হাওর বার্তা ডেস্কঃ পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ল্যাম্পপোস্ট প্রজ্বলিত করা হয়েছে। শনিবার (৪ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেতুর ১২ নম্বর স্প্যানের ল্যাম্পপোস্টগুলো প্রজ্বলন করা হয়।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। এটিই প্রথমবারের মতো সেতুর ল্যাম্পপোস্ট প্রজ্বলন হলো।
নৌরুটে লঞ্চে যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানান, ‘পদ্মা সেতুতে আলো জ্বলতে দেখে খুবই ভালো লেগেছে। আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, এখন শুধু দিন গুনছি। পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো স্বপ্নের এই সেতুর ল্যাম্পপোস্টে আলো দেখে ভীষণ আনন্দিত আমরা। এ যেন স্বপ্ন জয়ের আলো!
শিমুলিয়া থেকে লঞ্চে করে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে নামা ভাঙ্গা উপজেলার যাত্রী মো. পলাশ গণমাধ্যমকে জানান, ‘পদ্মাসেতুর ল্যাম্পপোস্ট জ্বলে উঠেছে। লঞ্চে সম্ভবত এটাই শেষ পারাপার। আগামীতে আশা করছি সেতুর ওপর দিয়েই ঢাকা যেতে পারব। পদ্মা সেতুতে জ্বালানো হচ্ছে সড়কবাতি। সবগুলো বাতি জ্বললে পদ্মার বুকে রাতে মোহনীয় সৌন্দর্য তৈরি হবে। আর পদ্মা সেতু ছড়াবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আলো।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভায়াডাক্টে প্রথম ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি ও মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয় গত ১৮ এপ্রিল।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি সাড়ে ৯৪ শতাংশ। আর মূল সেতুর অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। মূল্য সেতুর বাকি থাকা একভাগ কাজের মধ্যে ক্যাবল লেইং, রোড মার্কিং, হ্যান্ড রেলিং, মুভমেন্ট জয়েন্ট প্যারাপেট, সাবস্টেশনের কাজ চলমান। এছাড়া গ্যাস পাইপলাইন ৯৯ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪০০ কেভিএ বিদ্যুৎ লাইনের ৯৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। ২৫ জুন উদ্বোধনের পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুর সড়কপথ।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেতুতে ১৩ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে নসিমন, করিমন, ভটভটি ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। এমনকি হেঁটেও মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন না।
এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে গাড়ি পারাপারে টোল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।
সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে। বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
এছাড়া ছোট ট্রাককে (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (আট টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।