ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২
  • ১৫২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষি মন্ত্রণালয় দেশে অপ্রচলিত ও উচ্চমূল্যের ফসল চাষে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এ রকমই সম্ভাবনাময়, রপ্তানিযোগ্য অপ্রচলিত এবং উচ্চমূল্যের একটি ফসল যার নাম কাজুবাদাম।বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব জানলে কৃষকরা চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।

কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সে সঙ্গে ওষুধি গুণাগুণ থাকায় বিশ্ববাজারে কাজুবাদামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন চাহিদা বেড়েই চলেছে। কাজুবাদাম একটি গ্রীষ্মম-লীয় ফসল, যার চাষাবাদ এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো পুষ্টিকর এই কৃষিপণ্যটির জন্য মূলত এই দুই মহাদেশের উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

বৃক্ষজাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজুবাদামের স্থান তৃতীয়। আর বাদামজাতীয় ফসলের মধ্যে কাজুবাদাম প্রথম স্থানে। আমাদের দেশে এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা প্যাকেটকৃত বাদামের মূল্য প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সাধারণ কৃষকরা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টনপ্রতি প্রায় ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। তবে এর বাজার বেশ পরিবর্তনশীল।

বর্তমানে কাজুবাদামের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য রয়েছে প্রায় ১৪.৯ বিলিয়ন ডলার যেখানে, ভিয়েতনাম এককভাবে ৪ বিলিয়ন ডলারের কাজুবাদাম রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ ২০১৯-২০ সালে ভিয়েতনামে ও ভারতে কাঁচা কাজুবাদাম যেখানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৩ দশমিক ৫৭ লাখ ডলারের, সেখানে প্রস্তুত বাদাম আমদানিই করেছে ভিয়েতমান থেকে ৮৫৭ টন। আমদানি-রপ্তানির এই পরিসংখ্যান থেকে কাজুবাদামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করাটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।

২০২০ সালের উৎপাদন হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে কাজুবাদামের ফলন প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৩২৩ টন (সূত্র : একটি জাতীয় দৈনিক, ১৫ আগস্ট ২০২০)। ২০২০ সালে বিশ্বের শীর্ষ প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম এবং শীর্ষ আমদানিকারক দেশ আমেরিকা। আফ্রিকার দেশগুলো বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন কাঁচা কাজুবাদাম উৎপাদন করে কিন্তু প্রক্রিয়াজাতের তেমন আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত কাঁচা কাজুবাদামের ৯০ শতাংশই রপ্তানি করে।

বাংলাদেশেও কাজুবাদামের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৪-১৫ সালে দেশে মাত্র ১৮,০০০ কেজি প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম আমদানি হয়, যা ২০১৮-২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮০ হাজার টনে। ২০১৯-২০ সালে কাজুবাদাম আমদানি হয় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন অথচ বাংলাদেশ কাজুবাদাম উৎপাদনের এক সম্ভাবনাময় উর্বর ভূমি।

বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির মোট আয়তন ১৩,৩৪,৪০০ হেক্টর যার মাত্র ৫ শতাংশ সমতল ফসলি জমি এবং বাকিটা পাহাড়ি এলাকা। কাজুবাদাম চাষের জন্য যে রকম মাটি, তাপমাত্রা ও বৃষ্টি দরকার তার সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই পাহাড়ি এলাকায়। তিন পাবর্ত্য জেলার কমপক্ষে ২২ শতাংশ জমিতে এখনি কাজুবাদাম চাষের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মাটিও কাজুবাদাম চাষের অনুকূলে।

অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে ভিয়েতনামের সফলতার গল্প শুনতে হবে না বরং বাংলাদেশ আগামীদিনে ভিয়েতনামের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ বছরে দেশে কাঁচা কাজুবাদামের উৎপাদন ছিল ৯৬২ মেট্রিক টন, যা ২০১৯-২০ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৩২৩ মেট্রিক টনে। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় অপ্রচলিত ফসলের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাত সহজতর করা এবং প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির ওপর শুল্কহার ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যে কয়েকটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট স্থাপিত হয়েছে এবং বর্তমানে দেশীয় কাজুবাদামের যে উৎপাদন তা এই কারখানাগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। নীলফামারী জেলায় জ্যাকপট কাজুবাদাম ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি প্রক্রিয়াজাত ফ্যাক্টরি গড়ে উঠে।

