ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ষা এলেই ভাঙে ঝিনাই-বংশাই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৯:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২
  • ১৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই ও বংশাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বেপরোয়া ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ী ও ফসলি জমি। নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন দিশেহারা।

যমুনা নদীর শাখা নদী ঝিনাই নদীটি মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বংশাই নদীতে মিলেছে। প্রতিবছর ঝিনাই নদীতে বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে নদীঘেঁষা কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্ষার শুরুতেই ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, বানকাটা, সুতানড়ী, থলপাড়া ও চাকলেশ্বর এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এরমধ্যে বানকাটা, সুতানড়ী, ফতেপুর, চাকলেশ্বর, বৈলানপুর-পাতিলাপাড়া ও থলপাড়া এবং ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামটিতে ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফতেপুর, বানকাটা ও থলপাড়া এবং ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের অর্ধশত পরিবারের বসতবাড়ী ঝিনাই নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু বসতবাড়ী নয়, নদীঘেঁষা বিপুল পরিমাণ ফসলি জমিও চলে যাচ্ছে নদীর পেটে।

 

এছাড়া গত কয়েক বছরে ওই গ্রামগুলোর কমপক্ষে আরও ৭০টি বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ আবাদী জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, প্রতি বছর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর ওইসব এলাকা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, ইউপি সদস্য দিলীপ রাজবংশী, এলাকার আক্তার হোসেন, সাইজ উদ্দিন, কুদ্দুছ, নুরু, পলাশ, প্রিন্স, আওয়াল, সজল ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন।

এদিকে ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বংশাই ও ঝিনাই নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। পরিদর্শন শেষে বেশি ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত ডাম্পিং করার নির্দেশনা দেন উপমন্ত্রী। এরপর ভাঙন কবলিত এলাকার কয়েকটি স্থানে নামমাত্র বালির বস্তা ফেলা হলেও সব স্থানে ফেলা হয়নি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

বানকাটা গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে মিনহাজ মিয়া ও তার স্ত্রী হেনা বেগম বলেন, ‘দুইটি ঘরসহ পুরো বাড়িই নদীতে খাইছে। এক কোণায় মাথা গুইজা আছি। এটুকুও যাওয়ার পথে। জায়গার অভাবে লাখ টাকার ঘর ২০ হাজার টাকায় বেইচা দিছি। সরকার যেন আমাগো বাঁচায়।’

বাড়িহারা আয়নাল মিয়া বলেন, ঘরবাড়ি সব শেষ। এখন অন্যের বাড়িতে থাকি। ওই বাড়িটিরও বেশি অংশ নদীতে চলে গেছে। রাতে ভয়ে ঘুমাতে হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় কখন যেন নদীতে চলে যায়। সরকারের কাছে একটু জমি দাবি করেন আয়নাল।

একইভাবে নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বানকাটার শতাধিক পরিবার। এছাড়া আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেকের।

এদিকে ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের কয়েকটি বাড়ি বংশাই নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের কবল থেকে ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে অনেকেই নদীর কিনারায় কলাগাছ ফেলে ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ভাঙন ঠেকানের চেষ্টা করছেন।

আশরাফুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, মাদরাসাটি হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া থলপাড়া গ্রাম থেকে বানকাটা নদীর পাড় পর্যন্ত রাস্তার প্রায় ৩শ মিটার সড়ক নদীগর্ভে চলে গেছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

থলপাড়া গ্রামের রাজন তালুকদার জানান, ইউপি সদস্য দিলীপ রাজবংশী প্রতি বছর ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন। এতে তার ৭১ শতাংশ জমির ওপর থাকা বাড়ি নদীতে চলে গেছে।

হাটফতেপুর গ্রামের ছানোয়ার হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ও ইউপি সদস্য দিলীপ রাজবংশী প্রতিবছর ঝিনাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেন। এজন্য নদীর দুই পাশেই ভাঙন শুরু হয়েছে। তাদের তিন ভাইয়ের ৫১ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ির অধিকাংশই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

তবে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ফতেপুর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য দিলীপ রাজবংশী বলেন, নদীতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের বাড়ি বানানোর জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় ড্রেজার চালানো হয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত ড্রেজার চালান না বলে দাবি করেন তিনি।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারি জমিতে বাড়ি বানানোর আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, নদীরভাঙন রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই এলাকায় কাজ শুরু করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্ষা এলেই ভাঙে ঝিনাই-বংশাই

