হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে পড়ছে উপকূল। উপকূলীয় নদীগুলোর লবণাক্ততা ক্রমশ বেড়ে চলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় পানির উৎসগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ায় পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
বিশুদ্ধ পানির সংকট চরফ্যাশনের জেলেপল্লীগুলোতেও। নদী থেকে কলসভর্তি করে পানি নিয়ে পান করেই গভীর সমুদ্রে এক মাস কাটাতে হবে ট্রলারের মাঝি-মাল্লাদের। বিশুদ্ধ পানির কোনো ছোঁয়া পাচ্ছেন না তারা।
দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েও মিলছে না একটি গভীর নলকূপ। কোথাও কোথাও দেখা মিললেও তাতে পানি আসে না। বেশি ব্যবহার, অযত্ন আর পরিচর্যার অভাবে বিকল হয়ে পড়েছে জেলেপাড়ার গভীর নলকূপগুলো। ফলে নদীর লবণাক্ত পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
জেলেরা জানান, চাল-ডাল-তেল-মরিচসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্য নিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন থেকে তিন মাসের জন্য তারা নদী বা সাগরে মাছ ধরতে যান। কিন্তু তারা বিশুদ্ধ পানি নিতে পারেন না। জেলেরা যে উপকূল থেকে সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন সেখান থেকে গভীর নলকূপ অনেক দূরে। তাই দীর্ঘ এ সময় নদীর পানির ওপরই ভরসা রাখতে হয় তাদের।
এই নোংরা পানি পান করেই জীবনের প্রায় সবকটি দিন কাটিয়ে দিতে হচ্ছে জেলেদের। বিশুদ্ধ পানির কোনো ছোঁয়া পাচ্ছেন না তারা। অথচ পানির সমারোহেই ভরা উপকূল। আর এই পানির মধ্যেই যাদের জীবন-সংসার খোদ তারাই ভুগছেন বিশুদ্ধ পানির সংকটে। তবে পানিকে ফুটিয়ে কিংবা ফিটকিরি দিয়েই বিশুদ্ধ করে নেন তারা।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা চরাঞ্চলগুলোতে বিশ্বমানের কোনো বেড়িবাঁধ নেই। নদীতে জোয়ারের পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেই পুরো চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। এলাকায় সব পুকুর ও জলাশয়ে ঢুকে পড়ে লবণাক্ত পানি। অনেক সময় সেসব পানি পান করেই থাকতে হয় তাদের। ফলে পেটের পীড়া, এলার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলেরা।
চরফ্যাশনের ঢালচরে দেখা গেছে, এলাকায় অপেক্ষাকৃত ধনী ব্যক্তিদের বাড়িতে দুই-একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। নদীভাঙনের কারণে আগভাগেই তারা অন্যত্র চলে যাওয়ায় বাড়ির আঙিনায় থেকে যাওয়া নলকূপগুলোর কেউ পরিচর্যা করেন না। ফলে অল্প সময়েই অকেজো হয়ে পড়ে নলকূপগুলো। তা ছাড়া নদীর পাড় থেকে বিশুদ্ধ পানির এই কলগুলোর দূরত্ব অনেক। সে কারণে জেলেরা বিশাল পথ পাড়ি দিতে চান না।
ঢালচরের জেলে আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের পানির এ সমস্যা আজকের না। একসময় আমরা সাগর বা নদী থেকে ফিরলে খবর পেয়ে এলাকার দরিদ্র মানুষেরা মাছ কুড়াতে যেতেন। তখন যে আমাদের জন্য এক কলস পানি নিয়ে আসতেন তাকে আমরা এক কলস মাছ দিয়ে দিতাম। তখন পানির যে সংকট ছিল এখনো তা কমেনি। এ ছাড়া দক্ষিণ উপকূলের চরাঞ্চলগুলোতে এ সমস্যা প্রকট।
চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ ঘাটের মাঝি আয়রুল ইসলাম বলেন, আসলে বড় বড় নৌকাগুলো দুই-তিন মাসের জন্য নদীতে মাছ শিকারে যায়। এই দীর্ঘ সময় তারা সাগরে থাকে। গভীর নলকূপের পানি সংগ্রহ করে নিলেও সেগুলো শেষ পর্যন্ত বিশুদ্ধ থাকে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে লবণপানি দেখা দিয়েছে এবং পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ নদী ও পুকুরের দূষিত পানি ব্যবহার করায় ডায়রিয়া এবং কলেরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।