২০১৯ সালে গ্রিন গ্রেইন গ্রুপ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় আধুনিক মানের একটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলে। বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) কাজুবাদাম প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ১৫ একর জমি লিজের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বান্দরবন ও রাজশাহীতেও একটি করে প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে উঠেছে।

দেশে কাজুবাদামের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এটিকে কৃষির বাণিজ্যিক পণ্য হিসাবে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রচলিত কাজুবাদামের উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য দেশের বিশেষ করে ভিয়েতনাম এবং ভারতের প্রচলিত জাতের তুলনায় অত্যন্ত কম। আমাদের দেশে যে জাত পার্বত্য এলাকায় চাষ হয় তার শেল কাজুবাদামের আকার ছোট (৩-৪ গ্রাম) এবং প্রতি গাছে শেল কাজু পাওয়া যায় ৪-৫ কেজি।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে জাতটি বেশি ফলন দেয় তার নাম জারগ্রাম-২। এ জাতটি গাছপ্রতি ১২-১৪ কেজি শেল কাজু ফলন দেয় এবং প্রতি শেল কাজুর গড় ওজন ৮-১০ গ্রাম। ভিয়েতনামে ৫টি উচ্চফলনশীল কাজুবাদাম চাষ করা হয় যার মধ্যে ৪টির ফলন অন্যান্য যে কোন দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ভিয়েতনামের এই ৪টি জাতের নাম ঝববফ ঊঝ০৪, ঝববফকচ১২, ঝববফকচ১১ এবং ঝববফইউ০১ যাদের গাছপ্রতি শেল কাজু পাওয়া যায় ৪৫-৬৫ কেজি। ভিয়েতনামের এই জাতগুলো দেশে প্রবর্তন করার ব্যবস্থা করা হলে কাজুবাদামের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।

পার্বত্য তিন জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, শেরপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা সেইসঙ্গে নরসিংদী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জের লালমাটি এলাকায় যে পতিত জমি রয়েছে- তা কাজুবাদাম চাষের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা প্রয়োজন।

কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ : শরীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজুবাদামের কোনো বিকল্প হয় না। এতে উপস্থিত প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন নানাভাবে শরীরের উপকার হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, কাজুবাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকরা একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যদি কাজুবাদাম খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে নানা পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে অনেক উপকার পাওয়া যায়। খাদ্য মানের দিক দিয়ে কাজুবাদাম অতি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর।

এ বাদামে শতকরা ২১ ভাগ আমিষ, ৪৭ ভাগ স্নেহ, ২২ ভাগ শর্করা, ২.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ ০.৪৫ ভাগ ফসফরাস, ০.৫৫ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে ৫ মিলিগ্রাম লৌহ, ৭৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ১১০ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লোবিন রয়েছে। প্রচুর শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী অনেক ফাইটোক্যামিক্যাল্স রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্যের জন্য কাজুবাদাম বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে।

কাজুবাদামে থাকা ফসফরাস, ভিটামিন-ই ও বি, ফলিক এসিড হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাজুবাদামে ওলিসিক এসিড নামে একধরনের মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড আছে, যা খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল ও ট্রাইগিসারাইডকে কমিয়ে দেয়। হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ হার্ট অ্যাটাক রোগ থেকে রক্ষা করে।

কাজুবাদামের ক্যালসিয়াম, কপার, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। ফসফরাস দাঁতের বৃদ্ধি ঘটায়। দাঁতকে শক্ত করে ও সুন্দর করে। হাড় এবং দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। বয়স্ক লোকের অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগ প্রতিরোধে কাজুবাদাম বেশ কার্যকর। কপার ও ক্যালসিয়াম অস্টিওপরোসিস রোগ কমায়।

কাজুবাদামে থাকা প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে কম সোডিয়াম এবং বেশি পরিমাণে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কাজুবাদাম ইউরিক অ্যাসিড তৈরি বন্ধ করার ফলে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

কাজুবাদামের ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্রেনের শক্তি বৃদ্ধি পেলে বুদ্ধি, স্মৃতি শক্তি এবং মনোযোগ বাড়ে। কাজুবাদামের উপকারী ফ্যাটি এসিড ব্রেনের শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এটি শরীরের শর্করা এবং চর্বি বিপাকে সহায়তা করে। কাজুবাদামের ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের মাত্রা এবং কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়।

কাজুবাদামের প্রোটিন, কপার, জিংক এবং সেলিনিয়াম চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্ত করে। কাজুবাদামের ভিটামিন-সি, কপার, কোলাজেন, ইলাসটিন, জিংক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং সেলেনিয়াম ত্বকের রঙ বাড়ায় এবং ত্বক ফাটা রোধ করে।

মানবদেহের ওজনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন দৈনিক ৪ থেকে ৫টি কাজুবাদাম খাওয়া উত্তম। কাজুবাদাম খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে চোখ বেশ সবল থাকে এবং ক্ষতিকর বিকরিত রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার ক্ষমতা অর্জন করে।

কাজুবাদামের জিংক ও এন্টিঅক্সিডেন্ট ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। কাজু বাদামে প্রচুর ভিটামিন থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া গঠিত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এভাবে মানব শরীর সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।

আগামীর কৃষিতে কাজুবাদামই হতে পারে বাণিজ্যিক কৃষির দ্বার উন্মোচনের সূত্রপাত। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় যেমন- কৃষককে নিয়ে ভাবছেন তেমনিভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বাণিজ্যিকায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

উদ্যান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলা, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য গুণগতমান সম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য চাহিদা পূরণ, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে কৃষি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের ফলে কাক্সিক্ষত কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত হবে, মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ বাড়বে তথা দেশের সামগ্রিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব লিখেছেন কৃষিবিদ রেজওয়ানুল ইসলাম মুকুল পরিচালক (অবঃ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১১১৯৬১১০; ইমেইল: robibaubd@gmail.com

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

আপডেট টাইম : ০৭:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষি মন্ত্রণালয় দেশে অপ্রচলিত ও উচ্চমূল্যের ফসল চাষে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এ রকমই সম্ভাবনাময়, রপ্তানিযোগ্য অপ্রচলিত এবং উচ্চমূল্যের একটি ফসল যার নাম কাজুবাদাম।বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব জানলে কৃষকরা চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।

কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সে সঙ্গে ওষুধি গুণাগুণ থাকায় বিশ্ববাজারে কাজুবাদামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন চাহিদা বেড়েই চলেছে। কাজুবাদাম একটি গ্রীষ্মম-লীয় ফসল, যার চাষাবাদ এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো পুষ্টিকর এই কৃষিপণ্যটির জন্য মূলত এই দুই মহাদেশের উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

বৃক্ষজাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজুবাদামের স্থান তৃতীয়। আর বাদামজাতীয় ফসলের মধ্যে কাজুবাদাম প্রথম স্থানে। আমাদের দেশে এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা প্যাকেটকৃত বাদামের মূল্য প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সাধারণ কৃষকরা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টনপ্রতি প্রায় ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। তবে এর বাজার বেশ পরিবর্তনশীল।

বর্তমানে কাজুবাদামের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য রয়েছে প্রায় ১৪.৯ বিলিয়ন ডলার যেখানে, ভিয়েতনাম এককভাবে ৪ বিলিয়ন ডলারের কাজুবাদাম রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ ২০১৯-২০ সালে ভিয়েতনামে ও ভারতে কাঁচা কাজুবাদাম যেখানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৩ দশমিক ৫৭ লাখ ডলারের, সেখানে প্রস্তুত বাদাম আমদানিই করেছে ভিয়েতমান থেকে ৮৫৭ টন। আমদানি-রপ্তানির এই পরিসংখ্যান থেকে কাজুবাদামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করাটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।

