ঢাকা ০৭:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫ বছরে রাজশাহীতে কলার উৎপাদন বেড়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৫:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২
  • ১২৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাস্তা ও রেলওয়ের পার্শ্ববর্তী পতিত জমি ব্যবহার, পুকুরপাড়ে কলার আবাদ, নতুন জাতের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল কলার চাষ ও মানুষের খাদ্য তালিকায় কলার অন্তর্ভুক্তিতে রাজশাহী অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে কলার আবাদ ও উৎপাদন।

রাজশাহী কৃষি দপ্তরের সূত্র মতে, পাঁচ বছর আগে (২০১৬-১৭) যেখানে এক হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হতো, সেখানে বর্তমানে চাষ হচ্ছে দুই হাজার ৪১০ হেক্টর। আবার পাঁচ বছরের ব্যবধানে কলার উৎপাদনও বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আবাদ ও উৎপাদন সংক্রান্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ২০১৬-১৭ সালে এক হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ করে উৎপাদন হয় ৫৮ হাজার ২১৯ মেট্রিক টন। এ সময় হেক্টর প্রতি গড় ফলন ছিল ৩০ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন। পরের বছর (২০১৭-১৮) ৬৫ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৬১ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয় ৩১ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয় এক হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন হয় ৬৩ হাজার ৪৯১ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৩১ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন।

 

তবে ২০১৯-২০ সালে কমে আসে কলার আবাদ ও উৎপাদন। এ বছর রাজশাহী জেলায় এক হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় ৬২ হাজার ৪২৫ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন আসে ৩১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন। পরের বছর (২০২০-২১) উৎপাদন বাড়ে। এ বছর এক হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৬৪ হাজার ৬২ মেট্রিক টন কলা। হেক্টর প্রতি গড় ফলন আসে ৩২ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন।

এদিকে চলতি বছরে (২০২১-২২) আকস্মিকভাবে বাড়ে কলার আবাদ ও উৎপাদন। এক বছরের ব্যবধানে রাজশাহী জেলায় ৪৩৭ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পায়। আবাদী জমির উপর ভিত্তি করে এক বছরের ব্যবধানে সম্ভাব্য মোট উৎপাদন ধরা হয় ৭৮ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন, যা গেলো বছরের চেয়ে ১৪ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এ বছর সম্ভাব্য গড় ফলন ধরা হয়েছে ৩২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন কলা।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ তথ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও বাড়তে পারে কলার উৎপাদন।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহীর ৯ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলার আবাদ হয় পুঠিয়া উপজেলায়। চলতি বছর এ উপজেলায় মোট এক হাজার দুই হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলাতেই বসে রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহৎ, সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কলার হাট।

কলার আবাদ ও উৎপাদনে পুঠিয়ার পর দূর্গাপুরের অবস্থান। এখানে চলতি বছরে ৫২০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এছাড়া বাগমারা, পবা, চারঘাট ও বাঘায় দেড় থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। তবে জেলার তানোর, মোহনপুর, গোদাগাড়ী ও চারঘাটে কলার আবাদ নেই বললেই চলে বলে জানিয়েছে কৃষি দপ্তর।

 

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক তৌফিকুর রহমান বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কলা। সম্প্রতি কলা খুব লাভজনক একটি কৃষি ব্যবসায় পরিণত হওয়ায় বিভিন্ন রাস্তা ও রেল লাইনের পরিত্যক্ত জায়গায় কলার চাষ হচ্ছে। আবার রাজশাহীতে প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে পুকুর খনন। এসব পুকুর খননের পর পাড়ে লাগানো হচ্ছে কলার গাছ। এ কারণে রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে কলার আবাদ হচ্ছে। আর আবাদ বাড়ায় উৎপাদনও বেড়েছে গত পাঁচ বছরের তুলনায়।

আকস্মিকভাবে কলার আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ফল গবেষণা ইন্সিটিটিউট কর্তৃক টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উদ্ভাবিত কলার জাত হচ্ছে জি-৯। এটি উচ্চ ফলনশীল। সাধারণ কলার চেয়ে এটি প্রায় দ্বিগুণ ফলন দেয়। এতে কৃষকরাও লাভবান হওয়ায় কলার আবাদ বাড়িয়েছেন।

অপরদিকে গোদাগাড়ী এলাকায় কয়েকজন উদ্যোক্তা প্রায় দুই থেকে আড়াইশ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলার আবাদ করছেন। এটিও আকস্মিকভাবে কলার আবাদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৫ বছরে রাজশাহীতে কলার উৎপাদন বেড়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন

আপডেট টাইম : ১১:২৫:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাস্তা ও রেলওয়ের পার্শ্ববর্তী পতিত জমি ব্যবহার, পুকুরপাড়ে কলার আবাদ, নতুন জাতের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল কলার চাষ ও মানুষের খাদ্য তালিকায় কলার অন্তর্ভুক্তিতে রাজশাহী অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে কলার আবাদ ও উৎপাদন।

রাজশাহী কৃষি দপ্তরের সূত্র মতে, পাঁচ বছর আগে (২০১৬-১৭) যেখানে এক হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হতো, সেখানে বর্তমানে চাষ হচ্ছে দুই হাজার ৪১০ হেক্টর। আবার পাঁচ বছরের ব্যবধানে কলার উৎপাদনও বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আবাদ ও উৎপাদন সংক্রান্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ২০১৬-১৭ সালে এক হাজার ৯০২ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ করে উৎপাদন হয় ৫৮ হাজার ২১৯ মেট্রিক টন। এ সময় হেক্টর প্রতি গড় ফলন ছিল ৩০ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন। পরের বছর (২০১৭-১৮) ৬৫ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৬১ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয় ৩১ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয় এক হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন হয় ৬৩ হাজার ৪৯১ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৩১ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন।

 

তবে ২০১৯-২০ সালে কমে আসে কলার আবাদ ও উৎপাদন। এ বছর রাজশাহী জেলায় এক হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় ৬২ হাজার ৪২৫ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন আসে ৩১ দশমিক ৮ মেট্রিক টন। পরের বছর (২০২০-২১) উৎপাদন বাড়ে। এ বছর এক হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৬৪ হাজার ৬২ মেট্রিক টন কলা। হেক্টর প্রতি গড় ফলন আসে ৩২ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন।

এদিকে চলতি বছরে (২০২১-২২) আকস্মিকভাবে বাড়ে কলার আবাদ ও উৎপাদন। এক বছরের ব্যবধানে রাজশাহী জেলায় ৪৩৭ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পায়। আবাদী জমির উপর ভিত্তি করে এক বছরের ব্যবধানে সম্ভাব্য মোট উৎপাদন ধরা হয় ৭৮ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন, যা গেলো বছরের চেয়ে ১৪ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এ বছর সম্ভাব্য গড় ফলন ধরা হয়েছে ৩২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন কলা।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ তথ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও বাড়তে পারে কলার উৎপাদন।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহীর ৯ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলার আবাদ হয় পুঠিয়া উপজেলায়। চলতি বছর এ উপজেলায় মোট এক হাজার দুই হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলাতেই বসে রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহৎ, সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কলার হাট।

কলার আবাদ ও উৎপাদনে পুঠিয়ার পর দূর্গাপুরের অবস্থান। এখানে চলতি বছরে ৫২০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এছাড়া বাগমারা, পবা, চারঘাট ও বাঘায় দেড় থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। তবে জেলার তানোর, মোহনপুর, গোদাগাড়ী ও চারঘাটে কলার আবাদ নেই বললেই চলে বলে জানিয়েছে কৃষি দপ্তর।

 

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক তৌফিকুর রহমান বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কলা। সম্প্রতি কলা খুব লাভজনক একটি কৃষি ব্যবসায় পরিণত হওয়ায় বিভিন্ন রাস্তা ও রেল লাইনের পরিত্যক্ত জায়গায় কলার চাষ হচ্ছে। আবার রাজশাহীতে প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে পুকুর খনন। এসব পুকুর খননের পর পাড়ে লাগানো হচ্ছে কলার গাছ। এ কারণে রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে কলার আবাদ হচ্ছে। আর আবাদ বাড়ায় উৎপাদনও বেড়েছে গত পাঁচ বছরের তুলনায়।

আকস্মিকভাবে কলার আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ফল গবেষণা ইন্সিটিটিউট কর্তৃক টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উদ্ভাবিত কলার জাত হচ্ছে জি-৯। এটি উচ্চ ফলনশীল। সাধারণ কলার চেয়ে এটি প্রায় দ্বিগুণ ফলন দেয়। এতে কৃষকরাও লাভবান হওয়ায় কলার আবাদ বাড়িয়েছেন।

অপরদিকে গোদাগাড়ী এলাকায় কয়েকজন উদ্যোক্তা প্রায় দুই থেকে আড়াইশ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলার আবাদ করছেন। এটিও আকস্মিকভাবে কলার আবাদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে।