ঢাকা ০৭:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রাজিলের জাবুটিকাবা চাষ হচ্ছে বান্দরবানে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২
  • ১৩১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাজিলের সুস্বাদু ফল জাবুটিকাবা এখন চাষ হচ্ছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের মাটিতে। পাহাড়ের আবহাওয়া আর জলবায়ু এ ফল চাষের উপযোগী হওয়ার কারণে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।

 কৃষি বিভাগ বলছে, পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় এ ফলের আবাদ বাড়লে একদিন কৃষি অর্থনীতিতে আবদান রাখতে সক্ষম হবে এ জাবুটিকাবা।

দেখতে অনেকটা কালো আঙ্গুরের মতো। কেউ কেউ আবার দূর থেকে জাম বলেও ভুল করে থাকেন। ফলটির নাম জাবুটিকাবা। ওষুধি গুণসম্পন্ন ব্রাজিলের ফলটি এখন উৎপাদন হচ্ছে বান্দরবানে।

অপরিপক্ক জাবুটিকাবা ফলের রং থাকে সবুজ আর পরিপক্ক হয়ে গেলে কালো রং ধারণ করে। খাওয়ার যোগ্য হতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টার উদ্যানে চাষ হচ্ছে এ ফল। গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরোটাই ফলে ভরপুর হয়। বিচিত্র এ ফলের রুপ দেখে বিমোহিত হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মচারীরা।

 

বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা অধীন চন্দ্র দে  বলেন, বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে চারটি জাবুটিকাবা গাছ রয়েছে। চারটির মধ্যে প্রচুর ফল হয় আর এক বছরে তিনবার ফল পাওয়া যায় গাছগুলো থেকে। জাবুটিকাবা গাছের ফলন দেখে বান্দরবানের চাষিরা এ ফলের চারা সংগ্রহ করেছেন এবং ধীরে ধীরে এ চারা লাগাতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে রয়েছে চারটি জাবুটিকাবা ফলের গাছ, আর গাছ লাগানোর পর দীর্ঘ আট বছর পর এবার প্রথম সংগ্রহ করা হয়েছে কয়েক কেজি ফল। এদিকে নতুন এ ফলের সংবাদে অনেকেই এ গাছ আর ফল এক নজর দেখতে ভিড় করছেন হর্টিকালচার সেন্টারে।

 

বান্দরবান পৌরসভার বালাঘাটা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. জিয়াউদ্দীন বেড়াতে এসেছেন বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে, আর তিনি  বলেন, জাবুটিকাবা গাছে আমি এবারই প্রথম দেখলাম। গাছের যার সবখানেই ফল ধরেছে। এমন সুমিষ্ট আর নয়নাভিরাম ফল দেখে যে কারোর মন ভরে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমি কয়েকটি চারা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি এবং আশা করছি, আগামীতে আমার বাগানে এ চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন হর্টিকালচার সেন্টারগুলোর ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন উন্নত জাতের ফলের চাষ সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ব্রাজিল থেকে এ জাতটি আনা হয়। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টারে বীজ থেকে চারার মাধ্যমে আরও তিনটি মাতৃগাছের মাধ্যমে প্রাপ্ত বীজ থেকে চারা করে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা শুরু করে, ফলে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় উদ্যোগী বাগানীদের কাছে চারা যাচ্ছে সহজেই। পার্বত্য জেলার মাটি ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় এ বিদেশি ফল চাষ করে কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

 