২০২০ সালের উৎপাদন হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে কাজুবাদামের ফলন প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৩২৩ টন (সূত্র : একটি জাতীয় দৈনিক, ১৫ আগস্ট ২০২০)। ২০২০ সালে বিশ্বের শীর্ষ প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম এবং শীর্ষ আমদানিকারক দেশ আমেরিকা। আফ্রিকার দেশগুলো বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন কাঁচা কাজুবাদাম উৎপাদন করে কিন্তু প্রক্রিয়াজাতের তেমন আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত কাঁচা কাজুবাদামের ৯০ শতাংশই রপ্তানি করে।

বাংলাদেশেও কাজুবাদামের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৪-১৫ সালে দেশে মাত্র ১৮,০০০ কেজি প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম আমদানি হয়, যা ২০১৮-২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮০ হাজার টনে। ২০১৯-২০ সালে কাজুবাদাম আমদানি হয় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন অথচ বাংলাদেশ কাজুবাদাম উৎপাদনের এক সম্ভাবনাময় উর্বর ভূমি।

বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবন, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির মোট আয়তন ১৩,৩৪,৪০০ হেক্টর যার মাত্র ৫ শতাংশ সমতল ফসলি জমি এবং বাকিটা পাহাড়ি এলাকা। কাজুবাদাম চাষের জন্য যে রকম মাটি, তাপমাত্রা ও বৃষ্টি দরকার তার সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই পাহাড়ি এলাকায়। তিন পাবর্ত্য জেলার কমপক্ষে ২২ শতাংশ জমিতে এখনি কাজুবাদাম চাষের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মাটিও কাজুবাদাম চাষের অনুকূলে।

অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে ভিয়েতনামের সফলতার গল্প শুনতে হবে না বরং বাংলাদেশ আগামীদিনে ভিয়েতনামের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ বছরে দেশে কাঁচা কাজুবাদামের উৎপাদন ছিল ৯৬২ মেট্রিক টন, যা ২০১৯-২০ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৩২৩ মেট্রিক টনে। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় অপ্রচলিত ফসলের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাত সহজতর করা এবং প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির ওপর শুল্কহার ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যে কয়েকটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট স্থাপিত হয়েছে এবং বর্তমানে দেশীয় কাজুবাদামের যে উৎপাদন তা এই কারখানাগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। নীলফামারী জেলায় জ্যাকপট কাজুবাদাম ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি প্রক্রিয়াজাত ফ্যাক্টরি গড়ে উঠে।

২০১৯ সালে গ্রিন গ্রেইন গ্রুপ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় আধুনিক মানের একটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলে। বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) কাজুবাদাম প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ১৫ একর জমি লিজের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বান্দরবন ও রাজশাহীতেও একটি করে প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে উঠেছে।

দেশে কাজুবাদামের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এটিকে কৃষির বাণিজ্যিক পণ্য হিসাবে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রচলিত কাজুবাদামের উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য দেশের বিশেষ করে ভিয়েতনাম এবং ভারতের প্রচলিত জাতের তুলনায় অত্যন্ত কম। আমাদের দেশে যে জাত পার্বত্য এলাকায় চাষ হয় তার শেল কাজুবাদামের আকার ছোট (৩-৪ গ্রাম) এবং প্রতি গাছে শেল কাজু পাওয়া যায় ৪-৫ কেজি।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে জাতটি বেশি ফলন দেয় তার নাম জারগ্রাম-২। এ জাতটি গাছপ্রতি ১২-১৪ কেজি শেল কাজু ফলন দেয় এবং প্রতি শেল কাজুর গড় ওজন ৮-১০ গ্রাম। ভিয়েতনামে ৫টি উচ্চফলনশীল কাজুবাদাম চাষ করা হয় যার মধ্যে ৪টির ফলন অন্যান্য যে কোন দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ভিয়েতনামের এই ৪টি জাতের নাম ঝববফ ঊঝ০৪, ঝববফকচ১২, ঝববফকচ১১ এবং ঝববফইউ০১ যাদের গাছপ্রতি শেল কাজু পাওয়া যায় ৪৫-৬৫ কেজি। ভিয়েতনামের এই জাতগুলো দেশে প্রবর্তন করার ব্যবস্থা করা হলে কাজুবাদামের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।

