ঢাকা ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ের ১৬ গ্রামের মানুষের দুঃখ ঘিলাছড়া-গোমতিছড়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২
  • ১২০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি বাজার থেকে পাহাড়ি পথে গালামনি পাড়া থেকে ডান দিকে প্রকৃতি সৃষ্ট পাহাড়ি ছড়া ‘ঘিলাছড়া’ আর উত্তর দিকে গেলেই দেখা মিলবে ‘গোমতিছড়া’। সলিং, পিচঢালা সড়ক আর কাঁচা সড়ক পেরিয়ে গোমতিছড়ারও ওপারে গোকুলমনি পাড়া বিজিবি ক্যাম্প ছাড়াও ১০টি গ্রামে কয়েকশ’ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের বাস। অন্যদিকে ঘিলাছড়ার ওপারে ৬টি গ্রামের কয়েকশ’ পরিবারের বাস। স্বাধীনতার এতো বছর পরও ১৬ গ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ঘিলাছড়া-গোমতিছড়া’।

দীর্ঘ বছরের দাবির পরও এ দুই পাহাড়ি ছড়ার উপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সেতু না থাকায় দিন দিন বাড়ছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গোমতির ১৬ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ। শুধু যোগযোগ বিচ্ছিন্নই নয়, সেতু না থাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রয়েছে ১৬ পাহাড়ি গ্রাম। ফলে দুর্গম এ জনপদে গড়ে উঠেছে পাহাড়ের অনিবন্ধিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের অভয়ারণ্য। তাদের অব্যাহত চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সাধারণ এসব লোকজন।

সরেজমিনে দুর্গম এ জনপদ ঘুরে দেখা যায়, ঘিলাছড়ির পাহাড়ি ছড়ার দু’পাশে কাঁচা রাস্তা থাকলেও দীর্ঘ বছরেও ঘিলাছড়ার ওপর সেতু নির্মিত হয়নি। একইভাবে পাকা, অধাপাকা আর কাঁচা সড়ক থাকলেও স্বাধীনতার পরও গোমতিছড়ার ওপর নির্মিত হয়নি স্বপ্নের সেতু। ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় হেঁটে ছড়া পার হতে হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক এবং এলাকাল বাসিন্দাদের। আদা, হলুদ, কলাসহ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যদাম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

সেতুবঞ্চিত সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পাঁচ বছর পরপর সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে ভোট নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় জনপ্রতিনিধিরা।

ভাঙামুড়ার বাসিন্দা সুখী রঞ্জন ত্রিপুরার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখে গত কয়েক যুগ ধরে আমরা দীর্ঘ পথ হেঁটে ভোট দিলেও সেতুর স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি।

গোকুলমনি পাড়ার চারু মোহন ত্রিপুরা বলেন, সকালে সূর্য ওঠার আগে রওনা দিলেও হেঁটে গোমতি বাজারে পৌঁছাতে বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। আবার বর্ষা মৌসুমে ছড়ায় পানি বৃদ্ধির কারণে যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

 

গোমতি বি.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হুদা বলেন, বেয়াদতপাড়া, প্রার্থনা কারবারী পাড়া, নতুনপাড়া, কেশবমহাজনপাড়া, গোকুলমনিপাড়া, খাদাপাড়া, ভাঙামুড়া, কাপতলাপাড়াসহ ১৬টি পাহাড়ি গ্রামের কয়েকশ’ ছাত্র-ছাত্রী দীর্ঘ পাহাড়ি পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে ছড়ার পানি বেড়ে গেলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে না। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা চরমে ওঠে। গোমতিছড়া ও ঘিলাছড়ার উপর সেতু নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।

গোমতির বান্ধরছড়া মৌজার মৌজা প্রধান নিপুন কান্তি রোয়াজা বলেন, আমাদের কষ্ট আছে কিন্তু কষ্ট দেখার কেউ নেই। সেতু না থাকায় এখানে বসবাসকারীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জনদুর্ভোগ নিরসনে গোমতিছড়া ও ঘিলাছড়ার ওপর সেতু নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।

গোমতি ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিলন ত্রিপুরা বলেন, ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মিত না হওয়ায় দুর্গম জনপদের ১৬টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। বর্ষাকালে সে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। কেউ অসুস্থ হলেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান। সেতু না থাকায় অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে এখানকার অধিবাসীরা।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ১৬ গ্রামের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তফাজ্জল হোসেন বলেন, সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি এ জনপদে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে মানুষ। সেতুটি নির্মাণ করা হলে গোমতির সঙ্গে দুর্গম পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগ কমে আসবে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জননিরপত্তাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করে ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পাহাড়ের ১৬ গ্রামের মানুষের দুঃখ ঘিলাছড়া-গোমতিছড়া