হর্টিকালচার সেন্টার বান্দরবানের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী  বলেন, জাবুটিকাবা ব্রাজিলিয়ান আঙ্গুর গাছ হিসেবেও পরিচিত। এটা ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের একটি স্থানীয় উদ্ভিদ হিসেবে প্রসিদ্ধ। এটা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণ মণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। এ গাছ কিছুটা খরা সহিষ্ণু। জাবুটিকাবার ফুল সাদা রঙের অনেকটা তুলার মতো ফুটে এবং অতি দ্রুতই প্রথমে সবুজ পরে কাঙ্ক্ষিত রং ধারণ করে। ফলগুলো কালো আঙ্গুরের মত সমস্ত গাছের শাখা প্রশাখাকে আবৃত করে ফেলে, ফলে দারুণ একটা নান্দনিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। পরিপক্ক ফলের ভেতরে চারটি বীজ থাকে। প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আকার ও বীজের সংখ্যা থাকতে পারে। এ ফল সুমিষ্ট। পাকা ফল স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকায় এ ফল মূলত: জুস, জ্যাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তিনি  আরও বলেন, যেখানে উপত্তিস্থল সেখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরে কয়েকবার পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। সুমিষ্ট এ ফলে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, লৌহ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড রয়েছে এতে। চিরসবুজ সাধারণ উঁচু এ গাছ থেকে বীজ ও কলম দ্বারা বংশ বিস্তার সম্পন্ন হয়। বীজ থেকে চারার ক্ষেত্রে ফল ধারণ ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে, যদিও পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার কারণে ফল ধারণে সময়ের তারতম্য হতে পারে। কলমের চারায় পাঁচ বছর পর থেকে ফলধারণ শুরু হয়ে যায়।

স্বল্প পরিসরে হলেও এর বিস্তার লাভ করেছে, এ ফলটি জনপ্রিয় করতে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও চারা বিতরণ করা হচ্ছে। ভোক্তার চাহিদা ও জনপ্রিয়করণে ফলন্ত মৌসুমে গাছ প্রদর্শনের মাধ্যমেও উদ্বুদ্ধকরণ অব্যাহত রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির অভাব থাকে আর এ গাছটি কিছুটা খরা সহনশীল, বিধায় এ অঞ্চলে এর প্রসার ঘটানো সম্ভব। এ গাছের সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বাগান করা গেলে পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ব্রাজিলের জাবুটিকাবা চাষ হচ্ছে বান্দরবানে

আপডেট টাইম : ১২:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাজিলের সুস্বাদু ফল জাবুটিকাবা এখন চাষ হচ্ছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের মাটিতে। পাহাড়ের আবহাওয়া আর জলবায়ু এ ফল চাষের উপযোগী হওয়ার কারণে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।

 কৃষি বিভাগ বলছে, পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় এ ফলের আবাদ বাড়লে একদিন কৃষি অর্থনীতিতে আবদান রাখতে সক্ষম হবে এ জাবুটিকাবা।

দেখতে অনেকটা কালো আঙ্গুরের মতো। কেউ কেউ আবার দূর থেকে জাম বলেও ভুল করে থাকেন। ফলটির নাম জাবুটিকাবা। ওষুধি গুণসম্পন্ন ব্রাজিলের ফলটি এখন উৎপাদন হচ্ছে বান্দরবানে।

অপরিপক্ক জাবুটিকাবা ফলের রং থাকে সবুজ আর পরিপক্ক হয়ে গেলে কালো রং ধারণ করে। খাওয়ার যোগ্য হতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টার উদ্যানে চাষ হচ্ছে এ ফল। গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরোটাই ফলে ভরপুর হয়। বিচিত্র এ ফলের রুপ দেখে বিমোহিত হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মচারীরা।

 

বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা অধীন চন্দ্র দে  বলেন, বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে চারটি জাবুটিকাবা গাছ রয়েছে। চারটির মধ্যে প্রচুর ফল হয় আর এক বছরে তিনবার ফল পাওয়া যায় গাছগুলো থেকে। জাবুটিকাবা গাছের ফলন দেখে বান্দরবানের চাষিরা এ ফলের চারা সংগ্রহ করেছেন এবং ধীরে ধীরে এ চারা লাগাতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে রয়েছে চারটি জাবুটিকাবা ফলের গাছ, আর গাছ লাগানোর পর দীর্ঘ আট বছর পর এবার প্রথম সংগ্রহ করা হয়েছে কয়েক কেজি ফল। এদিকে নতুন এ ফলের সংবাদে অনেকেই এ গাছ আর ফল এক নজর দেখতে ভিড় করছেন হর্টিকালচার সেন্টারে।

 

বান্দরবান পৌরসভার বালাঘাটা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. জিয়াউদ্দীন বেড়াতে এসেছেন বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে, আর তিনি  বলেন, জাবুটিকাবা গাছে আমি এবারই প্রথম দেখলাম। গাছের যার সবখানেই ফল ধরেছে। এমন সুমিষ্ট আর নয়নাভিরাম ফল দেখে যে কারোর মন ভরে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমি কয়েকটি চারা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি এবং আশা করছি, আগামীতে আমার বাগানে এ চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন হর্টিকালচার সেন্টারগুলোর ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন উন্নত জাতের ফলের চাষ সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ব্রাজিল থেকে এ জাতটি আনা হয়। বান্দরবানের হর্টিকালচার সেন্টারে বীজ থেকে চারার মাধ্যমে আরও তিনটি মাতৃগাছের মাধ্যমে প্রাপ্ত বীজ থেকে চারা করে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা শুরু করে, ফলে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় উদ্যোগী বাগানীদের কাছে চারা যাচ্ছে সহজেই। পার্বত্য জেলার মাটি ও আবহাওয়া ভালো হওয়ায় এ বিদেশি ফল চাষ করে কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

 

হর্টিকালচার সেন্টার বান্দরবানের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী  বলেন, জাবুটিকাবা ব্রাজিলিয়ান আঙ্গুর গাছ হিসেবেও পরিচিত। এটা ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের একটি স্থানীয় উদ্ভিদ হিসেবে প্রসিদ্ধ। এটা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণ মণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। এ গাছ কিছুটা খরা সহিষ্ণু। জাবুটিকাবার ফুল সাদা রঙের অনেকটা তুলার মতো ফুটে এবং অতি দ্রুতই প্রথমে সবুজ পরে কাঙ্ক্ষিত রং ধারণ করে। ফলগুলো কালো আঙ্গুরের মত সমস্ত গাছের শাখা প্রশাখাকে আবৃত করে ফেলে, ফলে দারুণ একটা নান্দনিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। পরিপক্ক ফলের ভেতরে চারটি বীজ থাকে। প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আকার ও বীজের সংখ্যা থাকতে পারে। এ ফল সুমিষ্ট। পাকা ফল স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকায় এ ফল মূলত: জুস, জ্যাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তিনি  আরও বলেন, যেখানে উপত্তিস্থল সেখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরে কয়েকবার পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। সুমিষ্ট এ ফলে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, লৌহ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড রয়েছে এতে। চিরসবুজ সাধারণ উঁচু এ গাছ থেকে বীজ ও কলম দ্বারা বংশ বিস্তার সম্পন্ন হয়। বীজ থেকে চারার ক্ষেত্রে ফল ধারণ ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে, যদিও পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার কারণে ফল ধারণে সময়ের তারতম্য হতে পারে। কলমের চারায় পাঁচ বছর পর থেকে ফলধারণ শুরু হয়ে যায়।

স্বল্প পরিসরে হলেও এর বিস্তার লাভ করেছে, এ ফলটি জনপ্রিয় করতে হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও চারা বিতরণ করা হচ্ছে। ভোক্তার চাহিদা ও জনপ্রিয়করণে ফলন্ত মৌসুমে গাছ প্রদর্শনের মাধ্যমেও উদ্বুদ্ধকরণ অব্যাহত রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির অভাব থাকে আর এ গাছটি কিছুটা খরা সহনশীল, বিধায় এ অঞ্চলে এর প্রসার ঘটানো সম্ভব। এ গাছের সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বাগান করা গেলে পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।