হাওর বার্তা ডেস্কঃ হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ হলো বুকের প্রচণ্ড ব্যথা। এ ধরনের ব্যথা খুবই তীব্রতর হয়। অনেকেই বুকের এমন ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ভেবে ভুল করেন, যা হতে পারে বিপজ্জনক। ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে ভারতের সংগীতশিল্পী কেকের ক্ষেত্রে। তিনি নাকি বুকের ব্যথাকে অ্যাসিডিটি ভেবে নিয়মিত খেতেন অ্যান্টাসিড।
কেকের পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই অ্যাসিডিটির সমস্যার কথা বলতেন তিনি। নিয়মিত খেতেন অ্যাসিডিটির ওষুধও। তার মৃত্যুর পর চিকিৎসকরা জানান, শিল্পীর বাম করোনারি ধমনীর নাকি ৮০ শতাংশই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অন্যান্য ধমনীও নাকি কম-বেশি ব্লক ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদযন্ত্রের সমস্যাকে অ্যাসিডিটি বলে ভুল করা নতুন নয়। অনেক মানুষই এ সমস্যাকে অ্যাসিডিটি ভেবে দিনের পর দিন উপেক্ষা করেন। আর তাতেই দেরি হয়ে যায় চিকিৎসায়।
হার্টের ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করায় অনেকের হৃদরোগ দেরিতে শনাক্ত করা হয়। ফলে হার্টের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ডিভিশনের প্রধান ডা. হারিসুল হক বেশকিছু লক্ষণের কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘বুকে তীব্র ব্যথা হলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তা ছোটদের হোক বা বড়দের। হৃদরোগ যে কোনো বয়সেই হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হার্টের সমস্যায় বুকের ব্যথাকে অনেকেই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলে ভুল করেন, যা আরও বিপজ্জনক হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা খুবই তীব্র হয়। একনাগাড়ে ব্যথা হয়। যা সহজে কমে না। অনেক সময় ভয় পাওয়ায় রোগীর হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকে।’
যদি কোনো কাজের সময় ব্যথা হয় আবার বিশ্রাম নিলে কমে যায়, এমন অবস্থা বেশ সমস্যার। এ রকম অবস্থায় সাধারণত রক্তনালীতে অর্থাৎ করনারি আর্টারিগুলো সংকুচিত হয়ে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে বুকে ব্যথা বা বুকে চাপ বা ভারী রাখতে হবে। সেটা বাম পাশে বা ডান পাশে হোক বা মাঝখানে যে কোনো জায়গায় হতে পারে। এ অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তখন ধরে নেওয়া হয় ব্যথাটা হৃদরোগের কারণে হতে পারে।
কিছু উপসর্গ আছে, যা দেখলে বুঝতে হবে তা নিশ্চয়ই হার্টের কোনো সমস্যার কারণে হচ্ছে ও রোগী হার্ট অ্যাটাকের দিকে যাচ্ছে। যেমন-
হার্টের সমস্যার কারণে ব্যথা হলে তা বুকের একেবারে মাঝখানে চাপ ধরা ব্যথা বা বুকের মধ্যে কিছু চেপে আছে এমনটি মনে হবে।
হাঁটলে বা সিঁড়ি ভাঙলে বুকের এই চাপ ধরা ভাব বেড়ে যায়।
ব্যথা ধীরে ধীরে চোয়াল, ঘাড় বা পিঠের দিকে চলে যেতে পারে। একে বলে অ্যানজাইনাল পেইন।
শরীরে প্রচণ্ড ঘাম হয়।
কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
রাতে হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যাওয়া।
মুখের রং ফ্যাকাসে বা কালচে হয়ে যাওয়া।
হাত-পা ঠান্ডা অনুভব করা।
এ ধরনের ব্যথা ২০-২৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হতে পারে।
এ বিষয়ে ডা. হারিসুল হক পরামর্শ দেন, ‘ঘরে সব সময় অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখা উচিত। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হলে ৩০০ গ্রামের ৪টি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট একসঙ্গে পানিতে গুলে বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০-৫০ শতাংশ কমে যাবে।’
আর হার্ট অ্যাটাক হলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা দিলেই রোগী ভালো হয়ে যায়। এর আগে ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ট্রপটি-টিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদরোগের সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানা যাবে।