আপডেট টাইম : ১১:০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি বাজার থেকে পাহাড়ি পথে গালামনি পাড়া থেকে ডান দিকে প্রকৃতি সৃষ্ট পাহাড়ি ছড়া ‘ঘিলাছড়া’ আর উত্তর দিকে গেলেই দেখা মিলবে ‘গোমতিছড়া’। সলিং, পিচঢালা সড়ক আর কাঁচা সড়ক পেরিয়ে গোমতিছড়ারও ওপারে গোকুলমনি পাড়া বিজিবি ক্যাম্প ছাড়াও ১০টি গ্রামে কয়েকশ’ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের বাস। অন্যদিকে ঘিলাছড়ার ওপারে ৬টি গ্রামের কয়েকশ’ পরিবারের বাস। স্বাধীনতার এতো বছর পরও ১৬ গ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ঘিলাছড়া-গোমতিছড়া’।

দীর্ঘ বছরের দাবির পরও এ দুই পাহাড়ি ছড়ার উপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সেতু না থাকায় দিন দিন বাড়ছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গোমতির ১৬ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ। শুধু যোগযোগ বিচ্ছিন্নই নয়, সেতু না থাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রয়েছে ১৬ পাহাড়ি গ্রাম। ফলে দুর্গম এ জনপদে গড়ে উঠেছে পাহাড়ের অনিবন্ধিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের অভয়ারণ্য। তাদের অব্যাহত চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সাধারণ এসব লোকজন।

সরেজমিনে দুর্গম এ জনপদ ঘুরে দেখা যায়, ঘিলাছড়ির পাহাড়ি ছড়ার দু’পাশে কাঁচা রাস্তা থাকলেও দীর্ঘ বছরেও ঘিলাছড়ার ওপর সেতু নির্মিত হয়নি। একইভাবে পাকা, অধাপাকা আর কাঁচা সড়ক থাকলেও স্বাধীনতার পরও গোমতিছড়ার ওপর নির্মিত হয়নি স্বপ্নের সেতু। ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় হেঁটে ছড়া পার হতে হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক এবং এলাকাল বাসিন্দাদের। আদা, হলুদ, কলাসহ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যদাম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

সেতুবঞ্চিত সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পাঁচ বছর পরপর সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে ভোট নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় জনপ্রতিনিধিরা।

ভাঙামুড়ার বাসিন্দা সুখী রঞ্জন ত্রিপুরার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখে গত কয়েক যুগ ধরে আমরা দীর্ঘ পথ হেঁটে ভোট দিলেও সেতুর স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি।

গোকুলমনি পাড়ার চারু মোহন ত্রিপুরা বলেন, সকালে সূর্য ওঠার আগে রওনা দিলেও হেঁটে গোমতি বাজারে পৌঁছাতে বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। আবার বর্ষা মৌসুমে ছড়ায় পানি বৃদ্ধির কারণে যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

 

গোমতি বি.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হুদা বলেন, বেয়াদতপাড়া, প্রার্থনা কারবারী পাড়া, নতুনপাড়া, কেশবমহাজনপাড়া, গোকুলমনিপাড়া, খাদাপাড়া, ভাঙামুড়া, কাপতলাপাড়াসহ ১৬টি পাহাড়ি গ্রামের কয়েকশ’ ছাত্র-ছাত্রী দীর্ঘ পাহাড়ি পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে ছড়ার পানি বেড়ে গেলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে না। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা চরমে ওঠে। গোমতিছড়া ও ঘিলাছড়ার উপর সেতু নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।

গোমতির বান্ধরছড়া মৌজার মৌজা প্রধান নিপুন কান্তি রোয়াজা বলেন, আমাদের কষ্ট আছে কিন্তু কষ্ট দেখার কেউ নেই। সেতু না থাকায় এখানে বসবাসকারীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জনদুর্ভোগ নিরসনে গোমতিছড়া ও ঘিলাছড়ার ওপর সেতু নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।

গোমতি ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিলন ত্রিপুরা বলেন, ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মিত না হওয়ায় দুর্গম জনপদের ১৬টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। বর্ষাকালে সে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। কেউ অসুস্থ হলেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যান। সেতু না থাকায় অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে এখানকার অধিবাসীরা।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ১৬ গ্রামের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তফাজ্জল হোসেন বলেন, সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি এ জনপদে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে মানুষ। সেতুটি নির্মাণ করা হলে গোমতির সঙ্গে দুর্গম পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগ কমে আসবে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জননিরপত্তাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করে ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।