আপডেট টাইম : ১০:৪৯:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই ও বংশাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বেপরোয়া ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ী ও ফসলি জমি। নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন দিশেহারা।

যমুনা নদীর শাখা নদী ঝিনাই নদীটি মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বংশাই নদীতে মিলেছে। প্রতিবছর ঝিনাই নদীতে বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে নদীঘেঁষা কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্ষার শুরুতেই ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, বানকাটা, সুতানড়ী, থলপাড়া ও চাকলেশ্বর এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এরমধ্যে বানকাটা, সুতানড়ী, ফতেপুর, চাকলেশ্বর, বৈলানপুর-পাতিলাপাড়া ও থলপাড়া এবং ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামটিতে ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফতেপুর, বানকাটা ও থলপাড়া এবং ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের অর্ধশত পরিবারের বসতবাড়ী ঝিনাই নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু বসতবাড়ী নয়, নদীঘেঁষা বিপুল পরিমাণ ফসলি জমিও চলে যাচ্ছে নদীর পেটে।

 

এছাড়া গত কয়েক বছরে ওই গ্রামগুলোর কমপক্ষে আরও ৭০টি বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ আবাদী জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, প্রতি বছর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর ওইসব এলাকা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, ইউপি সদস্য দিলীপ রাজবংশী, এলাকার আক্তার হোসেন, সাইজ উদ্দিন, কুদ্দুছ, নুরু, পলাশ, প্রিন্স, আওয়াল, সজল ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন।

এদিকে ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বংশাই ও ঝিনাই নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। পরিদর্শন শেষে বেশি ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত ডাম্পিং করার নির্দেশনা দেন উপমন্ত্রী। এরপর ভাঙন কবলিত এলাকার কয়েকটি স্থানে নামমাত্র বালির বস্তা ফেলা হলেও সব স্থানে ফেলা হয়নি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

বানকাটা গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে মিনহাজ মিয়া ও তার স্ত্রী হেনা বেগম বলেন, ‘দুইটি ঘরসহ পুরো বাড়িই নদীতে খাইছে। এক কোণায় মাথা গুইজা আছি। এটুকুও যাওয়ার পথে। জায়গার অভাবে লাখ টাকার ঘর ২০ হাজার টাকায় বেইচা দিছি। সরকার যেন আমাগো বাঁচায়।’

বাড়িহারা আয়নাল মিয়া বলেন, ঘরবাড়ি সব শেষ। এখন অন্যের বাড়িতে থাকি। ওই বাড়িটিরও বেশি অংশ নদীতে চলে গেছে। রাতে ভয়ে ঘুমাতে হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় কখন যেন নদীতে চলে যায়। সরকারের কাছে একটু জমি দাবি করেন আয়নাল।

একইভাবে নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বানকাটার শতাধিক পরিবার। এছাড়া আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেকের।

এদিকে ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের কয়েকটি বাড়ি বংশাই নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের কবল থেকে ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে অনেকেই নদীর কিনারায় কলাগাছ ফেলে ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ভাঙন ঠেকানের চেষ্টা করছেন।

আশরাফুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, মাদরাসাটি হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া থলপাড়া গ্রাম থেকে বানকাটা নদীর পাড় পর্যন্ত রাস্তার প্রায় ৩শ মিটার সড়ক নদীগর্ভে চলে গেছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

থলপাড়া গ্রামের রাজন তালুকদার জানান, ইউপি সদস্য দিলীপ রাজবংশী প্রতি বছর ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন। এতে তার ৭১ শতাংশ জমির ওপর থাকা বাড়ি নদীতে চলে গেছে।

হাটফতেপুর গ্রামের ছানোয়ার হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ও ইউপি সদস্য দিলীপ রাজবংশী প্রতিবছর ঝিনাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেন। এজন্য নদীর দুই পাশেই ভাঙন শুরু হয়েছে। তাদের তিন ভাইয়ের ৫১ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ির অধিকাংশই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

তবে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ফতেপুর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য দিলীপ রাজবংশী বলেন, নদীতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের বাড়ি বানানোর জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় ড্রেজার চালানো হয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত ড্রেজার চালান না বলে দাবি করেন তিনি।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারি জমিতে বাড়ি বানানোর আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, নদীরভাঙন রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই এলাকায় কাজ শুরু করেছে।