমাজ সভাপতি আতিকুর রহমান সিদ্দিকী ও মহাসচিব এহতেশামুল হক সাখী, মাওলানা মামুন তালুকদার ও নেতা তসলিম।
মশুরীখোলা পীর সাহেব : মশুরীখোলা দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দীনিশীন পীর সাহেব আলহাজ মাওলানা শাহ মুহাম্মাদ আহছানুজ্জামান এক বিবৃতিতে ভারতের বিজেপি নেত্রী আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত মা আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) শানে কটূক্তির একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বলে মন্তব্য করেন। কেননা এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে ব্যক্তি নবীকে কটূক্তি বা গালি দিলো তার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড (তাবরানী)। পীর সাহেব আরো বলেন, ভারত সরকার সবসময়ই ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এবারের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। বিশ্ব মুসলিমদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মোহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুমিনগণের মাতা হযরত আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর শানে ভারত সরকারের মদদপুষ্ট নেত্রী চরম অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার পরও সরকার নীরবতা পালন করছে। আজ সারা মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আরব বিশ্বসহ সারা দেশের মুসলমান আজ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। এর দায় ভারত সরকারকে নিতে হবে। তাই অনতিবিলম্বে সরকারকে অপরাধীদের যথাযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার আহব্বান জানাচ্ছি। সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এ বিষয়ে বিবৃতি প্রদানপূর্বক ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে উপযুক্ত জবাব প্রদান করা।