পার্বত্য তিন জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, শেরপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা সেইসঙ্গে নরসিংদী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জের লালমাটি এলাকায় যে পতিত জমি রয়েছে- তা কাজুবাদাম চাষের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা প্রয়োজন।

কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ : শরীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজুবাদামের কোনো বিকল্প হয় না। এতে উপস্থিত প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন নানাভাবে শরীরের উপকার হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, কাজুবাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকরা একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যদি কাজুবাদাম খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে নানা পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে অনেক উপকার পাওয়া যায়। খাদ্য মানের দিক দিয়ে কাজুবাদাম অতি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর।

এ বাদামে শতকরা ২১ ভাগ আমিষ, ৪৭ ভাগ স্নেহ, ২২ ভাগ শর্করা, ২.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ ০.৪৫ ভাগ ফসফরাস, ০.৫৫ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে ৫ মিলিগ্রাম লৌহ, ৭৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ১১০ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লোবিন রয়েছে। প্রচুর শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী অনেক ফাইটোক্যামিক্যাল্স রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্যের জন্য কাজুবাদাম বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে।

কাজুবাদামে থাকা ফসফরাস, ভিটামিন-ই ও বি, ফলিক এসিড হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাজুবাদামে ওলিসিক এসিড নামে একধরনের মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড আছে, যা খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল ও ট্রাইগিসারাইডকে কমিয়ে দেয়। হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ হার্ট অ্যাটাক রোগ থেকে রক্ষা করে।

কাজুবাদামের ক্যালসিয়াম, কপার, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। ফসফরাস দাঁতের বৃদ্ধি ঘটায়। দাঁতকে শক্ত করে ও সুন্দর করে। হাড় এবং দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। বয়স্ক লোকের অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগ প্রতিরোধে কাজুবাদাম বেশ কার্যকর। কপার ও ক্যালসিয়াম অস্টিওপরোসিস রোগ কমায়।

কাজুবাদামে থাকা প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে কম সোডিয়াম এবং বেশি পরিমাণে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কাজুবাদাম ইউরিক অ্যাসিড তৈরি বন্ধ করার ফলে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

কাজুবাদামের ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্রেনের শক্তি বৃদ্ধি পেলে বুদ্ধি, স্মৃতি শক্তি এবং মনোযোগ বাড়ে। কাজুবাদামের উপকারী ফ্যাটি এসিড ব্রেনের শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এটি শরীরের শর্করা এবং চর্বি বিপাকে সহায়তা করে। কাজুবাদামের ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের মাত্রা এবং কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়।

কাজুবাদামের প্রোটিন, কপার, জিংক এবং সেলিনিয়াম চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্ত করে। কাজুবাদামের ভিটামিন-সি, কপার, কোলাজেন, ইলাসটিন, জিংক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং সেলেনিয়াম ত্বকের রঙ বাড়ায় এবং ত্বক ফাটা রোধ করে।

মানবদেহের ওজনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন দৈনিক ৪ থেকে ৫টি কাজুবাদাম খাওয়া উত্তম। কাজুবাদাম খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে চোখ বেশ সবল থাকে এবং ক্ষতিকর বিকরিত রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার ক্ষমতা অর্জন করে।

কাজুবাদামের জিংক ও এন্টিঅক্সিডেন্ট ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। কাজু বাদামে প্রচুর ভিটামিন থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া গঠিত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এভাবে মানব শরীর সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।

আগামীর কৃষিতে কাজুবাদামই হতে পারে বাণিজ্যিক কৃষির দ্বার উন্মোচনের সূত্রপাত। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় যেমন- কৃষককে নিয়ে ভাবছেন তেমনিভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বাণিজ্যিকায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

উদ্যান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলা, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য গুণগতমান সম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য চাহিদা পূরণ, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে কৃষি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের ফলে কাক্সিক্ষত কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত হবে, মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ বাড়বে তথা দেশের সামগ্রিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশে কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব লিখেছেন কৃষিবিদ রেজওয়ানুল ইসলাম মুকুল পরিচালক (অবঃ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১১১৯৬১১০; ইমেইল: robibaubd@gmail.com